এই ধরনের লোকেরা কোনও জরুরি তহবিল রাখে না এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ব্যয়ও করে। সাধারণত তারা চিন্তা না করে ঋণ নেয়, যার কারণে তারা ধীরে ধীরে ঋণের ফাঁদে আটকে পড়ে, যা মানসিক চাপের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ধরনের লোকেরা মনে করে যে আয় বা বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চয় করা সহজ হয়ে যাবে, কিন্তু বাস্তবে তা ঘটে না। প্রতি মাসের বেতন কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায় এবং তারপরে একই উদ্বেগ দেখা দেয় যে কীভাবে ব্যয় পরিচালনা করবেন এবং কীভাবে সঞ্চয় করবেন।
advertisement
বেতন বৃদ্ধির পরেও কেন সঞ্চয় সম্ভব হয় না –
আসলে, যখন আমাদের বেতন বৃদ্ধি পায়, তখন আমাদের খরচও একই অনুপাতে বৃদ্ধি পায়। যদিও পুরনো বাজেট আমাদের খরচের জন্য যথেষ্ট ছিল, তবুও আমরা নতুন খরচকে চাহিদা বলি। যেখানে বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চাহিদা নয়, বরং অভ্যাস এবং আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তন ঘটে। আমরা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা না ভেবেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খরচ করতে শুরু করি। যদি আমরা আমাদের খরচের ধরণ পরিবর্তন না করি, তাহলে আমাদের আয় বা বেতন যতই হোক না কেন, আমরা সমস্যায় থাকব।
আরও পড়ুন: এই সরকারি স্কিমগুলিতে ফিক্সড ডিপোজিটের থেকে মিলবে অনেক বেশি রিটার্ন ! হিসেব দেখে নিন
বেতন বৃদ্ধির পরে আমাদের খরচ কেন বাড়ে –
যদি কেউ সতর্ক না থাকে, তাহলে বেতন বৃদ্ধির পরে খরচ বাড়বে স্বাভাবিক। একে ‘জীবনযাত্রার মুদ্রাস্ফীতি’ বলা হয়। যখন মানুষের আয় বাড়ে, তখন তারা মনে করে যে এখন তারা আগের চেয়ে ভাল জিনিস কিনতে পারবে। যেমন দামি ফোন, বাইরে খাওয়া, বিলাসবহুল পোশাক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এই অভ্যাসগুলি আমাদের কাছে প্রয়োজন বলে মনে হতে শুরু করে এবং খরচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যদি সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে না ওঠে, তাহলে আর্থিকভাবে একই অবস্থা থেকে যায়।
রাশিয়ার থেকে অপরিশোধিত তেল কেনায় ৫০ শতাংশ শুল্ক, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ভারতের অর্থনীতিকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?
খরচ নিয়ন্ত্রণের জন্য কী করা উচিত –
খরচ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমে প্রতি মাসে একটি বাজেট তৈরি করা প্রয়োজন অর্থাৎ বুঝতে হবে কত আয় আছে এবং কোথায় ব্যয় করা হচ্ছে। এর পরে, তালিকার অপচয়মূলক জিনিসগুলি চিহ্নিত করতে হবে এবং ধীরে ধীরে সেগুলি বাদ দিতে হবে। যেমন বার বার বাইরে খাওয়া, অপ্রয়োজনীয় সাবস্ক্রিপশন বা কেনাকাটা। খরচ ট্র্যাক করার জন্য মোবাইল অ্যাপ বা ডায়েরিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সঞ্চয় এবং ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কি কোনও সূত্র আছে –
৫০:৩০:২০ সূত্র হল বিজ্ঞতার সঙ্গে অর্থ ব্যয় করার একটি সহজ উপায়। এতে, নিজেদের মাসিক আয়কে তিনটি ভাগে ভাগ করতে হবে। প্রথমে প্রয়োজনীয় ব্যয়ের জন্য ৫০% অংশ রাখতে হবে, যেমন ভাড়া পরিশোধ করা, রেশন কেনা, বাচ্চাদের ফি, বিদ্যুৎ-জলের বিল ইত্যাদি।
এর পরে ৩০% অংশ নিজের ইচ্ছার জন্য রাখা যায়। যেমন সিনেমা দেখা, বাইরে খাওয়া, কেনাকাটা করা বা বেড়াতে যাওয়া। বাকি ২০% টাকা সঞ্চয় বা বিনিয়োগে বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে অর্থের সমস্যা না হয়। এই সূত্রটি ব্যবহার করে, অপ্রয়োজনীয় খরচ না করে চাহিদা এবং শখ উভয়ের ভারসাম্য বজায় রাখা যেতে পারে, পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ভারতের ৭টি প্রধান সোনার খনি কোথায় আছে ? জেনে নিন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
কীভাবে সঞ্চয় শুরু করা যাবে –
অল্প পরিমাণ অর্থ দিয়েও সঞ্চয় শুরু করা যেতে পারে। সবচেয়ে ভাল উপায় হল বেতন আসার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে সঞ্চয় বের করা, এবং বাকি টাকা শেষে সঞ্চয়ে না রাখা। ১০০০-২০০০ টাকা দিয়ে SIP শুরু করা যেতে পারে অথবা PPF এবং FD এর মতো নিরাপদ বিকল্পগুলি বেছে নেওয়া যেতে পারে।
বিবাহিতদের জন্য কীভাবে সঞ্চয় পরিকল্পনা তৈরি করা যেতে পারে –
বিয়ের পরে, সঞ্চয়ের দায়িত্ব উভয় অংশীদারের উপর বর্তায় এবং এর জন্য পারস্পরিক বোঝাপড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, দুজনেরই আয় এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। প্রতি মাসে একসঙ্গে বসে বাজেট তৈরি করতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। একসঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সঞ্চয় লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। যেমন প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা সঞ্চয়ের লক্ষ্য। বাচ্চাদের শিক্ষা, জরুরি তহবিল এবং অবসর গ্রহণের মতো বড় আর্থিক লক্ষ্যের জন্য পৃথক সঞ্চয় পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। নিজেদের মধ্যে খরচও ভাগ করে নিতে হবে।
যদি দুজনেই চাকরিজীবী বা উপার্জনকারী হয়, তাহলে খরচ আলাদাভাবে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন সঙ্গী EMI প্রদান করে, তাহলে অন্যজন মুদিখানা বা অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে পারে। SIP, PPF বা FD এর মতো দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ একসঙ্গে শুরু করা যেতে পারে। স্বচ্ছতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে স্বামী/স্ত্রী কেবল খরচের দায়িত্ব নিতে পারে না, বরং একটি শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তিও তৈরি করতে পারে।