ফিনএজ অ্যাডভাইজারির ডিরেক্টর এবং বিজনেস হেড অনিরুদ্ধ বসু বলছেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতায়, নিজের বিয়ের জন্য সঞ্চয় করার প্রবণতা নেই বললেই চলে। বরং তাঁদের লক্ষ্য থাকে নতুন বাড়ি করা বা গাড়ি কেনার দিকেই। এ দেশে পিতামাতাই সন্তানের বিয়ের যাবতীয় খরচ বহন করেন। প্রাচীনকাল থেকেই এই রীতি চলে আসছে’। এখন কেউ অল্প দিন চাকরি পেয়েছেন এবং খুব শীঘ্রই বিয়ের পরিকল্পনা করছেন, তাহলে বাবা-মায়ের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করে সঞ্চয়ের একটা অংশ নিজের বিয়েতে খরচ করা উচিত। এখন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে নিজের বিয়ের জন্য তহবিল তৈরি করতে হয়!
advertisement
আরও পড়ুন: শুধু নির্মলা একা নন, বাজেট তৈরির নেপথ্যে রয়েছেন যে ৮ জন, চিনে নিন
বিয়ের জন্য কয়েক বছর বাকি: ধরা যাক কেউ সদ্য চাকরি পেয়েছেন বা ব্যবসা শুরু করেছেন। এখন তিনি বিয়ের কথা ভাবছেন। মোটামুটি ৫ বছরের মধ্যে বিয়ে করতে চান। এই পরিস্থিতিতে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সার্টিফায়েড ফিনান্সিয়াল প্ল্যানার পঙ্কজ মালাডের পরামর্শ, ‘যাঁরা ৫ বছরের মধ্যে বিয়ে করবেন ভাবছেন তাঁরা মাসিক ইনকাম প্ল্যান বা এমআইপি-তে বিনিয়োগ করতে পারেন। এই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডে ইক্যুইটি এক্সপোজার ২৫ শতাংশ। খুব বেশি ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই। আর যাঁদের হাতে ৫ বছরের বেশি সময় আছে তাঁরা কনজারভেটিভ ব্যালান্সড ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন’। এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান শুরু করা যায়। প্রতি মাসে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে নেওয়া হবে। তবে বেশি ঝুঁকি নিতে চাইলে ব্যালান্সড ফান্ডে বিনিয়োগ করা যায়। ব্লু চিপ এমনকী মিড ক্যাপ ইকুইটি ফান্ডের মতো আক্রমণাত্মক বিকল্পও বেছে নেওয়া যায়।
আরও পড়ুন: বিরাট আশা MSME সেক্টরের! বাজেটে কি চমক দেবেন নির্মলা
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ইক্যুইটি এমএফ, ইউনিট-লিঙ্কড ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (ইউলিপ) বাবা-মা বিনিয়োগ করেছে কি না খোঁজ নেওয়া দরকার। যদি সেগুলো মার্কেট লিঙ্কড হয়, ইক্যুইটি এক্সপোজার চালিয়ে না যাওয়াই ভাল। বরং ইক্যুইটি লিঙ্কড ফান্ডগুলোকে কম উদ্বায়ী ঋণ সম্পদে স্থানান্তর করা শুরু করা দরকার। যদি মা-বাবা ব্যক্তির নামে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট খুলে থাকেন, তাহলে সেটা চালিয়ে যাওয়া যায় এবং শেষ অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।
বিয়ের ঠিক আগে: বিয়ের আগে দেখে নিতে হবে যেন কোনও ধরনের ঋণ বকেয়া না থাকে। সে পার্সোনাল লোন হোক কিংবা ক্রেডিট কার্ড। সব ধরনের ঋণ পরিশোধ করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসা ভাল। আর বিয়ের জন্য পার্সোনাল লোন নেওয়ার ভাবনা নৈব নৈব চ। হাতে সময় থাকলে আগাম সঞ্চয় পরিকল্পনা নিতে হবে। কোনও এডুকেশনাল লোন থাকলে শোধ করতে হবে তাও।
কাগজপত্র: বিয়ের পর মহিলাদের পদবি বদলে যাবে। এটায় সময় লাগে। তাই আগাম প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য বিনিয়োগের কাগজপত্রে কেওয়াইসি আপডেট করতে হবে। বদলাতে হবে ঠিকানাও। মসৃণ স্থানান্তরের জন্য, সমস্ত মূল নথির রেকর্ড এক জায়গায় রাখা অপরিহার্য৷ বিয়ের সার্টিফিকেট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা: বিয়ের পর ব্যাক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই থাকবে না কি যৌথ অ্যাকাউন্ট খোলা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। মহিলাদের বিয়ের প্রথম কয়েক বছর বিদ্যমান অ্যাকাউন্টই চালিয়ে যাওয়া উচিত। ইদানীং দুটি পৃথক অ্যাকাউন্ট খুলছেন অনেকেই। চাকরিজীবীরা পৃথক অ্যাকাউন্ট খুলতেই পারেন। তবে নমিনি ঠিক করে রাখতে হবে এবং অ্যাকাউন্ট স্বামী, স্ত্রী যৌথভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারলে সবচেয়ে ভাল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে ভাল ব্যবস্থা হল, ‘আমার, তোমার এবং আমাদের’ অ্যাকাউন্ট। অর্থাৎ তিনটি। এর সঙ্গে খরচের জন্য পৃথক অ্যাকাউন্ট।
টাকা কথা বলে: সম্ভব হলে বিয়েতে মোট কত খরচ হতে পারে সেই নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। কারণ এটা ‘বিশুদ্ধ খরচ’। শুধু তাই নয়, এই খরচের কারণে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলো কয়েক বছর পিছিয়ে যেতে পারে। তাই কোনটা অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়বে, সেই নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা প্রয়োজন।