এ ক্ষেত্রে বোধহয় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল একটি আর্থিক পরিকল্পনা থাকা। এটি জীবনে সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এই আর্থিক পরিকল্পনার মধ্যে আয়, ব্যয়, সঞ্চয়, এবং বিনিয়োগের খাত নির্ধারণ করার বিষয়টি জড়িত থাকে। তার ফলে লক্ষ্যে পৌঁছনো সহজ হয়।
আরও পড়ুন: নোনতা খাবার বেচে কোটিপতি! হলদিরাম ভাইয়েদের গল্প অবাক করবে আপনাকেও!
advertisement
নিজের আর্থিক লক্ষ্য তৈরি করার আদর্শ সময় হতে পারে এই নতুন বছর। কিন্তু সেই পরিকল্পনা অবশ্যই সঠিক হওয়া দরকার। ভুল হলে বিপদ আরও বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: ইন্টারনেট ছাড়াও UPI ট্রানজাকশন? UPI 123-পে কী ভাবে ব্যবহার করতে হয় জানেন তো?
কোন কোন ভুলের ফলে বাড়তে পারে বিপদ, দেখে নেওয়া যাক এক নজরে—
১. উদ্দেশ্যহীন বিনিয়োগ:
স্থির উদ্দেশ্যের কথা মাথায় না রেখে বিনিয়োগ করা খুব সমস্যাজনক হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শুধু মাত্র কর ছাড় বা অধিক রিটার্নের আশায় বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু বিনিয়োগ করার সময়, বিনিয়োগের উদ্দেশ্যের কথা মাথায় রাখতে হবে।
২. ক্রেডিট রিপোর্টে নজরদারি না করা:
বেশির ভাগ মানুষই ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের দিকে তাকান না। দীর্ঘদিন পর্যন্ত তাঁরা ক্রেডিট স্কোর পরীক্ষা করে দেখেন না। অনেক সচেতন মানুষও এমনই করে যান। কিন্তু ক্রেডিট রিপোর্ট নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। তা হলেই বোঝা যাবে গত বছরের তুলনায় ক্রেডিট স্কোর কতটা বেড়েছে বা কমেছে।
৩. ঋণ পরিশোধের দেরি:
ক্রেডিট কার্ড বা ইএমআই-এর ক্ষেত্রে নির্ধারিত তারিখে পেমেন্ট করতে না পারলে ক্রেডিট স্কোরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। এতে নিজের ঋণযোগ্যতা প্রভাবিত হয়। ভবিষ্যতে ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে। এই দিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
৪. একাধিক ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার:
ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে একাধিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা এড়িয়ে চলতে হবে। একাধিক ক্রেডিট কার্ড পরিচালনা করা কঠিন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, যদি কেউ খুব অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক কার্ডের জন্য আবেদন করে থাকেন তা হলেও তাঁর ক্রেডিট স্কোর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৫. ঋণ, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের ভারসাম্যহীনতা:
অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যে অর্থ প্রদান করা দরকার তা ধাপে ধাপে দিয়ে ফেলতে হবে। যদি গুরুত্বপূর্ণ কোনও ঋণ পরিশোধ করার প্রয়োজন হয় তবে সঞ্চয়ে খাতে কম টাকা রাখাই ভাল। উদ্বৃত্ত তহবিল থাকলে তা বিনিয়োগের কথা ভাবা যেতে পারে। সময় মতো ঋণ পরিশোধ করা খুবই জরুরি।
৬. চক্রবৃদ্ধি হারে অবহেলা:
চক্রবৃদ্ধির শক্তি অর্থ উপার্জনের একটি মৌলিক ধারণা যা অনেকেই উপেক্ষা করে থাকেন। চক্রবৃদ্ধি সুদের ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের সুদের উপর এবং চক্রবৃদ্ধির উপর সুদ আদায় করা যায়। তবে এ সময় টাকা তুলে নিলে হবে না। বিনিয়োগ করা অর্থ প্রাথমিক মূলধন এবং দীর্ঘমেয়াদে সংগৃহীত উপার্জন উভয়েরই রিটার্ন দিতে পারে।
৭. বিমাকে উপেক্ষা:
যে কোনও কার্যকর আর্থিক পরিকল্পনার অংশ হল বিমা। এমনকী আর্থিক সংকটের মধ্যেও নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। জীবন বিমা করার মাধ্যমে, অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে নিজের পরিবার বা আর্থিক ভাবে নির্ভরশীল মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব।
৮. মুদ্রাস্ফীতির হিসাব না করে অবসর গ্রহণের পরিকল্পনা:
বর্তমানে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতিতে অনেকে উদ্বিগ্ন। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সঞ্চিত অর্থ মূল্য হারাতে থাকবে। এ জন্য বাজেট করে খরচ করা প্রয়োজন। কোথায় সামঞ্জস্য রক্ষা করা প্রয়োজন তা নিশ্চিত হতে হবে। তারপর দেখে নিতে হবে অবসর গ্রহণের সময় যথেষ্ট সঞ্চয় থাকছে কি না! এর পরেই অবসরের সময় নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
৯. আপৎকালীন তহবিলে অনীহা:
বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি জরুরি তহবিল থাকা খুবই দরকারি। এটা ঠিক যে সমস্ত দায় গ্রহণের পর মাসিক আয় থেকে আরও একটি অতিরিক্ত কেটে রাখা খুবই সমস্যার বিষয়। কিন্তু আপদে বিপদে যখন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে তখন একটি জরুরি তহবিল জীবন খুবই লাভ দায়ক হতে পারে।
১০. বিনিয়োগের আগে বিশ্লেষণের অভাব:
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বছরের শেষের দিকের মাসগুলিতে, কর-সাশ্রয়ের কারণে বিনিয়োগ করার চাপ তৈরি হয়। সে সময় অতিরিক্ত বিবেচনা করার সময় হয়তো আর হাতে থাকে না। তাই বড় ভুল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই বছরের শুরুতেই একটা পর্যালোচনা করে রাখা ভাল। বছরের শুরুতে বিনিয়োগ করলে একবার বড় অঙ্কের পরিবর্তে অল্প পরিমাণে বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে।