

লীলা মজুমদার তাঁর এক ছোটগল্পে একবার লিখেছিলেন যে ভিড়ের মধ্যে আমরা যাঁদের দেখি, তাঁরা সবাই মানুষ হতে পারেন না! তাঁদের মধ্যে হামেশাই মিশে থাকে কিছু অশরীরী। না হলে একটা শহরে কী ভাবে এত লোক ধরে যায়, তার কোনও সুষ্ঠু ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না!


সন্দেহ নেই, লেখিকা মজার ছলে বলেছিলেন কতাটা! কিন্তু এমন মানুষ তো আমাদের মধ্যে রয়েছেন যাঁরা মৃত ব্যক্তির কথা শুনতে পান। তাঁরা প্ল্যানচেটে বসে যোগাযোগ করে থাকেন মৃতদের সঙ্গে। তাঁরা এই সব মৃত ব্যক্তিদের কথা শুনতে পান, তাঁরা কী বলছেন সেটা আমাদের জানিয়ে দেন। এঁদের চলতি ভাষায় বলা হয়ে থাকে মিডিয়াম। অর্থাৎ এঁরা ইহকাল এবং পরকালের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করেন। কখনও কখনও এঁদের মুখ দিয়েই কথা বলে থাকেন মৃতেরা!


এই ব্যাপারটা কী ভাবে ঘটে, সম্প্রতি সেই মর্মেই এক সমীক্ষা চালিয়েছে ডারহ্যাম ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। খবর বলছে যে এই সমীক্ষায় এ হেন ক্লেয়ারঅডিয়েন্ট বা মিডিয়াম ছিলেন ৬৫ জন। আর ১৪৩ জন সাধারণ মানুষও ছিলেন যাঁরা আপনার-আমার মতোই, অর্থাৎ মৃতের কথা এঁরা শুনতে পান না। এই সমীক্ষায় ডারহ্যাম ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল স্পিরিচুয়ালিস্টস ন্যাশনাল ইউনিয়নও।


তো, সমীক্ষা বলছে যে এই ৬৫ জনের মধ্যে অনেকে খুব ছোটবেলা থেকেই মৃতদের কথা শুনতে পান। বাকিদের মধ্যে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষমতা বিকশিত হয়েছে। এঁরা সবাই একটা দিক থেকে সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা- এঁরা অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ। অর্থাৎ এঁদের চিন্তাভাবনার গভীরতা অনেক বেশি। চারপাশে কী ঘটছে, সে সম্পর্কেও এঁরা সজাগ থাকেন অনেক বেশি। আর তারই পরিণামে এঁরা মৃতের কথা শুনতে পান!


সমীক্ষার দাবি- এই ৬৫ জনের মধ্যে ৪৪ শতাংশ মৃতের কথা প্রায় রোজই শুনেছেন। ৩৩ শতাংশ শুনেছেন সমীক্ষার একেবারে শেষ দিনে। ৭৯ শতাংশের বক্তব্য- এঁরা যেখানেই থাকুন না কেন, চারপাশের মৃতদের কথা শুনতে পান। বাকিদের বক্তব্য- কোনও নিরালা জায়গায় গেলে তবেই তাঁদের সঙ্গে এই ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে। কেউ একেবারে সরাসরি শোনেন, কারও বা মাথার ভিতরে এই কণ্ঠস্বর সাড়া জাগায়!