বিমান সংস্থার দায়বদ্ধতা থেকে শুরু করে ভ্রমণ বিমা দেওয়া পর্যন্ত – বিমান দুর্ঘটনার পরে কীভাবে ক্ষতিপূরণের হিসাবটা করা হয়, সেটাই জেনে নেওয়া যাক। এটা সকল বিমানযাত্রীদের জেনে নেওয়া উচিত।
বিমান সংস্থার দায়বদ্ধতা: আইনি ভাবে এয়ারলাইনসকে কত টাকা দিতে হবে?
ভারতে, মৃত্যু অথবা আঘাতের ক্ষেত্রে বিমান সংস্থার দায়বদ্ধতা আন্তর্জাতিক কনভেনশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কনভেনশনগুলির মধ্যে অন্যতম হল – ১৯৯৯ সালের মন্ট্রিল কনভেনশন। যার স্বাক্ষরকারী হয়েছে ভারত।
advertisement
এর অধীনে বিমান সংস্থাকে দিতে হবে এই পরিমাণ:
১. মৃত্যু বা শারীরিক আঘাতের ক্ষেত্রে, ত্রুটি নির্বিশেষে, প্রত্যেক যাত্রীর জন্য ১২৮,৮২১টি স্পেশ্যাল ড্রয়িং রাইটস (SDR) (প্রায় ১.৫৫ কোটি টাকা) পর্যন্ত।
২. যদি বিমান সংস্থাটির গাফিলতি প্রমাণিত হয়, তাহলে সেই সীমার উর্ধ্বে গিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়াও সম্ভব।
আন্তর্জাতিক উড়ানের জন্য কনভেনশনের আওতায় এই ক্ষতিপূরণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু ভারতীয় দেশীয় বিমানসংস্থাগুলি ডিজিসিএ নির্দেশিকার অধীনে হামেশাই এই নিয়ম অনুসরণ করে থাকে।
যদিও যাত্রী যে পরিমাণটা পান, তা একাধিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। সাধারণত দাবিদারদের (মৃত অথবা আহত ব্যক্তির পরিবার) আসল ক্ষতির খতিয়ান দিতে হবে। মৃত যাত্রীর বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মসংস্থান, শেষে কত বেতন পেতেন, বৈবাহিক সম্পর্ক, সাধারণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, তাঁর উপর কত জন নির্ভরশীল – এই ধরনের বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে ক্ষতির মূল্যায়ন করার জন্য বিবেচনা করা হয়।
আরও পড়ুন: ২৫ বছরে ১০,০০০ টাকার মাসিক SIP ১.৬ কোটি টাকারও বেশি বেড়েছে
ট্র্যাভেল ইনস্যুরেন্সের ভূমিকা: কীভাবে তা যাত্রী ও তাঁদের পরিবারকে সাহায্য করে
ট্র্যাভেল ইনস্যুরেন্স একটি অতিরিক্ত ফিনান্সিয়াল কুশন প্রদান করে। বিশেষ করে নিম্নলিখিত পরিস্থিতির ক্ষেত্রে:
১. দুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং অক্ষমতা
২. মেডিক্যাল ইভাকুয়েশন
৩. জরুরিকালীন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি
৪. উড়ানে দেরি কিংবা বাতিল
৫. মালপত্র হারিয়ে যাওয়া
বহু কমপ্রিহেনসিভ ট্র্যাভেল ইনস্যুরেন্স পলিসি যা যা প্রদান করে:
১. অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ কভারেজে ২৫ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা
২. স্থায়ী অক্ষমতার জন্য ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা।
৩. হাসপাতালে ভর্তি অথবা ভ্রমণে অসুবিধার জন্য ফিক্সড ডেলি পে-আউট।
যদিও এই বেনিফিট শুধুমাত্র সেই সব পলিসিহোল্ডাররা পেয়ে থাকেন, যাঁরা বিমান যাত্রার আগে ভ্রমণ বিমা পরিকল্পনার বিকল্প বেছে নেন অথবা কেনেন। বহু ভারতীয় বিমানযাত্রী এই বিকল্প এড়িয়ে যান, বিশেষ করে ডোমেস্টিক উড়ানের ক্ষেত্রে তো বটেই!
যদি একজন ভ্রমণকারী ভ্রমণ বিমা না নেন, তাহলে কী হবে?
যদি কোনও ভ্রমণকারী ভিন্ন ভ্রমণ বিমা না নেন, তাহলে তিনি নিম্নলিখিত কিছু ক্ষেত্রে যোগ্য হতে পারেন:
১. বিমান সংস্থার ক্ষতিপূরণ (নির্দিষ্ট)
২. সরকারি এক্স-গ্রাশিয়া (বিরল কিছু ক্ষেত্রে)
৩. কর্মচারীদের বিমা (ব্যবসায়িক কাজে ভ্রমণকারীদের জন্য)
৪. ক্রেডিট-কার্ড লিঙ্কড ট্র্যাভেল ইনস্যুরেন্স (যদি নির্দিষ্ট প্রিমিয়াম ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বুক করা হয়)
কিছু যাত্রী ট্যুর অপারেটর বা নিয়োগকর্তা দ্বারা স্পনসর করা ভ্রমণ নীতি দ্বারা প্রদত্ত গ্রুপ বিমা পরিকল্পনার আওতায় পড়ে।
আইনি যুদ্ধ: যখন ক্ষতিপূরণ সহজবোধ্য নয়।
অতীতের বেশ কয়েকটি ঘটনায় দুর্ঘটনার শিকার পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণের জন্য মাসের পর মাস এমনকী বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, বিশেষ করে যখন:
১. বিমান দুর্ঘটনা তদন্তের অধীনে রয়েছে
২. দায়বদ্ধতা নিয়ে বিতর্ক চলছে
৩. যাত্রীর কোনও ভ্রমণ বিমা বা নমিনি সংক্রান্ত বিবরণ ছিল না।
এই ধরনের ক্ষেত্রে পরিবারগুলিকে কনজিউমার কোর্ট, সিভিল কোর্ট, অথবা গ্রিভ্যান্স ডিড্রেসাল বডির মতো অভিযোগ প্রতিকার সংস্থার কাছে যেতে হতে পারে।
আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনা: ইনস্যুরেন্স কেন আলোচনা-সাপেক্ষ নয়
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনা এটা মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, বিমান ভ্রমণ, যদিও পরিসংখ্যানগত ভাবে নিরাপদ, তবে একেবারেই ঝুঁকিমুক্ত নয়। পরিবারগুলির উপর আর্থিক এবং মানসিক প্রভাব ধ্বংসাত্মক হতে পারে। বিমা অন্তত কিছুটা হলেও সেই বোঝা লাঘব করতে পারে,।
প্রত্যেক ভ্রমণকারীর কী কী করা উচিত:
১. ট্র্যাভেল ইনস্যুরেন্স নিয়ে রাখতে হবে — এমনকী দেশীয় উড়ানের জন্যও
২. স্পষ্ট ভাবে নমিনির বিবরণ দেওয়া আবশ্যক
৩. দুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং মেডিক্যাল কভার-সহ পলিসি নিতে হবে।
৪. পলিসি নথির ডিজিটাল এবং প্রিন্টেড কপি সঙ্গে রাখতে হবে।