তবে গোলাপ দিয়ে শুধু সঙ্গিনীর মন জয় নয়, ভাল টাকাও উপার্জন করা যায়। সেটা কীভাবে? গোলাপের চাষ। তবে হ্যাঁ, এর জন্য গোলাপের সঠিক জাত নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক ফুলের বাজারে বাজিমাত করতে চাইলে উৎপাদন করতে হবে মানসম্পন্ন গোলাপ। প্রজাতি এবং জাতের উপর নির্ভর করে গোলাপের ব্যবহার ভিন্ন ভিন্ন। বাগানের বাহারি গাছ থেকে কুচো ফুল পর্যন্ত। গোলাপ তেল, গোলাপ জল এবং গুলকন্দ তৈরিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
advertisement
আরও পড়ুন: মার্চে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বড় ধামাকা! একসঙ্গে তিনটি বিশাল খবর
ফুলের সাজ, তোড়া, পুজোর জন্য কিংবা উপহার হিসেবে, সামাজিক অনুষ্ঠানে কুচো ফুল হিসেবে গোলাপের চাহিদা বিশাল। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাজারেও কুচো ফুল হিসেবে কাটা গোলাপের জনপ্রিয়তা শীর্ষে। এদেশে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্নাটক এবং পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি গোলাপ ফুলের চাষ হয়। ভারতে অনেক জাতের গোলাপ পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গোলাপি গোলাপ, সাদা গোলাপ, মেরুন গোলাপ, লাল গোলাপ, হলুদ গোলাপ এবং কমলা গোলাপ।
আরও পড়ুন: আর্থিক সঙ্কটের মুখে ঋণ পেতে সমস্যা? চিন্তা নেই! গোল্ড লোন তো আছেই
ভারতের বাণিজ্যক গোলাপ: ভারতে বেশ কয়েক ধরনের বাণিজ্যক গোলাপ চাষ হয়। সেগুলি হল –
ক) ফ্লোরিবুন্ডা: এই ধরনের গোলাপের আকার ছোট, মাত্র ২.৫ সেমি। ডালপালাও খাটো, ৬০ সেমি-র কম। তবে ফলন অন্যান্য জাতের তুলনায় অনেক বেশি। এই ধরনের গোলাপের কিছু জাত হল কিস, ফ্লোরেন্স, ফ্রিস্কো, মার্সেডিজ এবং জাগুয়ার।
খ) হাইব্রিড টি: এই ধরনের গোলাপের ফুলের আকার বড়। কমপক্ষে ৪ সেমি। লম্বা কাণ্ড, ১২৫ সেমি। প্রতি বর্গমিটারে ১০০ থেকে ২০০ কাণ্ডের ফলন হয়। হাইব্রিড টি গোষ্ঠীর গোলাপ চাষে লাভ সবচেয়ে বেশি। এই গোষ্ঠীর কিছু পরিচিত জাত হল মেলোডি, ডার্লিং, সোনিয়া, ভিভাল্ডি, টিনেক এবং ওনলি লাভ।
গ) স্প্রে: এই জাতের গোলাপের একটি কান্ডে ৫-৬ টি ফুল থাকতে পারে, কিন্তু প্রতি বর্গমিটারে কান্ডের ফলন খুবই কম। এই গোষ্ঠীর গোলাপের গুরুত্বপূর্ণ জাতগুলি হল নিকিতা, ইভিলিয়ান এবং জয়৷
ঘ) এছাড়া অন্যান্য যে সব গোলাপ বেশি চাষ হয় সেগুলি হল বেবি পিঙ্ক, সোফিয়া লরেন্স, গ্ল্যাডিয়েটর, ওয়াইসিডি ১, ওয়াইসিডি ২ এবং ওয়াইসিডি ৩।
গোলাপ চাষে যে ধরণের জলবায়ু দরকার: ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস সূর্যালোক, আর্দ্র এবং মাঝারি তাপমাত্রা ভারতের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় জলবায়ু অবস্থায় গোলাপ চাষের জন্য আদর্শ। ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে গোলাপ জন্মাতে পারে কিন্তু পাপড়িগুলো সাজানো থাকে না, ব্যবধান বেড়ে যায়। উচ্চতর তাপমাত্রায় অর্থাৎ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরেও গোলাপ চাষ করা যায় তবে যদি উচ্চ আর্দ্রতা ধরে রাখা সম্ভব হয়।
গোলাপ চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি এবং প্রস্তুতি: গোলাপ জৈব পদার্থ এবং অক্সিজেন সমৃদ্ধ ভাল-নিষ্কাশিত মাটি পছন্দ করে। জমিকে কম্পোস্ট সমৃদ্ধ করতে ফার্ম ইয়ার্ড সার যোগ করা যেতে পারে। পিএইচ রেঞ্জ ৬ থেকে ৬.৫ এর মাটিতে গোলাপ ভাল জন্মায়। ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে মাটি আলগা করতে হয়। কারণ মাটি শক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গোলাপ চাষের পদ্ধতি: গোলাপ চাষের জন্য বুডিংকে অন্যতম সেরা পদ্ধতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এগুলি ৬০ থেকে ৯০ সেমি জুড়ে এবং ৬০ থেকে ৭৫ সেমি গভীরে বৃত্তাকার গর্তে রোপণ করা যেতে পারে। গোলাপের বৃদ্ধির জন্য কমপক্ষে আট ঘন্টা সরাসরি সূর্যালোক প্রয়োজন। চাষের সেরা সময় সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর। সময় সময় ছাঁটাই বা কাটিং প্রয়োজন। আর দরকার ফার্ম ইয়ার্ড সার।
কতটা জল লাগে: রোপণের পর প্রতিদিন জল দিতে হবে। তারপর সপ্তাহে একবার। মার্চ ও অক্টোবর মাসে গোলাপ বাগানে ছাঁটাই বা কাটিং করা হয়।
কতটা সার প্রয়োজন: তিন থেকে চার মাসের ব্যবধানে, প্রতিটি ছাঁটাইয়ের পর ১২ কেজি এবং ৮:৮:১৬ গ্রাম এনপিকে/গাছেতে ফার্মইয়ার্ড সার (এফওয়াইএম) প্রয়োগ করতে হয়।
ফলন: হাইব্রিড গোলাপ বছরে গাছ পিছু ৮০ থেকে ৯০ কান্ড ফলন দিতে পারে। তাই মানসম্পন্ন গোলাপ ফুল উৎপাদন করতে পারলে প্রচুর লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।