রসে চুবিয়ে দিন এক কামড়...! দুর্দান্ত স্বাদের ক্ষীরপাইয়ের মিষ্টি, দেশ জুড়ে নাম, জানেন এর ইতিহাস?
- Published by:Sanjukta Sarkar
- hyperlocal
- Reported by:Ranjan Chanda
Last Updated:
বিভিন্ন স্থানের ল্যান্ডমার্ক হিসেবে পরিচিত সেই স্থানের কোনও স্থাপত্য, বিদ্যালয় অথবা মহাবিদ্যালয়। তবে ক্ষীরপাই এলাকার ল্যান্ডমার্ক হিসেবে পরিচিত এলাকার এই সুপ্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ মিষ্টি বাবরসা।
. ক্ষীরপাই, পশ্চিম মেদিনীপুর, রঞ্জন চন্দ: প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা। সদর শহর থেকে অনেকটাই দূরে ছোট্ট এক গ্রাম। এই গ্রামের নাম বৃদ্ধি পেয়েছে শুধুমাত্র এই বিশেষ মিষ্টির কারণে। কোনও একটি স্থানের পরিচিতি বৃদ্ধি পায় সেই স্থানের ভৌগোলিক অবস্থান কিংবা সংস্কৃতির ওপর অথবা কোনও বিশিষ্ট মানুষদের জন্য। তবে গ্রামীণ কিছু খাবারও এলাকার সুখ্যাতি বাড়িয়েছে। যা এলাকার ল্যান্ডমার্ক হিসেবেও পরিচিতি এনে দেয়।(ছবি ও তথ্য: রঞ্জন চন্দ)
advertisement
বাংলার বিভিন্ন জেলায় একাধিক খাবার সেই জেলার পরিচিতি এনে দিয়েছে। যেমন শক্তিগড়ের ল্যাংচা, বাঁকুড়ার মেচা সন্দেশ। তেমনই পশ্চিম মেদিনীপুরের নাম উজ্জ্বল করেছে ক্ষীরপাই এর বাবরসা। বছরের পর বছর ধরে এই বিশেষ মিষ্টি শুধু যে ক্ষীরপাই এর নাম সারা দেশের কাছে তুলে ধরেছে তা নয়, মেদিনীপুরের নামও দেশ ও দশের সামনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মেদিনীপুরের নাম ও ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ সামনে এলেই আসে এই মিষ্টির নাম।(ছবি ও তথ্য: রঞ্জন চন্দ)
advertisement
বাবরসা, সামান্য দামের একপ্রকার মিষ্টির নাম। স্বাদে দারুণ বেশ মুচমুচে এই মিষ্টি যা মূলত পাওয়া যায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এক প্রান্তে অবস্থিত ক্ষীরপাইতে। জেলার অন্যান্য জায়গায় তেমন একটা বানান হয় না। মাঝে কিছুটা সময় কৌলিন্য হারিয়েছিল এই মিষ্টি। তবে ধীরে ধীরে সেই প্রসার আরও বাড়ছে। এখনও বংশ পরম্পরায় বেশ কিছু মিষ্টি প্রস্তুতকারক তারা বাঁচিয়ে রেখেছেন এই মিষ্টি তৈরিকে। তবে ক্ষীরপাই এলাকার পরিচিতি বাড়িয়েছে বাবরসা।মিষ্টি প্রস্তুতকারী বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, মাঝে কিছুটা সময় এর অস্তিত্ব কমছিল, তবে বর্তমানে তার প্রভাব বেড়েছে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছেছে এই মিষ্টি। বংশ পরম্পরায় বেশ কিছু ব্যবসায়ী বিক্রি করেন। (ছবি ও তথ্য: রঞ্জন চন্দ)
advertisement
advertisement
তবে এই মিষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস। রয়েছে বর্গী আক্রমণের কাহিনী, মতান্তরে মুঘল সম্রাট বাবরের ইতিহাস। গবেষক অখিলবন্ধু মহাপাত্র বলেন, ১৭৪৮ থেকে ১৭৫৩ সালের কোনও এক সময়ে বর্ধমান থেকে বর্গীরা আক্রমণ করতে করতে ক্ষীরপাইর দিকে আসছিল। ক্ষীরপাইয়ের মানুষ ভয় পেয়ে তৎকালীন ক্ষীরপাই এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইংরেজ অফিসার এডওয়ার্ডস বাবরসকে অনুরোধ করেন বর্গী আক্রমণ থেকে ক্ষীরপাইকে রক্ষা করার জন্য। এডওর্য়াস্ বাবরস্ ক্ষীরপাইয়ের শহরে অনতিদুরে শ্যামদেবের কাছে বর্গীদের আটকে দেন। পরান আটা নামে জনৈক মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী ময়দা, দুধ, ঘি, মধু দিয়ে নতুন এক মিষ্টি তৈরি করে এডওয়ারস বাবরসকে উপহার দেন। তারপর থেকেই এডওর্য়াস বাবরস্-এর নাম অনুসারে বাবরসা নামটি এসেছে বলে অনুমান করা হয়।(ছবি ও তথ্য: রঞ্জন চন্দ)
advertisement
গবেষকদের একাংশের ভিন্নমতে, এলাকার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী মোঘল সম্রাট বাবরকে খুশি করতে বাবরের সেনাপতির হাতে গাওয়া ঘি, ময়দা, দুধ ও মধুর সংমিশ্রণে এক নতুন ধরনের মিষ্টি তৈরি করেছিলেন বাবরকে উপহার হিসাবে পাঠান। খোদ বাবর এই মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেন তার নাম অনুসারে বাবরসা নামটি এসেছে। (ছবি ও তথ্য: রঞ্জন চন্দ)
advertisement
মিষ্টি বিক্রেতা শঙ্কর বৈরাগী বলেন, "পুরানো সময়ের মত কদর নেই। বিক্রি হলেও সময় ধরে মিষ্টি তৈরি বেশ কষ্টকর।বর্তমান প্রজন্ম আসছেনা এই মিষ্টি তৈরিতে। শুধু তাইনা, আগের মত প্রসার কমেছে।" সম্প্রতি মিষ্টির জিআই ট্যাগ পাওয়ার জন্য তদবির হয়েছে প্রশাসন। প্রসঙ্গত ময়দার সঙ্গে ডালডা তেল ভালোভাবে মিশিয়ে কাজু সহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে গরম তেলের মধ্যে ফোঁটা ফোঁটা ফেলে প্রস্তুত করতে হয় এই মিষ্টি। এরপর মিষ্টির রসের সঙ্গে চুবিয়ে খেতে বেশ মজা লাগে। (ছবি ও তথ্য: রঞ্জন চন্দ)
advertisement
তবে এই মিষ্টি প্রস্তুত করতে বর্তমানে প্রস্তুতকারীর সংখ্যা কমছে। নিতান্তই জেলার এই গৌরবকে বাঁচিয়ে রেখেছেন মিষ্টি বিক্রেতারা।এখনও বহু মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে মিষ্টি খেতে আসেন ক্ষীরপাইতে। ক্রেতা নবীন কুমার ঘোষ জানান, "এই মিষ্টি খেতে দুর থেকে ছুটে আসা। যেমন মুচমুচে, তেমন স্বাদে অতুলনীয়।"(ছবি ও তথ্য: রঞ্জন চন্দ)
advertisement
