সোমবার টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসের ত্রৈমাসিক ফলাফল প্রকাশের পর কোম্পানির চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার মিলিন্দ লক্কর এই ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে কোম্পানি তার ৭০ শতাংশ কর্মচারীকে ভ্যারিয়েবল পে-র ১০০ শতাংশ পরিশোধ করে দেবে। বাকি ৩০ শতাংশ কর্মীদের কর্মক্ষমতার উপর ভিত্তি করে দেওয়া হবে। টিসিএস দাবি করেছে যে, সময়মতো সমস্ত কর্মীদেরই ভ্যারিয়েবল ওয়েজেস দেওয়া হয়েছে। অগাস্টে এক বিবৃতিতে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে যে, ভ্যারিয়েবল ওয়েজেস সাধারণত প্রথম বা দ্বিতীয় মাসে দেওয়া হয়।
advertisement
আরও পড়ুন: স্কচ সিলভারে পুরস্কৃত উৎসশ্রী পোর্টাল, খুশির হাওয়া স্কুল শিক্ষা দফতরে
উইপ্রো এবং ইনফোসিস কাটছাঁট করেছে:
টিসিএস-এর প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি উইপ্রো এবং ইনফোসিস প্রথম ত্রৈমাসিকে তাদের কর্মীদের পরিবর্তনশীল বেতন কমিয়েছে। উইপ্রোতে, সিনিয়র কর্মচারীদের পারফরমেন্স পে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে জুনিয়র কর্মচারীদের অর্থের মাত্র ৭০ শতাংশ দেওয়া হয়। একই ভাবে, ইনফোসিস-ও তার কর্মচারীদের ভ্যারিয়েবল কমিয়েছে এবং সর্বাধিক ৭০ শতাংশ অর্থ প্রদান করেছে।
টিসিএস-এ ব্যাপক নিয়োগ:
চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার ফ্রেশার নিয়োগ করেছিল টিসিএস। ২০২২ সালের প্রথমার্ধে মোট ফ্রেশারের সংখ্যা ৩৫ হাজারে পৌঁছে যায়। এর আগে টিসিএস ৪০ হাজার ফ্রেশার নিয়োগের ঘোষণা করেছিল। আইটি জায়ান্ট কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা আরও ১০ থেকে ১২ হাজার কর্মী নিয়োগ করবে। এইচআর বিভাগের হেড লক্কর বলেন, তৃতীয় ত্রৈমাসিকের পরেই কোম্পানি নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করবে।
আরও পড়ুন: রাজ্য বিজেপির কোর কমিটি নিয়ে বিরাট ঘোষণা! তালিকায় মিঠুন, নাম নেই রূপার
নিয়োগ আগের তুলনায় কমেছে:
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিয়োগের হার এখন অনেকটাই কম। নিয়োগ প্রক্রিয়াও ধীর করে দিয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি। কয়েক মাস আগে পর্যন্ত, টিসিএস-এর অ্যাট্রিশন রেট ছিল ২১.৫ শতাংশ, যা সাধারণত ১৯.৭ শতাংশ থাকে। বর্তমানে, আইটি সেক্টরে কর্মচারী নিয়োগ ধীর গতিতে চললেও টিসিএস আরও নতুন কর্মীদের নিয়োগ করতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে লক্কর বলেন যে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে কোম্পানির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।
এর সঙ্গে মুনলাইটিংয়ের সমস্যা নিয়েও নিজেদের বিরক্তি চেপে রাখেনি এই আইটি জায়ান্ট। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে যে, প্রায় ৬ লক্ষ ১৬ হাজার ১৭১ কর্মীর এক তৃতীয়াংশই সপ্তাহে দুদিন অফিসে আসছেন। তবে মুনলাইটিংকে একটি নৈতিক সমস্যা হিসেবেই আমরা দেখছি। এটা টিসিএসের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। প্রসঙ্গত, মুনলাইটিং-এর অর্থ হল একটি কোম্পানিতে চাকরি করার পরেও অন্য কোম্পানির হয়ে কাজ করা। লকডাউনে ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুরু হয়। মূলত সেই সময় থেকেই বেশি অর্থের লোভে এই ধরনের কাজ শুরু করেন বিভিন্ন কোম্পানির কর্মীরা। সাধারণত দুটো আলাদা ক্ষেত্রের কোম্পানিতে কাজ করলে অতটা অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অভিযোগ, অনেক সংস্থার কর্মীর টাকার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিতে কাজ করতেও ছাড়ছেন না। ফলে এটা একটা গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্য দিকে আবার চলতি বছরের অগাস্টেই পারফরমেন্স পে পেতে দেরি হবে বলে কর্মীদের মেল করে জানিয়েছিলেন টিসিএস কর্তৃপক্ষ। তার পর অক্টোবরে এই ঘোষণা করা হল। প্রসঙ্গত, সেই সময় টাটা গ্রুপের আইটি জায়ান্ট সি৩এ, সি৩বি সি৪ এবং সমতুল্য গ্রেডগুলির জন্য পরিবর্তনশীল বেতন এক মাস দেরিতে হয়। অ্যাসিস্ট্যান্ট কন্সালট্যান্ট, অ্যাসোসিয়েট কন্সালট্যান্ট এবং কনসালট্যান্ট লেভেলের কর্মীরা দেরিতে পারফরমেন্স পে-র টাকা পান। এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেছিলেন যে, জুন ত্রৈমাসিক শেষ হওয়ার পরে বেতন-ভাতাতে ত্রৈমাসিক পারফরমেন্স বোনাস দেওয়া হয়। এই বারও কোম্পানি সেই টাকা দিতে ‘দেরি’ করেছে। তবে কেন এই দেরি, তার কারণ অবশ্য জানা নেই বলেই জানিয়েছেন তিনি।
অবশ্য একই সময়ে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস বলেছিল যে, কোম্পানির সমস্ত ক্ষতিপূরণ এবং বোনাস তাদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিকই দেওয়া হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে কিছু ‘প্রশাসনিক সমস্যা’-র কথা উল্লেখ করেছিল কোম্পানি। কর্মচারীদের জানানো হয়েছিল যে, তাঁদের বোনাস পরবর্তী বেতনের সঙ্গে অল্প শতাংশের ভিত্তিতে প্রদান করা হবে। এর সঙ্গে সংস্থাটি আরও বলেছে যে, একে অন্যান্য আইটি সংস্থাগুলির দ্বারা নেওয়া অন্য কোনও পদক্ষেপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা উচিত নয়।