বর্ণ, গন্ধ, স্বাদে অতুলনীয় দার্জিলিং চা। তার জগৎজোড়া নাম। আর দার্জিলিং চায়ের ফার্স্ট ফ্লাশের ফলন নির্ভর করে আবহাওয়ার উপরে। আসলে বৃষ্টি আর উপযুক্ত আবহাওয়ার উপরেই নির্ভর করে ফার্স্ট ফ্লাশের মান এবং পরিমাণ। বিশেষ এই চা বাজারে সবথেকে বেশি দামে পাওয়া যায়।
ফার্স্ট ফ্লাশ হল মরশুমের সূচনার প্রতীক। আর দার্জিলিংয়ে বছরে যত চা হয়, তার মধ্যে ২০ থেকে ২৫ শতাংশই ফার্স্ট ফ্লাশ। আর অর্থনৈতিক দিক থেকেও এর অবদান অনস্বীকার্য। উচ্চ পরিমাণ এবং মূল্যের কারণে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশই অর্থ-এর কারণেই আসে।
advertisement
এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান টি এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অংশুমান কানোরিয়া সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান যে, এবারের ফার্স্ট ফ্লাশের অবস্থা খুবই খারাপ। বিগত তিন সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি হয়নি এখানে। শুধু তা-ই নয়, দিনের বেলায় এখানকার তাপমাত্রা প্রায় ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে। যার ফলে চা গাছের পাতা সেভাবে তৈরি হচ্ছে না। এই অবস্থায় ফার্স্ট ফ্লাশের ফলন ৩০-৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে।
যদিও মার্চের প্রথম সপ্তাহে আকস্মিক বৃষ্টি দেখা গিয়েছিল পাহাড়ের কিছু অংশে। ফলে ফার্স্ট ফ্লাশের ফলনের উন্নতি নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল দার্জিলিংয়ের চা ইন্ডাস্ট্রি। বছরে স্বাভাবিক ভাবে ফার্স্ট ফ্লাশ দার্জিলিং চা ফলন হয় প্রায় ১.৭৫ থেকে ১.৮০ মিলিয়ন কেজি। আর দার্জিলিং চা ইন্ডাস্ট্রি টিকে থাকবে কি না, সেটা নির্ভর করে মাত্র দু’টো মাসের উপর। আর সেটা হল মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় এবং মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়। সেখানে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়টা এখন চলছে। যেখানে অনুপযুক্ত আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। অংশুমান কানোরিয়ার মতে, ‘ফার্স্ট ফ্লাশের ফলনের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা গোটা বছরেও পূরণ করা সম্ভব নয়।’
গত বছরেও দার্জিলিং টি ইন্ডাস্ট্রিতে ফার্স্ট ফ্লাশের ফলনের ক্ষেত্রে পতন দেখা যায়। বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চায়ের ফলন পতনের সাক্ষী থেকেছে। ইন্ডাস্ট্রির বিশ্লেষণ বলছে, এর পিছনে রয়েছে নানা কারণ। যার মধ্যে অন্যতম হল আবহাওয়ার পরিবর্তন, শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ এবং কম ফলন ও কম মুনাফা। সাম্প্রতি কয়েক বছরে অর্থনৈতিক সঙ্কটের জেরে বহু বাগান মালিকই নিজেদের বাগান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কানোরিয়ার মতে, ‘এই প্রিমিয়াম চায়ের প্রথম পণ্য ভারতে যাতে জিআই ট্যাগ পায়, তার দাবি চলে আসছে। কিন্তু ইউরোপ এবং জাপানের মতো বৃহত্তম বৈদেশিক বাজারে এটা ‘অপর্যাপ্ত’। আসলে ইউরোপে খুবই স্বল্প চাহিদা রয়েছে। আর অন্য দিকে চায়ের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। জাপানেও সমস্যা রয়েছে। কারণ তাদের মুদ্রা ইয়েন দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রসঙ্গত, বার্ষিক প্রায় ৬৫ শতাংশেরও বেশি পরিমাণ ফার্স্ট ফ্লাশ চা রফতানি করা হয়।