বর্তমানে শিশুরা এমন এক বিশ্বে বেড়ে উঠছে, যেখানে সব কিছুই চাহিদা এবং কেনাকাটার উপর তৈরি করা হয়েছে। আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটাই হল আসল খেলা। ক্রমাগত গ্রহণ এবং অর্জন করে চলা। কিছুই বর্জন করার নেই যেন। এটা বিপজ্জনক। টাকাপয়সা সম্পর্কে শিশুদের মধ্যে সঠিক জ্ঞান তৈরি করে দেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। কীভাবে অর্থ সঞ্চয় করতে হয়, কীভাবেই বা বিনিয়োগ করতে হয় এবং সবচেয়ে বড় কথা, টাকা কীভাবে খরচ করতে হয়, মূলত এগুলোই শিখতে হয়। শুধু তা-ই নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে শিখতে হয় ঋণের ফাঁদ এড়িয়ে চলার কৌশলও। সন্তানকে টাকা কীভাবে জমাতে হয়, তা শেখানোর ৫টি টিপস নিয়ে আলোচনা করা হল।
advertisement
ছোট বদল, বড় পাঠ:
পকেট মানি। সন্তানকে অল্প বয়সেই আর্থিক পাঠ পড়ানোর একটা দুর্দান্ত উপায়। পকেট মানি কীভাবে খরচ করতে হয়, সেটা শেখাতে হবে সন্তানকে। টাকা পেলাম আর খরচ করে ফেললাম, এমনটা কিন্তু একেবারেই হওয়া উচিত নয়। অর্থের মূল্য বোঝাতে হবে। যেমন - সন্তানকে সরাসরি কোনও খেলনা কিনে দেওয়ার বদলে তাদের পকেট মানি জমিয়ে সেটা কেনার কথা বলতে হবে। এতে সন্তান টাকার সদ্ব্যবহার করতে শিখবে। এর সঙ্গে সন্তানকে ছোট থেকেই দায়িত্ব দিতে হবে। যেমন নিজের বিছানা নিজে তৈরি করা, বাড়ির পোষ্যকে খাওয়ানো ইত্যাদি। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন দায়িত্বো দিতে হবে। এতে তারা যেমন পরবর্তী কালে দায়িত্ব নিতে শিখবে, তেমনই পরিবারের জন্য সত্যিকারের অবদান রাখতে পারবে।
আরও পড়ুন: মন্ত্রীর সামনেই যুবককে সপাটে চড়! দিদির সুরক্ষা কবচে ফের বিতর্ক, এবার দত্তপুকুরে
আরও পড়ুন: ভারত জোড়ো যাত্রায় হাঁটার সময়ই হৃদরোগে আক্রান্ত! প্রয়াত পঞ্জাবের কংগ্রেস সাংসদ
ব্যাঙ্কিং সম্পর্কে ওয়াকিবহাল:
সন্তান পকেট মানি পাচ্ছে। তা খরচও করছে। কিন্তু পকেট মানির শেষ বিন্দু পর্যন্ত যেন খরচ করে না-ফেলে। সেটা শেখাতে হবে। এর জন্য সন্তানের নামে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। এতে তাদের ‘কষ্টার্জিত’ টাকা নাগালের বাইরে থাকবে বটে, কিন্তু দূর থেকেই সঞ্চয় বৃদ্ধি দেখতে পাবে। একই সঙ্গে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের আনন্দ সম্পর্কেও তারা য়াকিবহাল হবে। আরও একটা জিনিস বাড়িতেই করা যায়। সেটা হল সঞ্চয়, খরচ এবং দান – এই তিনটি লেবেল দেওয়া তিনটি জার বা বয়াম দিতে হবে সন্তানকে। সে সেখানে তার পকেটমানি ভাগ করে রাখবে। এর ফলে নিজের চোখে সঞ্চয় বৃদ্ধি দেখতে পাবে। এটা একটা অভ্যাসের মতো হয়ে যাবে। আর এক বার সঞ্চয়ের আনন্দ পেলে সেই বিষয়ে সন্তানের আগ্রহও বাড়বে।
চাকরি অমূল্য:
সন্তান একটু বড় হলে তার জন্য বাড়ির বাইরে অর্থ উপার্জনের জায়গা খোঁজা গুরুত্বপূর্ণ। সোজা কথায় ছোট খাটো চাকরি। যেখানে সে শ্রমের বিনিময়ে অর্থ পাবে। আর যদি সন্তানের মধ্যে অন্ত্রেপ্রেনর হওয়ার মতো লক্ষণ থাকে, তাহলে তাকে নিজের ‘বস’ হওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। ছোট থেকে শুরু করলে তারা একটা সময় শিখবে যে, কাজ করতে হবে। আর অর্থ উপার্জনের এটাই একমাত্র চাবিকাঠি।
বিল ভাগ:
বাড়ির বাইরে থাকলে বোঝা যায়, জিনিসপত্রের কত দাম! বাড়ি ভাড়ার টাকা থেকে শুরু করে মুদি খানা, ইলেকট্রিক বিল এমনকী খাবার জলের খরচ পর্যন্ত, সব কিছুই পয়সা দিয়ে কিনতে হয়। সন্তানকে দৈনন্দিন খরচের খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা করে তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকটা শেখাতে হবে।
পুরস্কারের দিকে চোখ:
সন্তানকে বাস্তবসম্মত দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের গুরুত্ব বোঝাতে হবে। লক্ষ্য যেন সে দিকেই থাকে। বোঝাতে হবে সেভাবেই। শেখাতে হবে, সামান্য ইচ্ছেশক্তিই অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আজকের ছোট ত্যাগ কাল বড় পুরস্কার এনে দিতে পারে। সন্তান যেন বুঝতে পারে, টাকা গাছে জন্মায় না যে, চাইলেই পেড়ে নেওয়া যাবে। অনেক রক্ত ঘাম ঝরিয়ে উপার্জন করতে হয়। সন্তানের যখন নিজস্ব ক্রেডিট কার্ডের আবেদনের উপযুক্ত বয়স হবে, তত দিনে যেন তার স্মার্ট আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো শক্তিশালী ভিত তৈরি হয়ে যায়।
পরবর্তী প্রজন্মকে নিরাপদ এবং শক্তিশালী ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়াটাই অভিভাবকের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন এক বার বলেছিলেন, ‘খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করার চেয়ে প্রতিরোধ করা সহজ’। তাই তাড়াতাড়ি শুরু করতে হবে। সন্তানকে বোঝাতে হবে, জীবন পরিবর্তনের মাধ্যমে উন্নত হয়, দৈবক্রমে নয়।