এটি কেবল করের হার পরিবর্তনের বিষয় নয়, এটি দেশের প্রতিটি করদাতাকে আজ পর্যন্ত যে ‘জালে’ আটকে রাখা হয়েছিল, তার অবসান ঘটানোর একটি প্রচেষ্টা। এই নতুন বিলটিতে কী পরিবর্তন এসেছে এবং এটি সকলের পকেটে কীভাবে প্রভাব ফেলবে? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ৮+৪ পয়েন্টের সমস্ত খুঁটিনাটি।
আরও পড়ুন: কমতে শুরু করল সোনার দাম ? ১ গ্রামের দাম কত হল ?
advertisement
দেখে নেওয়া যাক কমিটি কী পরিবর্তন করেছে –
সংসদের ৩১ সদস্যের সিলেক্ট কমিটি ৪৫৮৪ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদনে মোট ৫৬৬টি পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে এগুলি হল ৮টি সবচেয়ে বড় পরিবর্তন।
১. দেরিতে আইটিআর দাখিলকারীদের জন্য বড় সুখবর
এটি সবচেয়ে বড় স্বস্তি। কমিটি সেই নিয়মটি সরিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছে, যেখানে নির্ধারিত তারিখের পরে আইটিআর দাখিল করলে কোনও ফেরত দেওয়া হত না। এখন দেরিতে আইটিআর দাখিল করার পরেও টাকা ফেরত পাওয়া যাবে।
২. ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য স্বস্তি
এমএসএমই আইন অনুসারে ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোগের সংজ্ঞা পরিবর্তন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যাতে নিয়মগুলিতে কোনও বিভ্রান্তি না থাকে।
৩. প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) সম্পর্কিত টিডিএস নিয়ম স্পষ্ট হবে
পিএফ থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে টিডিএসের নিয়ম সম্পর্কে বিভ্রান্তি দূর করার জন্য, নিয়মগুলি আরও স্পষ্ট করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৪. সংজ্ঞাগুলি কঠোর এবং স্পষ্ট হবে
বিলে অনেক শব্দ এবং নিয়মের সংজ্ঞা আগে স্পষ্ট ছিল না। কমিটি সেগুলিকে আরও স্পষ্ট এবং কঠোর করার সুপারিশ করেছে যাতে কেউ সেগুলির সুবিধা নিতে না পারে।
৫. করদাতাদের জন্য আরও স্বস্তি
কমিটি কিছু কর স্ল্যাব বা ছাড়ের সীমা সহজ করার পরামর্শ দিয়েছে, বিশেষ করে ছোট করদাতা এবং মধ্যবিত্তদের জন্য।
৬. পুরনো আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ
নতুন বিলটিকে জিএসটি বা কর্পোরেট ট্যাক্সের মতো অন্যান্য আইনের সঙ্গে আরও ভালভাবে সংহত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যাতে কোনও বিভ্রান্তি না থাকে।
৭. ৮০ মিলিয়ন ডিডাকশন (কর্পোরেটদের জন্য) পরিবর্তন
এটি কোম্পানিগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত একটি নিয়ম, যেখানে আন্তঃ-কর্পোরেট লভ্যাংশের উপর ছাড়ের বিষয়েও পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৮. বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে সংযোগ
কমিটি নিশ্চিত করতে বলেছে যে নতুন আইনটি বিদ্যমান কর কাঠামোর সঙ্গে সহজেই সংহত করা যায়।
বিলের ভিতরে ৪টি বড় বিষয় যা জানা উচিত
১. এখন ‘কর বছর’, ‘মূল্যায়ন বছর’ নয়
নিয়মগুলি সহজ করার জন্য, ‘কর বছর’ শব্দটি বিভ্রান্তিকর শব্দটি সরিয়ে ‘কর বছর’ করা হয়েছে। বিলের আকারও ৮২৩ পৃষ্ঠা থেকে কমিয়ে ৬২২ পৃষ্ঠা করা হয়েছে, যদিও বিভাগগুলি বৃদ্ধি পেয়েছে।
২. ক্রিপ্টোর দিকেও নজর সরকারের
এখন ক্রিপ্টো সম্পদকেও নগদ, সোনা এবং গয়নার মতো ‘অপ্রকাশিত আয়ের’ আওতায় গণনা করা হবে। এটি ডিজিটাল লেনদেনে স্বচ্ছতা আনবে।
৩. এখন করদাতারা অধিকার পাবেন (করদাতাদের সনদ)
প্রথমবারের মতো, ‘করদাতাদের সনদ’ বিলটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি অধিকার রক্ষা করবে এবং কর কর্মকর্তাদের হয়ে জবাবদিহি করবে। এটি কার অধিকার কী এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব কী তা জানাবে।
৪. বেতনভোগীদের জন্য সবকিছু এক জায়গায়
স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন, গ্র্যাচুইটি এবং ছুটির নগদীকরণের মতো বেতন-সম্পর্কিত সমস্ত ডিডাকশন এখন এক জায়গায় তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে নিয়মগুলি বোঝা আগের চেয়ে আরও সহজ হবে।
পকেটে এর প্রভাব কী হবে? (বড় বাজেট ঘোষণা)
এই বিলটি ১ ফেব্রুয়ারির বাজেটে করা ঘোষণাগুলিকে বৈধতা দিয়েছে।
১২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত
নতুন কর ব্যবস্থার অধীনে যদি কারও করযোগ্য আয় ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়, তাহলে কোনও কর দিতে হবে না।
বেতনভোগী ব্যক্তিরা ১২.৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাবে
৭৫,০০০ টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের মাধ্যমে বেতনভোগী ব্যক্তিদের জন্য এই ছাড় ১২.৭৫ লাখ টাকা হয়ে যাবে।
সাধারণ করদাতার জন্য সরাসরি সুবিধা
নতুন আয়কর বিল ২০২৫ কেবল হার পরিবর্তনের নাম নয়, বরং ভারতের কর ব্যবস্থায় একটি বিরাট পরিবর্তন। সিলেক্ট কমিটির পরামর্শের পরে এটি আরও জনবান্ধব হয়ে ফিরে এসেছে। এর সরাসরি সুবিধা সাধারণ করদাতার পক্ষেই হবে, যাঁদের জন্য এখন কর মেনে চলা সহজ হবে, তাঁদের অধিকার সুরক্ষিত হবে এবং তাঁদের পকেটে আরও অর্থ সাশ্রয় হবে।
বিলটি কেন প্রত্যাহার করে পুনঃপ্রবর্তন করা হল –
কারণ সংসদের একটি বিশেষ কমিটি সাধারণ জনগণ এবং বিশেষজ্ঞদের স্বার্থে এতে ৫৬৬টি পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছিল।
সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা কী –
দেরিতে আইটিআর দাখিল করার পরেও ফেরত পাওয়া এবং ‘করদাতাদের সনদ’-এর অধীনে অধিকার পাওয়া সবচেয়ে বড় সুবিধা।
এই বিল কি পুরনো কর ব্যবস্থার অবসান ঘটাবে
না, বিলের প্রস্তাব অনুসারে পুরনো ব্যবস্থার বিকল্প থাকবে।
‘করদাতাদের সনদ’ কী
এটি একটি সরকারি নথি যা করদাতাদের অধিকার এবং কর কর্মকর্তাদের দায়িত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে।
এই নতুন আইন কখন কার্যকর হবে
সংসদে পাস হওয়ার পর এটি ১ এপ্রিল, ২০২৬ থেকে কার্যকর হওয়ার আশা করা হচ্ছে।