Akash Deep: বাবা চাইতেন না ছেলে ক্রিকেট খেলুক, তিন বছর ছুঁয়েও দেখেনি ব্যাট-বল! বাংলায় আসতেই খুলে যায় আকাশ দীপের কপাল
- Published by:Satabdi Adhikary
- news18 bangla
Last Updated:
২০২৪ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি রাঁচীতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় তাঁর এবং প্রথম ম্যাচেই উইকেট নিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি। কিন্তু আসল স্বীকৃতি আসে ২০২৫ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এজবাস্টন টেস্টে ১০ উইকেট নেওয়ার পরে। ৪৯ বছর পর, কোনও ভারতীয় বোলার এই কীর্তি গড়ে ইতিহাস তৈরি করেছেন সেখানে। ম্যাচের পর, আকাশ তাঁর পারফরম্যান্স ক্যান্সারের সাথে লড়াই করা তার বোনকে উৎসর্গ করেন। সেই মুহূর্তে সবাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ইতিহাস তৈরি করেছে এজবাস্টনে৷ কেউ কি সত্যিই ভাবতে পেরেছিল তরুণ ভারতীয় পেসার বাংলার আকাশ দীপ ইংল্যান্ডের মাঠে প্রথমবার টেস্ট খেলতে নেমেই নিয়ে নেবে ১০-১০টা উইকেট? ম্যাচের শেষের সুপার হিরো তাই সেই আকাশ দীপই৷ আর তার পর থেকেই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীর মনে বুদবুদের মতো বারবার উঠে আসছে নতুন তারকা আবিষ্কারের উচ্ছ্বাস-আনন্দ৷
advertisement
এখন দেশজুড়ে আলোচিত হচ্ছেন আকাশ দীপ৷ ইংল্যান্ডের মাঠে প্রথম ইনিংসে ৪টি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৬টি নিয়ে উইকেট৷ চিরকালীন করে রেখে দেওয়ার মতো একটা পারফরম্যান্স৷ যার ফলেই ভারত ৩৩৬ রানে জয়। তবে আকাশ দীপের সাফল্য কেবল ক্রিকেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তার কঠোর পরিশ্রম, পড়াশোনা এবং তার পরিবারের সংগ্রামের গল্পের সাথেও জড়িয়ে রয়েছে একটানা লড়াই লড়ে যাওয়ার সেই গল্প৷
advertisement
বিহারের বাসিন্দা আকাশ দীপ৷ জন্ম ১৯৯৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিহারের সাসারাম জেলার দেহরি গ্রামে। বাবা রামজি সিং একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। আকাশ দীপের শৈশব খুব একটা সহজ ছিল না। ১৬ বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান এবং মাত্র ৬ মাস পরে তাঁর বড় ভাইও মারা যান। এই জোড়া ধাক্কায় কার্যত ভেঙে পড়ে তাঁর পরিবার। মা লাড্ডু দেবী সংসার এবং আকাশের দেখাশোনা করতেন৷ কিন্তু, সেই জোড়া ধাক্কার জেরে সেই সময় আকাশের জীবন থেকে উধাও হয়ে যায় ক্রিকেট। সেই সময় তিন বছর ধরে ব্যাট বা বলও স্পর্শ করেননি আকাশ।
advertisement
আকাশ দীপের বাবা প্রথমে তাঁক ক্রিকেট খেলার বিরুদ্ধে ছিলেন৷ তখনও পর্যন্ত বিহারে ক্রিকেট খেলে ভাল কেরিয়ার তৈরি করা মধ্যবিত্তদের কাছে অর্থ উপার্জনের তেমন মাধ্যম ছিল না৷ কিন্তু ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল তাঁর চিন্তাভাবনা বদলে দেয়। বাবার মৃত্যুর পরে, তাঁর ভাই এবং মা তাঁকে উৎসাহিত করেন। এখন তাঁর বোনের অসুস্থতা তাঁকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। আকাশ দীপের গল্প প্রমাণ করে যে পড়াশোনা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আর পরিবার পাশে থাকলে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
advertisement
আকাশ দীপ তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা বিহার থেকে সম্পন্ন করেন। তিনি সাসারামের একটি স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পরে তিনি তাঁর স্বপ্ন পূরণের জন্য পশ্চিমবঙ্গে আসেন। সেখানে তিনি ক্রিকেটের পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যান। প্রাথমিকভাবে তিনি টেনিস বল ক্রিকেট খেলে পকেটের টাকা আয় করতেন, কিন্তু তাঁর কঠোর পরিশ্রম বাংলার স্কাউটদের দ্বারা স্বীকৃতি পায় এবং তিনি বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে সুযোগ পান।
advertisement
২০১০ সালে আকাশ বাংলার দুর্গাপুরে গিয়ে একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন। প্রথমে তিনি ব্যাটসম্যান ছিলেন, কিন্তু কোচ তাঁর বোলিংয়ের গতি দেখেছিলেন এবং সেখান থেকেই তিনি তাঁর বোলিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যে, তিনি বেঙ্গল অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সাথে খেলতে শুরু করেন। তারপর ২০১৯ সালের মার্চ মাসে, তিনি সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে টি-টোয়েন্টি অভিষেক করেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, আকাশদীপ বিজয় হাজারে ট্রফিতে লিস্ট এ অভিষেক করেন এবং ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, রঞ্জি ট্রফিতে তাঁর ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে অভিষেক হয়।
advertisement
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে টিম ইন্ডিয়ার হয়ে আকাশদীপের অভিষেক হয়েছিল, কিন্তু এজবাস্টন টেস্টে তাঁর পারফর্মেন্স ছিল দুর্দান্ত। জসপ্রীত বুমরাহর অনুপস্থিতিতে, তিনি ভারতের বোলিংয়ের দায়িত্ব নেন এবং ১০ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করেন। তাঁর পেস এবং নির্ভুল টার্গেট কেবল প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদেরই পর্যুদস্ত করেনি, দর্শকদের মনও জয় করেছিল। আকাশ দীপ বলেছেন, আমি এই ম্যাচটা আমার বোনের জন্য খেলেছি, ও ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছে। তার সুখই আমার কাছে সবকিছু।
advertisement
advertisement
২০২৪ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি রাঁচীতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় তাঁর এবং প্রথম ম্যাচেই উইকেট নিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি। কিন্তু আসল স্বীকৃতি আসে ২০২৫ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এজবাস্টন টেস্টে ১০ উইকেট নেওয়ার পরে। ৪৯ বছর পর, কোনও ভারতীয় বোলার এই কীর্তি গড়ে ইতিহাস তৈরি করেছেন সেখানে। ম্যাচের পর, আকাশ তাঁর পারফরম্যান্স ক্যান্সারের সাথে লড়াই করা তার বোনকে উৎসর্গ করেন। সেই মুহূর্তে সবাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।