গণ্ডার গণনা ৫ ও ৬ মার্চ দুই দিন ধরে চলবে। সঠিক তথ্য নিশ্চিত করতে পুনরায় সমীক্ষারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে এই গণনার জন্য ৬৫টি নির্দিষ্ট গণনা ব্লক চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে ৬৫টি পর্যবেক্ষণ লাইন ও ১১০টি নির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ পয়েন্ট থাকবে। এর মধ্যে ২১টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ চালানো হবে। গণ্ডার গণনার কাজে ৭০টি প্রশিক্ষিত হাতি মোতায়েন করা হয়েছে, যাদের সাহায্যে গভীর অরণ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে গণ্ডারদের অবস্থান নির্ণয় করা হবে।
advertisement
আরও পড়ুন: স্কুল থেকে বেরিয়ে রাস্তা পেরোনোর সময় ছুটে এল ট্রাক! মৃত্যু ছাত্রীর, পরিবারে হাহাকার
জলদাপাড়ার ডিএফও প্রবীণ কাসওয়ান জানিয়েছেন, এই গণনায় পশ্চিমবঙ্গের ১৩টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (NGO) অংশগ্রহণ করছে, যাদের পক্ষ থেকে ৩৫ জন সদস্য পাঠানো হয়েছে। ৩ ও ৪ মার্চ এই অংশগ্রহণকারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে পারেন।
গণ্ডার গণনা শুধু সংখ্যা নির্ধারণের জন্যই নয়, বরং এটি গণ্ডারের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, লিঙ্গ অনুপাত এবং বয়সভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস বুঝতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, আবাসস্থলের অবস্থা, শিকারি হুমকি ও সংরক্ষণ পরিকল্পনার জন্য তথ্য সংগ্রহ করাও এই গণনার মূল উদ্দেশ্য।
পূর্ববর্তী রেকর্ড অনুযায়ী, জলদাপাড়ায় গণ্ডারের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ১৯৮৫ সালে যেখানে মাত্র ১৪টি গণ্ডার ছিল, সেখানে ২০২২ সালের গণনায় সংখ্যা বেড়ে ২৯২-এ পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধির হার আশাব্যঞ্জক, তবে নতুন করে আবাসস্থল সংরক্ষণ এবং শিকারিদের হুমকি রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন।
জলদাপাড়ার গণ্ডার দর্শনের জন্য প্রতি বছর ১ লাখেরও বেশি পর্যটক আসেন, যা এটিকে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় বন্যপ্রাণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। গণ্ডার সাফারি স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে, যা আশপাশের ৫৩টি গ্রাম ও কাছাকাছি শহরগুলোর মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়।
গণ্ডার সংরক্ষণে সফলতার ফলে জলদাপাড়া আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি ভারত সরকারের “প্রজেক্ট রাইনো”-র আওতায় সফল সংরক্ষণ প্রচেষ্টার অন্যতম উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
গণ্ডার গণনা সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। বন দপ্তরের আধিকারিক, বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে গঠিত দল এই গণনার দায়িত্ব পালন করছে।
আজ ভোর থেকেই মোট ১৯৩টি দল, প্রায় ৪০০ জন সদস্য একযোগে জলদাপাড়ায় গণ্ডার গণনার কাজ শুরু করেছে। মাঠ পর্যবেক্ষণ থেকে শুরু করে সমস্ত তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই গণনার মাধ্যমে পাওয়া তথ্য ভবিষ্যতে জলদাপাড়ায় গণ্ডার সংরক্ষণ ও তাদের আবাসস্থল উন্নয়নের পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষজ্ঞদের আশা, এই উদ্যোগ জলদাপাড়ার গণ্ডার সংরক্ষণ প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং এই মহামূল্যবান প্রাণীর সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।