মাছের ভরা মরসুমেও হতাশার ছবি ধরা পড়ছে দিঘা-শংকরপুরে। রোজগার হারানোর শংকা বুকে নিয়ে এখন কোনও রকমে দিন গুজরান চলছে পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকুলের মৎস্যজীবীদের বড় একটা অংশের। একদিকে জ্বালানি যন্ত্রণা। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক দূর্যোগ। সঙ্গে করোনা সংকটও রয়েছে। দুর্যোগ আর জ্বালানির দামের কোপে পড়ে ভরা বর্ষায় ভরা মাছের বাজারেও বহু ট্রলারই এখনও পর্যন্ত সমুদ্রে পাড়ি দিতে পারেনি। মালিকরা যেখানে হতাশ, সেখানে কাজ হারানোর আশঙ্কায় বহু মৎস্যজীবী এবং ট্রলার কর্মী।
অথচ প্রতিবারের মতো এবারও সকলেই আশায় ছিলেন পরিস্থিতি এবার অনুকূলই থাকবে। গত বছরের মতো সংকট মোকাবিলা করতে হবে না। কিন্তু সেই আশা ভেঙে চুরমার। ইয়াসের ঝঞ্ঝার সঙ্গে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে রীতিমতো বিপাকেই পড়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকুলের হাজার হাজার মৎস্যজীবী। এসবের মধ্যেই দ্বিগুণ সংকটে পড়েছেন শংকরপুরের মৎস্যজীবীরা।
কারণ, সংস্কারের অভাবে শংকরপুরের মৎস্য বন্দরের যখন বেহাল অবস্থা, সমুদ্র থেকে জেটির সংযোগকারী জলপথ ড্রেজিং-এর অভাবে ট্রলার চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সমস্যা বেশ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে বলে শংকরপুর মৎস্য বন্দরের ওপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীরা অভিযোগ করছেন। জুনের মাঝমাঝি সময় থেকেই যেখানে শুরু হয় সমুদ্রে ইলিশ ধরার মরসুম। সেখানে এই সমুদ্রযাত্রার জন্য মৎস্যজীবীদের যাবতীয় প্রস্তুতিও নিতে হয় ব্যাপকভাবে। নতুন ট্রলার তৈরি, পুরনো ট্রলার মেরামত, মাছ ধরার জাল সারাই, নতুন জাল বাঁধাই-সহ আনুষঙ্গিক যাবতীয় প্রস্তুতি সবটাই সেরে ফেলতে হয় এই সময়কালেই।
শঙ্করপুর, শৌলা, পেটুয়া-সহ সমুদ্র পার্শ্ববর্তী এলাকায় গেলেই এই সময় এসব নজরে আসে। মৎস্যজীবীদের চরম ব্যস্ততার ছবি ধরা পড়ে এই সময়েই। কিন্তু এবার সেই ছবিতে বেশ ভাটাই লক্ষ্য করা গেছে। সবার মধ্যে প্রস্তুতি বা ব্যস্ততার সেই তোড়জোড়ের ছবিটা এবার দেখা যায়নি। তাই প্রস্তুতি ছাড়াই তীরে বাঁধা পড়ে থাকা বহু লঞ্চ-ট্রলারেরই দেখা মিলছে দিঘা শংকরপুরের সমুদ্র তীরে।
পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র এলাকায় ছোট-বড় মিলে মাছ ধরার লঞ্চ ও ট্রলারের সংখ্যা প্রায় ১৮০০, এবার যার চল্লিশ শতাংশ লঞ্চ-ট্রলারেরই সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার পরিস্থিতি নেই বলে জানিয়েছেন ট্রলার মালিকরা। একদিকে করোনা সঙ্কট। সঙ্গে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত বছর ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এবার জ্বালানি যন্ত্রণাও যেমন তীব্র হয়েছে। তেমনি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ধাক্কায় বহু লঞ্চ-ট্রলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
যে কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। একবার ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে আগে যে পরিমাণ তেলের খরচ হত এ বছর তেলের দাম বাড়ার ফলে অনেক বেশি পরিমাণ টাকা লাগছে। যার ফলে তেল খরচের বেশি পরিমাণ মাছ ধরতে পারলে তবেই লাভের মুখ দেখা যাবে বলছেন ট্রলার মালিকরা। যা খুবই কঠিন বলে দাবি তাঁদের। তার কারণ, পারাদ্বীপ লাগোয়া সমুদ্রের যে অঞ্চল মাছের মুক্ত অঞ্চল বলা হয়, সেখানে এই সময়ে ওড়িশা, দক্ষিন পরগণা এবং পূর্ব মেদিনীপুর মিলে হাজার হাজার ট্রলার ফিশিং-এ নামার ফলে মাছ জালে ভাগাভাগি হয়েই যা আশানুরূপ হয়ে ওঠে না বলেই মৎস্যজীবীদের দাবি।