আরও পড়ুন: আরও দাম কমল সোনার ? জেনে নিন আজকের লেটেস্ট রেট এখানে....
তবে সমস্যা হল, বাজারে নানা ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। এর মধ্যে কোনটা বিনিয়োগকারীর জন্য যথাযথ হবে, সেটা বোঝা যাবে কী ভাবে? যদি কেউ ৫ কিলোমিটার দূরত্বে ভ্রমণ করতে চান, তা হলে অটো রিক্সা সব চেয়ে ভালো পরিবহণের মাধ্যম হবে। আবার যদি কেউ কলকাতা থেকে দিল্লি যেতে চান, তবে তাঁকে ফ্লাইট নিতে হবে। কম দূরত্বের জন্য ফ্লাইট পাওয়া যায় না আবার দীর্ঘ যাত্রার জন্য অটো রিক্সা ব্যবহার করা অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং সময়সাপেক্ষও। একই রকম ভাবে মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগকারীকে বুঝতে হবে তাঁর কোনটা প্রয়োজন। অর্থাৎ কেন তিনি বিনিয়োগ করছেন?
advertisement
আরও পড়ুন: শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার পছন্দ এই ড্রাই ফ্রুট; চাষ করে আয় করুন কোটি কোটি টাকা
- তিনি কি দ্রুত সম্পদ গড়ে তুলতে চান? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তা হলে কেন?
- নাকি ধীরে-সুস্থে দীর্ঘ মেয়াদে সম্পদ গড়ে তোলাই তাঁর লক্ষ্য? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তা হলে কেন?
- অথবা নিয়মিত আয় করাটাই কি বিনিয়োগকারীর উদ্দেশ্যে? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তা হলে কেন?
মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করেন পেশাদার ফান্ড ম্যানেজাররা। বিনিয়োগকারী কেন বিনিয়োগ করতে চাইছেন, তা নিয়ে এই ফান্ড ম্যানেজারদের সঙ্গে বিশদে আলোচনা করতে হবে। বুঝে নিতে হবে, কোন স্কিমে বিনিয়োগ করাটা বিনিয়োগকারীর কাছে সব চেয়ে লাভজনক হবে-- ফিক্সড ইনকাম, ইক্যুইটি নাকি ব্যালান্সড। কোন সময়কাল বিনিয়োগকারীর জন্য সুবিধেজনক এবং তার রিস্ক অ্যাপেটাইট কতটা, এই নিয়ে ফান্ড ম্যানেজার বা পরামর্শদাতার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা খুবই জরুরি।
কারণ বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে রিস্ক অ্যাপেটাইট বা ঝুঁকি নেওয়ার সাহস বিভিন্ন রকমের হয়। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর যৌথ আর্থিক ফান্ড থাকলেও তাদের রিস্ক প্রোফাইল আলাদা হতে পারে। অনেকে বেশি ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন। আবার অনেকে কম ঝুঁকিতে মাঝারি রিটার্ন আশা করেন। বিনিয়োগকারী ঠিক কতটা ঝুঁকি নিতে চান বা সক্ষম, অথবা কতটা ঝুঁকি নেওয়া তাঁর পক্ষে যথোপযুক্ত হবে, তা বোঝার জন্য বিনিয়োগ পরামর্শদাতা কিংবা মিউচুয়াল ফান্ড ডিস্ট্রিবিউটর বা ফান্ড ম্যানেজারদের থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: সিনেপ্রেমীদের জন্য খুবই লাভজনক এই ক্রেডিট কার্ডগুলো, সাশ্রয় হবে প্রচুর টাকা!
এবার আসা যাক, বিনিয়োগকারীর উদ্দেশ্যের বিষয়ে।
- যদি রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিং-এর মতো দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য থাকে এবং ঝুঁকি নেওয়ার সাহসও থাকে, তা হলে বিনিয়োগকারীর জন্য ইক্যুইটি বা ব্যালান্সড ফান্ড আদর্শ। অনেকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য এই স্কিমটি অনেক বেশি সুবিধের। কারণ দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ, স্বল্পমেয়াদী অস্থিরতার প্রভাব কমিয়ে দেয়।
- কয়েক মাস ধরে বিনিয়োগ করে যদি স্বল্পমেয়াদী সম্পদ বাড়িয়ে নেওয়া লক্ষ্য হয়, তা হলে বিনিয়োগকারীর জন্য লিক্যুইড ফান্ড (Liquid Fund) হবে আদর্শ। এতে ঝুঁকিও কম থাকে। রিটার্নও খারাপ আসে না।
- আর যদি নিয়মিত আয় করাটাই লক্ষ্য থেকে থাকে, তা হলে মান্থলি ইনকাম প্ল্যান বা ইনকাম ফান্ডে বিনিয়োগের সুপারিশ করেন ফান্ড ম্যানেজাররা। এতে ঝুঁকি ও লাভের অঙ্ক সাধারণত মাঝারি হয়।
তবে এখানেই শেষ নয়, মিউচুয়াল ফান্ডেরও বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে। প্রযুক্তি, ব্যাঙ্কিং, কৃষি, এফএমসিজি সেক্টরেও আলাদা আলাদা মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। আবার কর সাশ্রয়ী কিছু মিউচুয়াল ফান্ডও রয়েছে। কেউ কর বাঁচাতে চাইলে ওই ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। তাই বিনিয়োগের আগে উদ্দেশ্য মাথায় রেখে ফান্ড ম্যানেজারদের পরামর্শ নিয়েই ফান্ড বাছাই করা উচিত। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, সঠিক স্কিম বেছে নিতে পারলেই কিন্তু বিনিয়োগের যুদ্ধ অর্ধেকটা জিতে ফেলা সম্ভব!
বিনিয়োগের জন্য স্কিম নির্ধারণের পর এএমসি (AMC) থেকে সেই নির্দিষ্ট স্কিমটি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যে চোখ বুলিয়ে নেওয়া উচিত। এএমসি-তে ওই স্কিমের ট্র্যাক রেকর্ড, সেটা কতটা সঠিক, তার পোর্টফোলিও ইত্যাদি সম্পর্কে বিশদে জেনে নিতে হবে। এর পরে সিদ্ধান্ত নেওয়াই ভালো। কী ভাবে বিনিয়োগ করতে হবে? কেউ চাইলে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা এসআইপি (SIP) করতে পারেন। না হলে বড় অঙ্কের থোক টাকাও একসঙ্গে বিনিয়োগ করা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মার্কেট স্টেডি থাকলে একসঙ্গে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যথায়, প্রতি মাসে নির্দিষ্ট টাকার এসআইপি (SIP) করা যায়।
বিনিয়োগের আগে স্কিম ফ্যাক্টশিট (Scheme Factsheets) এবং কী-ইনফরমেশন মেমোরান্ডাম (Key Information Memorandum)-- নথি দু’টি বিনিয়োগকারীকে ভালো করে বুঝে নিতে হবে। যদি এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের প্রয়োজন হয়, স্কিম ইনফরমেশন ডকুমেন্ট (Scheme Information Document) দেখে নিতে হবে। আর এই সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য প্রত্যেক মিউচুয়াল ফান্ড ওয়েবসাইটেই পাওয়া যায়। এই সব ভালো করে দেখে-বুঝে তবেই বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।