আরও পড়ুন: সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা রাখার সুবিধা কী? সুদের হার কত? জানুন খুঁটিনাটি
টাকা রোজগারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তাই কষ্টার্জিত অর্থ সুরক্ষিত রাখার একমাত্র উপায় হল, সঠিক জায়গায় তা বিনিয়োগ করা। এখন বিনিয়োগ বলতে মাথায় আসে নানান ধরনের সঞ্চয় প্রকল্পের কথা। বাজারে থাকা এই সব সঞ্চয় প্রকল্পগুলির মধ্যেও মধ্যবিত্তের নয়নের মণি রেকারিং ডিপোজিট। কারণ এই স্কিম ঝুঁকিহীন এবং নিরাপদ। একই সঙ্গে সঞ্চয়ের অভ্যাসও তৈরি হয়। কারণ নিয়মিত টাকা জমা দিতে হয়। আর মেয়াদ শেষে মেলে সুদ-সহ নিশ্চিত রিটার্ন।
advertisement
এখন রেকারিং ডিপোজিট (Recurring Deposit) করতে চাইলে ব্যাঙ্কের থেকে পোস্ট অফিসই (Post Office) গ্রাহকের প্রথম পছন্দের ঠিকানা। কারণ পোস্ট অফিসে চড়া হারে সুদ (Interest Rate) পাওয়া যায়। এই মুহূর্তে ৫.৮ শতাংশ হারে সুদ মিলছে ডাকঘরে। ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে এই নতুন সুদের হার কার্যকরী হয়েছে। প্রতি কোয়ার্টারে এই সুদের হার নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় সরকার। যা এখন যে কোনও ব্যাঙ্কের তুলনায় একটু বেশি তো বটেই। সঙ্গে কর ছাড়ের সুবিধাও মেলে। সুদ থেকে উপার্জিত অর্থ প্রত্যেক কোয়ার্টারে গ্রাহকের বিনিয়োগের সঙ্গে যোগ হয়। তবে ব্যাঙ্কের থেকে পোস্ট অফিসের পার্থক্য হল, রেকারিং ডিপোজিটের মেয়াদকালে। দেশের যে কোনও ব্যাঙ্কে ৬ মাস, ১২ মাস অথবা ৩ বছরের জন্য রেকারিং ডিপোজিট করা যায়। কিন্তু পোস্ট অফিসে এর মেয়াদ ন্যূনতম ৫ বছর। কিন্তু তার পরেও পোস্ট অফিসই গ্রাহকদের পছন্দের তালিকায় থাকে শুধু সুদের হারের জন্যই।
পোস্ট অফিসের রেকারিং ডিপোজিটে সিঙ্গল এবং জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের সুবিধাও আছে। এ ক্ষেত্রেও সুদের হারের কোনও পরিবর্তন হয় না। ৫.৮ শতাংশই ফিক্সড সুদ। যদি গ্রাহক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন, তা হলে ৫ বছরের মেয়াদ শেষের আগেই টাকা তুলে নিতে পারেন। তবে এই সুবিধা গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার ৩ বছর পরে পাবেন। আবার টাকা জমা করার এক বছর পরে ওই ডিপোজিটের ৫০ শতাংশ টাকা ঋণ হিসেবে পেতে পারেন গ্রাহক। এমনকী লোনের সুবিধাও মেলে। তাই উচ্চ হারে সুদ এবং এত সুযোগ-সুবিধার জন্যই রেকারিং ডিপোজিটের ক্ষেত্রে পোস্ট অফিসই গ্রাহকের প্রথম পছন্দ হয়। এ ছাড়া আরও একটা কারণ আছে। সেটা হল, ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স ও ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাঙ্ক দেউলিয়া ঘোষণা হলে যে কোনও গ্রাহকের গচ্ছিত টাকার মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচ লক্ষ টাকাই ফেরত পাওয়া যাবে। এই নিয়মটি সমস্ত ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যার ফলে যদি কারও বেশি টাকা জমা থাকে, তা হলে তিনি বেশি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। কিন্তু সরকারি পোস্ট অফিসের ক্ষেত্রে এই রকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার স্বয়ং পোস্ট অফিসে টাকা খাটায়। তাই এতে গচ্ছিত অর্থের সম্পূর্ণ দায়িত্ব খোদ সরকারের।
পোস্ট অফিস রেকারিং ডিপোজিটের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দিতে হয়। একবার গ্রাহক আরডি অ্যাকাউন্ট খুললে তাঁর ক্ষেত্রে সুদের হার এক থাকে। যদি কোনও মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, তা হলে পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত টাকা জমা দেওয়া যায়। আর যদি কোনও মাসের ১৬ তারিখ থেকে সেই মাসের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, তবে পরবর্তী মাসের শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত টাকা দেওয়ার সুযোগ মেলে। যদি সেই তারিখ পেরিয়ে যায়, তা হলে প্রতি ১০০ টাকার জন্য এক টাকা জরিমানা ধার্য হয়। পরে গ্রাহককে প্রথমে মাসিক অর্থের সঙ্গে জরিমানা দিতে হয়। তার পর সংশ্লিষ্ট মাসের টাকা দিতে হয়। তবে পর-পর চার বার টাকা জমা দেওয়ার দিন পেরিয়ে গেলে, অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও পরবর্তী দুমাসের মধ্যে সেই অ্যাকাউন্ট ফের চালু করার সুযোগ থাকে। মাসিক কিস্তি এবং সুদের হারও একই মেলে। দেশের প্রবীণ নাগরিকদের রেকারিং ডিপোজিটে বাড়তি সুদ দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে প্রবীণ নাগরিকদের সঞ্চয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটি একটি দুর্দান্ত বিকল্প হতে পারে।
আরও পড়ুন: গাড়ি ঋণ বেছে নেওয়ার সময় কী করা উচিত এবং কোন কাজগুলো করা উচিত নয়?
এক নজরে পোস্ট অফিসের রেকারিং ডিপোজিট এবং সুদের হার দেখে নেওয়া যাক –
১) মেয়াদ: পাঁচ বছর।
২) পোস্ট অফিসের রেকারিং ডিপোজিটের জন্য মাসিক ন্যূনতম ১০০ টাকা দিতে হয়।
৩) মাসে সর্বোচ্চ কত টাকা দেওয়া যাবে, তার কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই।
৪) পোস্ট অফিসের রেকারিং ডিপোজিটে সুদের হার নির্ধারণ করে কেন্দ্র।
৫) চলতি বছরের ১ অক্টোবর থেকে সুদের হার: বার্ষিক ৫.৮ শতাংশ।
