কিন্তু লকারে মূল্যবান সামগ্রী রেখেও কি একেবারে চিন্তা মুক্ত থাকা যায়? সহজ ভাবে বলতে গেলে লকারে গয়না রাখা কি আদৌ নিরাপদ? আবার ধরা যাক, ব্যাঙ্কের লকার থেকেই হারিয়ে গেল সাধের মূল্যবান জিনিস। সে-ক্ষেত্রে কী করণীয়? এই সবই দেখে নেওয়া যাক এই প্রতিবেদনে।
আরও পড়ুন: ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের আঁচ পড়তে পারে পরিষেবায়! পারলে আজই জরুরি কাজ মিটিয়ে নিন!
advertisement
ব্যাঙ্কের লকারে সোনা রাখা কতটা নিরাপদ?
আসলে ব্যাঙ্ক যেহেতু গ্রাহকদের মূল্যবান জিনিস নিরাপদে রাখার বিষয়টাকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকে, তাই গ্রাহকরাও এখানে নিজেদের মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে বেশ নিশ্চিন্তই বোধ করেন। দেখে নেওয়া যাক, ব্যাঙ্ক লকারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু বিষয়।
পরিকাঠামো:
ব্যাঙ্কের দফতরের ভিতরেই অত্যন্ত নিরাপদ জায়গায় এবং আঁটোসাঁটো সুরক্ষার ঘেরাটোপেই এই ধরনের ভল্ট তৈরি করে থাকে। আর এর জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও নিত্যনতুন উদ্ভাবনী পরিকাঠামোর সাহায্য নিয়ে থাকেন। কোনও গ্রাহক যদি ব্যাঙ্ক লকারে যেতে চান, তা-হলে ব্যাঙ্কের কোনও কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে তবেই তিনি সেখানে যেতে পারবেন।
আরও পড়ুন: শুরু হয়ে গিয়েছে বিয়ের মরশুম, দেখে নিন ১০ গ্রাম সোনার লেটেস্ট দাম
লকার ব্যবহার করার নিয়ম:
ব্যাঙ্কের লকার ব্যবহার করার জন্য প্রতিটি গ্রাহকের কাছে তাঁদের নির্দিষ্ট লকারের চাবি থাকে। অতিরিক্ত সুরক্ষিত করার জন্য ব্যাঙ্ক লকারগুলি সাধারণত শক্তপোক্ত স্টিলের দরজার ঘেরাটোপে থাকে। আর ওই মজবুত স্টিলের দরজার চাবি কাছে না-থাকলে গ্রাহকরা সংশ্লিষ্ট লকার ব্যবহার করতে পারবেন না। এক জন ব্যাঙ্কের কর্মচারীই গ্রাহককে ব্যাঙ্ক লকার ব্যবহার করার ছাড়পত্র দিতে পারেন।
নিরাপত্তা বা সুরক্ষা ব্যবস্থা:
ব্যাঙ্কের যে অংশে লকার থাকে, সেখানকার সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকে অত্যন্ত আঁটোসাঁটো। অন্য কোনও ব্যক্তি, গ্রাহক কিংবা কর্মচারী প্রয়োজনীয় আবেদন ছাড়া ওই অংশে প্রবেশ করতে পারেন না। এমনকী ব্যাঙ্কের লকারের ওই জায়গাটা দিন-রাত ভিডিও নজরদারির ঘেরাটোপে থাকে। যাতে সেখানে কোনও রকম অপ্রীতিকর কার্যকলাপ না-ঘটে।
বিমা পলিসি:
আর সব থেকে বড় কথা হল, ব্যাঙ্কের লকারে সোনা-গয়না গচ্ছিত রাখার সবথেকে সেরা সুবিধা হল - এটি বিমা পলিসি দ্বারা সুরক্ষিত করা থাকে। আসলে যখন গ্রাহকরা ব্যাঙ্কের লকারে নিজেদের মূল্যবান জিনিসপত্র রাখেন, তখন কোনও তা চুরি-ডাকাতির মুখে পড়তে পারে। যদিও সেটা খুবই বিরল ঘটনা। কিন্তু ক্ষতির হাত থেকে গ্রাহককে বাঁচানোর জন্য উচ্চমূল্যের বিমা পলিসি দেওয়া হয়। যদি মূল্যবান সামগ্রী খোওয়াও যায়, তা-হলে ব্যাঙ্কের তরফ থেকে লকারে রাখা গ্রাহকের স্বর্ণের প্রকৃত মূল্যের সমান মূল্য ফেরত দেওয়া হবে গ্রাহককে।
লকারে রাখা সামগ্রীর রেকর্ড রাখা বাঞ্ছনীয়:
গ্রাহক যখন ব্যাঙ্কের লকারে নিজের মূল্যবান সামগ্রী রাখবেন, তখন তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অন্যতম উপায় হল- প্রতিটি সামগ্রীর রেকর্ড নিজের কাছে রেখে দেওয়া। লকার থেকে কোনও কিছু বার করলে বা যোগ করলে সেই তালিকার রেকর্ড কিন্তু আপডেট করতে হবে। আসলে বারবার তো আর লকারে যাওয়া হয়ে ওঠে না, তাই লকারে কী কী রয়েছে, তা ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। সামগ্রীর তালিকা হাতে থাকলে তাই গ্রাহকেরই সুবিধা হবে। ধরা যাক, কোনও পরিস্থিতিতে কোনও সামগ্রী খোওয়া গেল, সে-ক্ষেত্রে ওই তালিকা দেখেই তা খুঁজে বার করা যাবে।
বছরে অন্তত এক বার লকার ব্যবহার করতেই হবে:
যাঁরা লকার ভাড়া নিচ্ছেন, তাঁদের এই বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে যে, বছরে অন্তত এক বার করে লকার ব্যবহার করতে হবে। ব্যাঙ্ক ভেঙে লকার খুলতে পারে, এমনটাই সাধারণত লেখা থাকে চুক্তিপত্রে। তবে এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার আগে অবশ্য গ্রাহককে প্রয়োজনীয় নোটিস পাঠাতে হয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে। সে-ক্ষেত্রে লকারের গ্রাহককে তা ব্যবহার না-করার পিছনে বৈধ কারণ দর্শাতে হয়। সেটা আদৌ বৈধ কি না, এটা অবশ্য ঠিক করে ব্যাঙ্ক। এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য নিয়মিত ভাবে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট এবং লকার চালনা করা উচিত।
ব্যাঙ্কের থেকে চুক্তির নথি নিয়ে রাখতে হবে:
নতুন লকারের নিয়ম বিদ্যমান লকার গ্রাহকদের উপর সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য লাগু হচ্ছে না। তবে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ব্যাঙ্কগুলিকে বর্তমান গ্রাহকদের জন্য এগ্রিমেন্ট রিনিউ করতে হবে। আরবিআই সমস্ত ব্যাঙ্ককেই এই নির্দেশ দিয়েছে। লকারের এগ্রিমেন্ট ভাল করে পড়ে নিতে হবে এবং তার একটি কপিও নিজের কাছে রাখা উচিত।
সময়ে লকারের ভাড়া প্রদান:
নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই লকারের ভাড়া মেটাতে হবে। পর পর তিন বছর ধরে যদি গ্রাহক লকারের ভাড়া না-মিটিয়ে থাকেন, তা-হলে ব্যাঙ্ক তাঁর লকার ভেঙে তা খুলে ফেলতে পারে।