অনেকেই ছোটখাটো ব্যবসা নিজের মতো করে তৈরি করার কথা ভাবেন। কিন্তু ঠিক কোথা থেকে শুরু করা উচিত, কীসের ব্যবসা করা যায়, তাই ভেবে উঠতে পারেন না।
আরও পড়ুন: বন্দে ভারত থেকে বুলেট ট্রেন; রেল বাজেট ২০২৩-এ কী কী ঘোষণা করতে পারেন অর্থমন্ত্রী
সমস্যা হল এই ভাবনাটা কিন্তু কেউ ভেবে দিতে পারবেন না। ভাবতে হবে তাঁকেই যিনি ব্যবসাটা শুরু করতে চান। কারণ ব্যবসা শুরু করার সঙ্গে অবশ্যই জড়িয়ে রয়েছে তাঁর সাধ্য। তা সে কায়িক পরিশ্রমের সাধ্য হোক বা মূলধনের।
advertisement
১. একটি সমস্যা খুলে দিতে পারে পথ—
স্টার্ট-আপ পরিকল্পনার বিষয়ে আকাশ পাতাল ভেবে কোনও সমাধান নাও হতে পারে। অন্যেরা যে ভাবে সফল হয়েছেন সেই পথে হাঁটতে চাইলে মৌলিকতা নষ্ট হতে পারে। তার চেয়ে এমন কিছু সমস্যার কথা ভাবা যেতে পারে, যার সমাধান করা খুব জরুরি। নিজের জীবনের কথাই ভাবা যেতে পারে।
যেমন ধরা যাক নিক হুজারের কথা। তাঁর বাড়িতে এত্ত জিনিসপত্র জমে ছিল যে ছোট্ট বাচ্চাটি হামা দেওয়ার জায়গা পেত না। এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়েই নিক বানিয়ে ফেলেছিলেন ‘অফারআপ’ অ্যাপটি।
আরও পড়ুন: সপ্তাহের শুরুতে কিছুটা হলেও স্বস্তি,সোনা-রুপোর দামে সুখবর! কততে এসে ঠেকল বাজারদর
একই ভাবে ডেভিড গ্রিনফেল্ড ভুগছিলেন ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সে, এ দিকে মিষ্টির প্রতি তাঁর প্রবল আসক্তি। কী করা যায় ভাবতে ভাবতেই তিনি এমন সমাধান পেলেন যে তা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইলেই। তাই জন্ম হল ‘ড্রিমপপস’ উদ্ভিজ আইসক্রিমের।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ছড়িয়ে থাকা কিছু সমস্যার সমাধান করতে চাওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে ব্যবসার ছক। সে ক্ষেত্রে ভাবতে হবে—
কোন কোন বিষয়গুলি আমাকে গভীর ভাবে ভাবাচ্ছে?
এবং
অতীতে আমি কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি যেগুলির সমাধানও আমিই করেছি?
এবার ব্যবসা বৃদ্ধি করতে চাইলে বা সাফল্য পেতে চাইলে লক্ষ্য রাখতে হবে কয়েকটি বিষয়ের উপর—
ক. এমন কোনও সমস্যা যা কোনও একক মানুষকে নয়, বরং কোনও বিশেষ গোষ্ঠীকে প্রভাবিত করছে।
খ. একটি বাজার যা বছরে ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গ. এমন সমস্যা যার আশু সমাধান প্রয়োজন।
ঘ. এমন সমস্যা যা মানুষকে নিয়মিত প্রভাবিত করে থাকে।
২. সমাধানের চেষ্টা—
একবার কোনও জোরাল সমস্যা চিহ্নিত করা হয়ে গেলে তা সমাধানের বিষয়ে আগ্রহ জন্মাবেই। ফলে এবার ভাবতে হবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় কী ভাবে। সে ক্ষেত্রে একবার যা ইতিমধ্যেই রয়েছে তার দিকে তাকিয়ে দেখে নিতে হবে।
সে ক্ষেত্রে তিনটি জিনিসের কথা ভাবতে হবে—
ক. বর্তমানে কোন পণ্য বা পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে?
খ. সেই অনুযায়ী বাজারে কি কোনও খামতি থাকছে যা পূরণ করা সম্ভব?
গ. ইতিমধ্যেই যে সব সমাধান বাজারে রয়েছে তাতে কি আরও উন্নতি করা সম্ভব?
৩. নিজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার বিচার—
যে কোনও ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা এবং অতীত অভিজ্ঞতা হল সব থেকে মূল্যবান সম্পদ।
ঠিক কোন কাজটি করার ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা প্রশ্নাতীত তা ভেবে ফেলতে হবে। তারপর ভাবতে হবে যে সমস্যাটির কথা ভাবা হয়েছে, তা সমাধান করতে নিজের এই অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতাকে কী ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। রাম শ্যাম যদু মধুর থেকে খানিকটা বেশি সুবিধা যেন নিজের কাছে থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. সম্ভাব্য গ্রাহকদের থেকে নেওয়া প্রতিক্রিয়া—
যাঁরা ভবিষ্যতে গ্রহীতা বা ক্রেতা হতে পারেন, তাঁদের মতামত জেনে নেওয়া খুব জরুরি কোনও ব্যবসায় হাত দেওয়ার আগে।
তাই সম্ভাব্য গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে প্রচলিত বা মূল্যায়ননির্ধারণ মূলক প্রশ্ন সরাসরি না করাই ভাল। পরিবর্তে, কিছু কৌশল গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন গ্রাহকের অতীত ও বর্তমান কাজকর্ম, আচরণ এবং প্রয়োজন সম্পর্কে তথ্য জেনে নেওয়া যেতে পারে।
সরাসরি কারও মতামত জানতে চাওয়ার থেকে ভাল তাঁরা আসলে কী করেন এবং কেন করেন তা বোঝার চেষ্টা করা। তবে এমন ভাবেই প্রশ্ন করতে হবে যাতে বিপরীত দিক থেকে হ্যাঁ বা না উত্তর না আসে। তাতে প্রয়োজনীয় তথ্য নাও পাওয়া যেতে পারে। সব উত্তর লিখে রাখাই ভাল। যাতে ভবিষ্যতে তা কাজে লাগানো যায়।
৫. পরিকল্পনা বদলের ক্ষমতা—
যে কোনও সময় নিজের পরিকল্পনা বদলে ফেলার মতো নমনীয়তা রাখতে হবে। অনেক সময়ই এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এমনকী বিশ্বের সেরা স্টার্ট-আপগুলিকেও কখনও পরিমার্জিত বা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত করার প্রয়োজন হতে পারে। কারণ, যত দিন যাবে ততই বাজার সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। কোনও পরিকল্পনা কাজ না করলে দ্বিতীয়টির কথা ভাবতে হবে।