ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস কী
ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস হল অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই এই প্ল্যাটফর্মে আসেন। নিজেদের পছন্দ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিসপত্র কেনেন বা বিক্রি করেন। গত কয়েক বছরে ই-কমার্স ব্যবসা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মার্কেটপ্লেস বিশাল। তারা অনলাইনে যে ধরনের বাজার বসাচ্ছে, একবার দেখে নেওয়া যাক।
বিজনেস টু কনজিউমার মার্কেটপ্লেস – এখানে সরাসরি খরিদ্দারের সঙ্গে লেনদেন করে ব্যবসায়ীরা। ইলেকট্রনিক্স, পোশাক থেকে বাড়ির সামগ্রীর কেনাকাটা হয়। অ্যামাজনের মতো গ্লোবাল জায়ান্টের পাশাপাশি চিনের TMALL এবং jd.com এবং ব্রাজিল ও ল্যাটিন আমেরিকার Mercado Livre-এর মতো ই-কমার্স সাইট মার্কেটপ্লেস সাজিয়ে বসেছে।
advertisement
বিজনেস টু বিজনেস মার্কেটপ্লেস - উল্লেখযোগ্য উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে eBay, TaoBao, Mercari, Etsy এবং এমনকি Airbnb। এই ধরণের মার্কেটপ্লেসে সাধারণত এক ব্যবসায়ী আরেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে লেনদেন করে।
ভোক্তা-থেকে-উৎপাদক (C2M) বা ভোক্তা-থেকে-ব্যবসায় (C2B) মার্কেটপ্লেস - এই ধরনের মার্কেটপ্লেসের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল PinDuoDuo। কয়েক বছরের মধ্যে, এই মডেলটি বৈশ্বিক ই-কমার্স ব্যবসার ৪ শতাংশ দখল করে নিয়েছে।
সার্ভিস টু কনজিউমার মার্কেটপ্লেস - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হোমঅ্যাডভাইজার এবং টাস্কর্যাবিট বা ভারতে আরবানক্ল্যাপ, অস্ট্রেলিয়ায় হাইপেজ ইত্যাদি। গিগ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে এরা।
মার্কেটপ্লেসের সুবিধা: ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস ব্যবসায়ীদের পণ্য বিক্রি করতে, বৃদ্ধি পেতে এবং লাভ করতে সাহায্য করে। ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসের অপারেটররা বিক্রয় এবং পরিষেবা প্রদানের প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে দিয়েছে। সব ধরনের গ্রাহকরা এখানে আসতে পারেন। ব্যবসা করতে পারেন ব্যবসায়ীরা।
যেমন অ্যামাজন, বিক্রেতাদের জন্য সহজেই মার্কেটপ্লেসে বিক্রি শুরু করার সুবিধা এনে দিয়েছে। রয়েছে নির্দেশিকা। দ্রুত অনবোর্ডিং, পণ্য আপলোড, মূল্য নির্ধারণ, প্রচার এবং বিক্রি।
বিক্রেতারা এমন মার্কেটপ্লেস চান যেখানে বিশ্বস্ত গ্রাহকরা লেনদেন করেন। অর্থাৎ যেখানে বিক্রেতারা খুব সহজেই নিজেদের ব্যবসা বাড়াতে পারেন। এক্ষেত্রে অ্যাঙ্কর ইনোভেশনের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এটা অ্যামাজন মার্কেটপ্লেসে শুরু হয়। অনলাইন আয়ের ৯০ শতাংশ আসে এখান থেকেই।
মার্কেটপ্লেস অপারেটর থাকায় বিক্রেতারা সুবিধা পান। তাঁরা পণ্য গুদাম করে রাখা, শিপিং এবং অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব থেকে মুক্ত। এই কাজগুলো মার্কেটপ্লেস নিজেই করে। পাশাপাশি বিক্রি বাড়াতে অপারেটররা ৩৬৫ দিনই কোনও না কোনও ইভেন্টের আয়োজন করেন।
ভ্যালেনটাইন্স ডে থেকে স্বাধীনতা দিবস, দুর্গাপুজো থেকে দীপাবলিতে বিক্রি বেড়ে যায় বহুগুণ। এর সঙ্গে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে থাকে স্পেশাল অফার। বিনামূল্যে শিপিং, বই ভিডিও এবং অডিও স্ট্রিমিং পরিষেবা এবং আরও অনেক কিছু। কিছু মার্কেটপ্লেস বার্ষিক সদস্যপদ অফার করে। এতে গ্রাহকদের সেই মার্কেটপ্লেসের সঙ্গে একপ্রকার বেঁধে ফেলা যায়। পণ্য বিক্রির পর কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। ক্রেতার হয়তো পছন্দ হল না। কিংবা ছেঁড়াফাটা বেরলো, তখন পণ্য বদলে দিতে হবে। সেই কাজটাও মার্কেটপ্লেস অপারেটররা করে।
‘থিঙ্ক গ্লোবালি, অ্যাক্ট লোকালি’। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। উদার অর্থনীতির যুগে খুব সহজেই ব্যবসার আন্তর্জাতিকীকরণ করা সম্ভব। স্থানীয় মার্কেটপ্লেসগুলি লঞ্চিং প্যাড হিসেবে কাজ করে। ব্যবসায়ীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকলে তিনি নিজের পণ্যকে পৌঁছে দিতে পারেন বিশ্ব বাজারে। এতে লাভও বাড়বে। তবে এই সমস্ত সুবিধা সব মার্কেটপ্লেসেই পাওয়া যাবে এমনটা নয়। তবে যে কোনও বিক্রেতার জন্য এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
বি২বি মার্কেটপ্লেসের নিজস্ব কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন অর্থপ্রদান, অর্থায়ন, লজিস্টিকস সাপোর্ট ভিন্নভাবে পূরণ করা উচিত।
কাজ, খরচ, সুবিধা, গ্রাহকের প্রত্যাশা ইত্যাদি নিয়ে স্বাস্থ্যকর ডিবেট প্রয়োজন। এতে মার্কেটপ্লেসেরই উন্নতি হবে। এর সঙ্গে চাই কৌশল। নিজের পণ্যকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলার গুণ থাকতে হবে। যেমন নাইকি, নিজেদের ব্র্যান্ডকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে অ্যামাজনে বিক্রি বন্ধ করে দেয়। এখন তারা শুধুমাত্র নিজস্ব সাইট থেকেই বিক্রি করে।
আরও পড়ুন, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার প্রতি দায়বদ্ধতা! এবারের বাজেট কীভাবে প্রভাবিত করবে দেশকে!
আরও পড়ুন, শিশুদের হাতেখড়ি ডিজিটাল স্লেট-এ! এবার সরস্বতী পুজোয় একেবারে নতুন ছবি
জে-জেড একবার লিখেছিলেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী নই, আমি ব্যবসায়ী-মানুষ’। আজ, এই মন্ত্রটি মার্কেটপ্লেস অপারেটরদের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। মাথায় রাখতে হবে মার্কেটপ্লেস শুধু ব্যবসা পরিচালনা করে না; মার্কেটপ্লেস-ই ব্যবসা!