একটি অনলাইন সমীক্ষা করা হয়েছিল কয়েক জনের উপর। তাতে দেখা গিয়েছে যে, পাঁচ জনের মধ্যে দুই জন (৩৭ শতাংশ) উত্তরদাতার মিউচুয়াল ফান্ডের ডিরেক্ট প্ল্যানের বিষয়ে কোনও ধারণাই নেই। আবার পাঁচ জনের মধ্যে এক জন (২১ শতাংশ) উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন যে, ইক্যুইটি ফান্ডে করা বিনিয়োগকে ঝুঁকিমুক্ত করে এসআইপি (SIP)। আর তিন জনের মধ্যে দুজন (৬৪.৭ শতাংশ) উত্তরদাতা জানেনই না যে, ফিক্সড ডিপোজিট এবং রেকারিং ডিপোজিটের সুদ সম্পূর্ণ রূপে করযোগ্য। আর আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এই আয়ের উল্লেখ না-করলে অথবা এর উপর বরাদ্দ করকে উপেক্ষা করলে ট্যাক্স নোটিস আসতে পারে। অনলাইন ওই সমীক্ষায় উত্তরদাতা ছিলেন ৮৬৫ জন। তাঁদের মধ্যে ৯১ শতাংশই ছিলেন পুরুষ এবং ৬৮ শতাংশ উত্তরদাতার বয়স ৪০-এর কম ছিল।
advertisement
প্রথম স্তরের আর্থিক বা অর্থসংক্রান্ত বিষয়ক সাক্ষরতা হল অর্থের বিষয়ের প্রাথমিক জ্ঞান। যেহেতু সমস্ত উত্তরদাতাই স্নাতক ডিগ্রিধারী ছিলেন, তাই ধরে নেওয়া হয়েছে যে, তাঁরা সকলেই প্রাথমিক স্তরে শিক্ষিত। দ্বিতীয় স্তরে, আর্থিক বিষয়ক জ্ঞানের অর্থ হল, এক জন ব্যক্তি আর্থিক লাভের জন্য তাঁর কাছে থাকা তথ্যকে নিজের সঠিক জ্ঞানের মাধ্যমে কীভাবে প্রয়োগ করবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি এক জন ব্যক্তি দুটি আর্থিক পণ্যের তুলনা করে উপযুক্ত পণ্যটিকে বেছে নিতে সক্ষম হন, তখন সেই ব্যক্তিকে আর্থিক বিষয়ে সাক্ষর বলে গণ্য করা হবে।
আরও পড়ুন: সোনার গয়না কিনে কী ভুল করছেন ? অবশ্যই জেনে রাখুন সত্যিটা
এই সমীক্ষাটির মাধ্যমে দ্বিতীয় স্তরের অর্থ সংক্রান্ত সাক্ষরতার গণনা করা হয়েছে। চারটি ব্যাপক ভাবে পরিচিত বিনিয়োগের বিষয়ে কতটা জ্ঞান রয়েছে মানুষের, সেই বিষয়টাই পরখ করে দেখা হয়েছে। এই চারটি বিনিয়োগের মূল জায়গা হল - এনপিএস, মিউচুয়াল ফান্ড, পিপিএফ এবং করমুক্ত বন্ড। তবে ব্যাঙ্ক এফডি বা ব্যাঙ্ক ফিক্সড ডিপোজিট এবং ব্যাঙ্কের রেকারিং ডিপোজিট বা আরডি কীভাবে কাজ করে সেই বিষয়ে বেশির ভাগ শিক্ষিত ভারতীয়ই যথেষ্ট ওয়াকিবহাল জানেন। তাই এই দুটিকে সমীক্ষার তালিকায় রাখা হয়নি। বয়স এবং আয়ের স্তর অনুযায়ী, ধারণা ও জ্ঞান পৃথক হয়ে থাকে। তাই বয়সের দুটি ভাগের উপর এই সমীক্ষা করা হয়েছে। প্রথম ভাগটিতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বয়স ৩০-এর কম। অর্থাৎ যাঁরা নিজেদের কর্মজীবন সবেমাত্র শুরু করেছেন। আবার দ্বিতীয় ভাগটিতে তাঁদের রাখা হয়েছিল, যাঁদের বয়স ৫০-এর বেশি, অর্থাৎ যাঁরা কর্মজীবনে অবসরের কাছাকাছি সময়ে পৌঁছে গিয়েছেন। আসলে একজন বিনিয়োগকারীর আর্থিক পণ্যের প্রয়োজন নির্ভর করে তাঁর আয়ের স্তরের উপর।
মিউচুয়াল ফান্ডের বিষয়ে জ্ঞান বা ধারণা
মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে কম-বেশি প্রায় সকলেই জানেন। তবে ওই সমীক্ষাটিতে ৮.৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে, তাঁরা মিউচুয়াল ফান্ডের বিষয়ে জানেন না। তবে যাঁরা মিউচুয়াল ফান্ডের বিষয়ে জানেন, তাঁদেরও এই বিষয়ে সম্পূর্ণ ও সঠিক জ্ঞান নেই। ল্যাডার৭ ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজরিস (Ladder7 Financial Advisories)-এর প্রতিষ্ঠাতা, সুরেশ সদাগোপন বলেন, “কিছু বিনিয়োগকারীর ধারণা রয়েছে যে, সব মিউচুয়াল ফান্ডই একই রকম হয়। আসলে তাঁরা জানেন না যে, মিউচুয়াল ফান্ডের বিভিন্ন রকম স্কিম হয়, যা আলাদা আলাদা প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে।”
ডিরেক্ট প্ল্যান:
মিউচুয়াল ফান্ডের ডিরেক্ট প্ল্যানগুলি চালু করা হয়েছিল তিন বছরেরও আগে। কিন্তু ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, পাঁচ জনের মধ্যে দুই জন উত্তরদাতা এই বিষয়ে একেবারেই জানেন না। মিউচুয়াল ফান্ডের ডিরেক্ট প্ল্যানগুলির খরচ সাধারণত কম হয়। কারণ এই প্ল্যানগুলি মধ্যস্থতাকারীর সাহায্য ছাড়া সরাসরি বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করা হয়। চার্জের পার্থক্য ইক্যুইটি ফান্ডের ক্ষেত্রে হতে পারে ১০০-১২৫ বেসিস পয়েন্ট এবং ডেট ফান্ডের ক্ষেত্রে হতে পারে ২৫-৫০ বেসিস পয়েন্ট। কম চার্জ হওয়ার কারণে এই ফান্ডগুলি রেগুলার প্ল্যানের তুলনায় বিনিয়োগকারীদের বেশি রিটার্ন দিয়ে থাকে।
উচ্চ রিটার্ন দেয় এমন কিছু স্টকের বিষয়ে ৩৭ শতাংশ শিক্ষিত বিনিয়োগকারী কিছু জানেন না কেন? ইনভেস্টর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও শরদ সিং বলেছেন, “ফান্ড হাউসগুলি ডিরেক্ট প্ল্যান এবং তার থেকে পাওয়া সুযোগ সুবিধাগুলি সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা কিংবা বোঝানোর জন্য বিশেষ কোনও চেষ্টাই করেনি। এমনকী আমি কখনওই ডিরেক্ট প্ল্যানের ক্ষেত্রে একটি বিজ্ঞাপন পর্যন্ত দেখিনি।”
এসআইপি (SIP)-র সুবিধা:
অনেকের মনেই এসআইপি (SIP)-র বিষয়ে একটি বড়সড় ভুল ধারণা রয়েছে। ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, প্রায় ৯১.৮ শতাংশ উত্তরদাতা এসআইপি (SIP)-র শুধু নামটাই শুনেছেন। অথচ এই বিষয়ে বিশেষ কোনও ধারণাই নেই। এটিকা ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের এমডি এবং সিইও গজেন্দ্র কোঠারি বলেছেন, “অনেক বিনিয়োগকারী এসআইপি-কে একটি আলাদা ধরনের বিনিয়োগের পণ্য বলে মনে করেন। তাঁরা জানেন না যে, আসলে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার একটি প্ল্যান হল এসআইপি।”
অনেক বিনিয়োগকারী আবার বিশ্বাস করেন যে, একটি নিশ্চিত সাফল্যের ফর্মুলা হল এসআইপি (SIP)। ২১ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতা বলেছেন যে, ইক্যুইটি ফান্ডে বিনিয়োগকে ঝুঁকিমুক্ত করে এসআইপি। তবে এটা একটি ভুল ধারণা। এসআইপি ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু ঝুঁকি সম্পূর্ণ ভাবে দূর করতে পারে না।
পিপিএফ, এনপিএস এবং ট্যাক্স-ফ্রি বন্ড:
ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, তিন জনের মধ্যে দুই জন উত্তরদাতা পিপিএফ-এ বিনিয়োগ করেন। আর প্রায় ৫.৪ শতাংশ উত্তরদাতা এই পিপিএফ-এর বিষয়ে জানতেন না। শুধু তা-ই নয়, এর পাশাপাশি এনপিএস এবং ট্যাক্স-মুক্ত বন্ডের কী কী সুবিধা রয়েছে, সেই বিষয়েও অনেকেরই কোনও ধারণা নেই। এনপিএস আবার পিপিএফ-এর মতো অতটাও জনপ্রিয় নয়। সরকার থেকে অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও প্রায় ১৩ শতাংশের বেশি শিক্ষিত ভারতীয় এখনও পর্যন্ত এনপিএস সম্পর্কে জানেন না এবং প্রায় ৬১ শতাংশেরও বেশি মানুষ এটিকে নিজেদের জন্য উপযুক্ত বলে গণ্য করেন না। আবার সমীক্ষাটি বলছে, প্রায় ২২ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতা কর-মুক্ত বন্ড সম্পর্কে জানেন না। 5nance.com-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও দিনেশ রোহিরা বলেছেন, “ বিমা সংস্থা এবং ফান্ড হাউসগুলি নিজেদের পণ্য সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুললেও এনপিএস (NPS) এবং কর-মুক্ত বন্ডগুলি এই দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েছে।”
চক্রবৃদ্ধি সুদ:
ওই সমীক্ষাটিতে আবার দেখা গিয়েছে যে, পাঁচ জনের মধ্যে দুই জন উত্তরদাতা চক্রবৃদ্ধি সুদের বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না। অথচ আদতে চক্রবৃদ্ধির প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে থেকে আয়ের মূল্যায়ন করার জন্য অবশ্যই এই বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রাথমিক জ্ঞান থাকা উচিত। তবুও, পাঁচ জনের মধ্যে দুই জন উত্তরদাতা জানেন না যে, চক্রবৃদ্ধি কী ভাবে কাজ করে। ধরা যাক, একটি ব্যাঙ্ক ১০ বছরের আমানতের উপর প্রায় ৮ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ প্রদান করে থাকে। এ বার কোনও বিনিয়োগকারী সেই ব্যাঙ্কে ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলেন। আর ১০ বছর পরে সেই ১ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ বেড়ে বিনিয়োগকারীর হাতে আসবে প্রায় ২.২ লক্ষ টাকা।
আরও পড়ুন: চাকরিজীবীদের জন্য সব থেকে বড় খবর আসছে! ৫ নয় মাত্র ১ বছর চাকরিতে গ্র্যাচুইটি
কর সংক্রান্ত নিয়ম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি
বিনিয়োগ পণ্য এবং রিটার্ন গণনা ছাড়াও ট্যাক্স বা কর সংক্রান্ত নিয়মের বিষয়েও বিনিয়োগকারীদের সচেতন হওয়া উচিত। ওই সমীক্ষাটিতে দেখা যাচ্ছে যে, তিন জনের মধ্যে মাত্র এক জন উত্তরদাতা জানেন যে, ফিক্সড এবং রেকারিং ডিপোজিটের সুদ সম্পূর্ণ রূপে করযোগ্য। আবার অনেক বিনিয়োগকারীর ধারণা যে, ফিক্সড ডিপোজিট থেকে সুদের উপর টিডিএস কেটে নেওয়া হয় বলে আর কোনও রকম কর দিতে হবে না। এই প্রসঙ্গে ব্যাঙ্কবাজার (BankBazaar)-এর সিইও আদিল শেট্টি বলেছেন যে, “অনেকেই বুঝতে পারেন না যে, টিডিএস এবং চূড়ান্ত কর - দুটি সম্পূর্ণ রূপে আলাদা বিষয়।”
বৈচিত্রেরও প্রয়োজন রয়েছে:
বিভিন্নতা বা বৈচিত্র একটি পোর্টফোলিওর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ওই সমীক্ষাটিতে যদিও অনেক উত্তরদাতাই বিভিন্নতা বা বৈচিত্রের অর্থ এবং প্রভাব একেবারেই বুঝতে পারেননি। আবার বেশির ভাগ অর্থাৎ প্রায় ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে, বিভিন্নতা ঝুঁকি কমাতে পারবে না। পোর্টফোলিওর বিভিন্নতা বা বৈচিত্রের জন্য প্রায় ১৫-২৫ টি স্টক এবং ৫টি মিউচুয়াল ফান্ড স্কিম যথেষ্ট। সেখানে সমীক্ষায় অধিকাংশ উত্তরদাতা সঠিক বিষয়টা বলতে পারেননি। ৩১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে, পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র আনতে পারে পাঁচটি স্টক। আর বোঝাই যাচ্ছে যে, পাঁচটি স্টক আসলে কখনওই পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র আনতে পারবে না।