হরিয়ানার কারনালের কাচওয়া গ্রামের বাসিন্দা ঈশ্বর কুমার। বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। কিন্তু মন টেকেনি। ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল নিজে কিছু করার। উদ্যোগপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। শেষমেশ চাকরি ছেড়ে বেছে নেন কৃষকের পেশা। সহকর্মী থেকে গ্রামের লোক, ঈশ্বরকে সাবধান করেছিলেন। বলেছিলেন, বড় বোকামি হচ্ছে। কিন্তু ঈশ্বর কারও কথা শোনেননি। নিজের এক একর জমিতে শুরু করেন পেয়ারা চাষ।
advertisement
আরও পড়ুন: নতুন করে শুরু করা যেতে পারে এই সব ব্যবসা! কম বিনিয়োগেই হয়ে যেতে পারেন মালামাল!
বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করার সময় যৎসামান্য বেতন পেতেন। সেই টাকায় সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হত। কিন্তু পেয়ারা বাগান করে তিনি প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন। শুধু নিজে আয় করছেন তাই নয়, অনেক কৃষককে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পেয়ারা বাগান করে কীভাবে অর্থ উপার্জন করা যায় তার সুলুক সন্ধান শিখিয়ে দিচ্ছেন অন্যকেও।
পেয়ারা বাগান দেখে অবাক হতে হয়: ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলতে কারনাল গ্রামের কাচওয়া গ্রামে পৌঁছয় নিউজ ১৮-এর দল। আর তারপরই সন্ধান মেলে আলিবাবার গুহার। পেয়ারা বাগান করে যে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করা শুধু নয়, বড়লোকও হওয়া যায় তা ঈশ্বরকে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। আলাপচারিতায় কৃষক ঈশ্বর জানিয়েছেন, তিনি সিএসএসআরআই কারনালে কাজ করতেন। সেই সময় ঘুরতে ঘুরতে একটি প্রদর্শনীতে যান ঈশ্বর। সেখানে পেয়ারা চাষ নিয়ে একটি স্টল ছিল। তা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান ঈশ্বর। খোঁজ খবর নেন। কীভাবে চাষ করতে হয়, কী কী লাগে, কোথায় বিক্রি করা হয়, কত টাকা রোজগার সম্ভব।
আরও পড়ুন: লাভ হতে পারে মধ্যবিত্তদেরও! বাজেটে বিরাট ঘোষণা করতে পারেন নির্মলা
সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়ার মনস্থির করে নেন ঈশ্বর। চাকরি ছেড়ে দেবেন। পেয়ারার বাগান করবেন। কারণ এই চাকরিতে সংসার টানতেই দম বেড়িয়ে যাচ্ছে। নতুন কিছু চেষ্টা করে দেখাই যাক না। যেমন ভাবা তেমন কাজ। চাকরি ছেড়ে এক একর জমিতে পেয়ারার বাগান করলেন ঈশ্বর। চারা কেনা, মাটি তৈরি, সার-জলের ব্যবস্থা সব মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তাঁর। ২ বছর পর গাছে পেয়ারা ফলতে শুরু করে। ঈশ্বরও হাতেনাতে ফল পান। ফল তুলতে শুরু করেন।
প্রথম বছরেই কেল্লা ফতে। ২.৫ লক্ষ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেন ঈশ্বর। এত দাম পাবেন স্বপ্নেও ভাবেননি। পরের মরশুমে বিক্রি আরও বাড়ে। সেবার ৩ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘কারনালে পেয়ারা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। চণ্ডীগড়ে বেচতে পারলে লাভ বেশি। কারণ সেখানে কেজি প্রতি ৯০ থেকে ১০০ টাকা দাম পাওয়া যায়। আমাদের উৎপাদন ক্রমাগত বাড়ছে’। ঈশ্বর যোগ করেন, ‘পেয়ারা পুষ্টিগুণে ভরপুর। স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা খুব উপকারী’।
রাজ্য জুড়ে কৃষকরা পাঠ নিচ্ছেন: ২০১৯ সালের জুলাই মাস। সেই বছরই চাকরি ছেড়ে পেয়ারার বাগান করেন ঈশ্বর কুমার। তারপর প্রায় ৩ বছর কেটে গিয়েছে। ঈশ্বর এখন শুধু কৃষক নন, উদ্যোগপতিও। তাঁর নিজের বাগানের পেয়ারা তো বিক্রি করছেনই, সঙ্গে অন্য কৃষকদের শেখাচ্ছেন কীভাবে পেয়ারা বাগান করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। ঈশ্বর এখন ক্ষুদ্র কৃষকদের রোল মডেল। সারা রাজ্য থেকে কৃষকরা আসেন ঈশ্বরের পেয়ারা বাগানে। কীভাবে চাষ করতে হয় হাতেকলমে শেখেন। ঈশ্বর বলেন, ‘যখন সারা রাজ্য থেকে কৃষকরা আমার বাগানে আসেন, চাষ করা শেখেন, তখন আমার খুব আনন্দ হয়’।
এই কৃষকদের অনেকেই ঈশ্বরের কাছ থেকে শিখে নিজেরা পেয়ারা বাগান করেছেন। লাভও করছেন। স্বাবলম্বী হয়েছেন। এটা তো আনন্দিত হওয়ার মতোই বিষয়। ঈশ্বর আরও জানাচ্ছেন, পেয়ারা বাগান করে শুধু ভাল আয় করা সম্ভব তাই নয়, এই চাষে জলও অনেক কম লাগে। অর্থাৎ জলের সাশ্রয় হয়। ডিপ সেচের মাধ্যমে জল দেওয়া হয়, যার কারণে খুব কমই জলের প্রয়োজন হয়। অন্য দিকে, ধান ও গম চাষে প্রচুর জল দিতে হয়। ইদানীং উদ্যান চাষে উৎসাহ দিচ্ছে সরকারও। বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন কৃষকরা। এর সুযোগ নিচ্ছেন অনেকেই। ঈশ্বরের মতো ছোট কৃষকরা উদ্যান চাষে নাম লেখাচ্ছেন। মাটিতে লেখা হচ্ছে অন্য ইতিহাস।