বাড়ি কেনা মানে বিশাল টাকার লেনদেন, তাই বেশিরভাগ ক্রেতাকেই হোম লোনের উপর নির্ভর করতে হয়।
আরও পড়ুন: বাড়ল না কমল ? জেনে নিন আজকের পেট্রোল ও ডিজেলের লেটেস্ট দাম....
যেহেতু বিপুল টাকার ব্যাপার তাই বাড়ির ক্রেতাকে কয়েকটা বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। একটা নতুন বাড়ি (পুনঃবিক্রয় নয়) কেনার সময় ৩টি জিনিস মাথায় রাখতে হবে। সেগুলো হল নিয়ন্ত্রক, অর্থ এবং অবস্থান। এগুলো ঠিকঠাক হলেই স্বপ্নের বাড়ি শান্তির হবে।
advertisement
বাড়ি কেনার আগে এই ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা দরকার। যা বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন Bankbazaar-এর সিইও আদিল শেঠি (Adhil Shetty)।
আরও পড়ুন: ৩ বছরে ১৭৫ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে টাটার এই স্টক! ভবিষ্যতে দেবে আরও লাভ
সামর্থ্য এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা
হোম লোনের মাধ্যমে বাড়ি কেনা সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক। তবে বাড়ি কেনার আগে অবশ্যই নিজের আর্থিক অবস্থান, ডাউন পেমেন্ট এবং কিস্তি মেটানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। যদি একটা বাড়ির দাম ১০০ টাকা হয় তাহলে আনুষঙ্গিক আরও কিছু খরচ আছে যা সেটাকে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় নিয়ে যাবে। হোম লোনের মাধ্যমে এর ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ টাকা মেটানো যেতে পারে কিন্তু বাকিটা নিজের পকেট থেকে দিতে হবে। একটা বড়-সড় ডাউন পেমেন্ট করতে পারলে ঋণের চাহিদা অনেকটা কমবে, সঙ্গে কমবে ইএমআই-এর বোঝা। এর পরেও ৪০ থেকে ৫০ টাকা নিজের পকেট থেকে যাবে। সেই টাকা যেন কাছে থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ডাউন পেমেন্ট বাঁচানোর অনেক উপায় আছে। প্রতি মাসে এসআইপি-র মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা যায়। এতে ৩ বছর পর ১২ শতাংশ হারে ১০.৯ লক্ষ টাকা রিটার্ন মিলবে।
ঋণ দেওয়ার সময়ই কীভাবে সেটা পরিশোধ করা হবে, তা ঋণদাতারা দেখে নেবে। যদিও আর্থিক অবস্থা কেমন সেটা ঋণগ্রহীতার থেকে ভালো আর কারও বোঝার কথা নয়! ধারাবাহিকভাবে ইএমআই পেমেন্ট দিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাঁরই, তাই মাসিক খরচ মেটানোর মতো যথেষ্ট সঞ্চয় আছে কি না সেটা দেখে নিতে হবে। নাহলে সেই অনুযায়ী খরচ কাটছাঁট করতে হবে।
আরও পড়ুন: আয় কম হলেও দাখিল করতে হবে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন! কারা থাকছেন এই নিয়মের আওতায়?
ক্রেডিট স্কোর
নতুন বাড়ি কেনার জন্য ঋণ নিতে চাইলে ৭৫০ বা তার উপরের শক্তিশালী ক্রেডিট স্কোর থাকা বাঞ্ছনীয়। এটা সর্বনিম্ন সুদের হারে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। যদি কোনও স্বল্পমেয়াদী ইএমআই থাকে তাহলে সেগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিটিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। অনেক ইএমআই থাকলে পরিশোধে সমস্যা হতে পারে। এটা আর্থিক সুবিধে পাওয়ার সম্ভাবনাকেও প্রভাবিত করে।
রেরা এবং অন্যান্য নথিপত্রের বিবরণ
বাড়ির ক্রেতাকে প্রথমেই দেখে নিতে হবে তিনি যে সম্পত্তি কিনছেন তার প্রয়োজনীয় শংসাপত্র, আইনি বৈধতা এবং স্থানীয় ছাড়পত্র রয়েছে কি না। এর সঙ্গে সম্পত্তিটি রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি (রেরা)-র সঙ্গে নিবন্ধিত কি না সেটা দেখে নেওয়া সবচেয়ে জরুরি। প্রকল্পে দেরি বা নির্মাণে ত্রুটির মতো সমস্যা হলে রেরা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেবে। সম্পত্তির প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট এবং ছাড়পত্র না থাকলে ঋণদাতারা টাকা নাও দিতে পারে।
টাইটেল ডিড এবং এনকামব্রান্স সার্টিফিকেট
নতুন বাড়ি কেনার আগে যে জিনিসটা দেখে নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল টাইটেল ডিড, যার উপর ভিত্তি করে সম্পত্তি বা প্রকল্প রয়েছে। টাইটেল ডিড হল সেই নথি যা বিল্ডারের থেকে সম্পত্তির মালিকানা, মালিকানা বিক্রি বা হস্তান্তর করার অধিকার এবং সম্পত্তি নিয়ে কোনও মামলা রয়েছে কি না সেই সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়। এই নথি পরীক্ষার জন্য কোনও আইনজীবীর সাহায্য নেওয়া যায়।
একই ভাবে, এনকামব্রান্স সার্টিফিকেটও দেখে নেওয়া উচিত। ঋণ নেওয়ার সময় এই সার্টিফিকেটের দরকার হবে। সম্পত্তিটা যে আইনি সমস্যা থেকে মুক্ত এই নথি তার প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। কেউ নিশ্চয় এমন কোনও সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করতে চাইবেন না যা ভবিষ্যতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
স্ট্যাম্প ডিউটি এবং অন্যান্য চার্জ
প্রকৃত মূল্য উদ্ধৃত মূল্যের থেকে ভিন্ন হতে পারে। সম্পত্তি কেনার সময় এমন বাড়তি অনেক টাকাই দিতে হবে। ক্রয় চুক্তি সাক্ষরের সময় প্রকৃত মূল্য বাড়ে, যেটা একটা ধাক্কা বলে মনে হতে পারে। তাই বাড়ির ভিত্তিমূল্য এবং তার উপর কিছু অনিবার্য খরচ জেনে রাখা দরকার যেটা কেনার সময় এই অপ্রয়োজনীয় ধাক্কা এড়িয়ে আর্থিকভাবে আরও ভালো পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে। স্ট্যাম্প ডিউটি (৫ থেকে ৭ শতাংশ), রেজিস্ট্রেশন ফি (১ থেকে ২ শতাংশ), রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ, পার্কিং চার্জের মতো খরচ প্রকৃত খরচ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের জন্য (৪৫ লাখ টাকার কম) নির্মাণাধীন সম্পত্তির উপর ১ শতাংশ পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) এবং ৪৫ লাখ টাকার উপরে হলে ৫ শতাংশ দিতে হবে। স্বপ্নের বাড়ি কেনার আগে এই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত খরচ সম্পর্কে জানতেই হবে।
পরিশেষে
উপরে আলোচিত পাঁচটি পয়েন্ট ছাড়াও, নতুন বাড়ি কেনার জন্য খোঁজখবর শুরু করার সময়ই সম্পত্তির অবস্থান দেখে নেওয়া উচিত। বাড়ির কাছাকাছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রেল ও সড়ক যোগাযোগ, বিমানবন্দর এবং শপিং মার্কেট থাকা উচিত। এতে বাসিন্দার যেমন সুবিধে হবে, তেমনই জীবনযাত্রার মান বাড়বে।
বাড়ি কেনার মুহূর্ত জীবনে অল্প বারই আসে। তাই এর পিছনে চাই সতর্কতা, আর্থিক পরিকল্পনা, গবেষণা এবং যথাযথ পরিশ্রম। তাহলেই সুখী এবং নিরাপদ অভিজ্ঞতা লাভ করবেন বিনিয়োগকারী।