Uttarkashi Tunnel Rescue : ‘ইঁদুরের গর্ত’ বেয়েই ১৭ দিন পর অন্ধকার থেকে আলোয় ৪১ প্রাণ! চলুন ফিরে দেখি দুঃসহ সময়ের সেই যাত্রাপথ

যোগাযোগের গতিতে ডানা যোগ করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন তাঁরা৷ কিন্তু নিজেরাই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন গুহায়৷ তার পর ১৭ দিন কাটে অন্ধকার গুহার ভিতর৷ এই দিনগুলির প্রতিটা মুহূর্ত যেন অনন্ত প্রহর৷ কেমন ছিল দুঃসহ সময়ের সেই যাত্রাপথ? চলুন একবার ফিরে দেখি৷

উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার ব্রহ্মতাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে কাজ করছিলেন একদল শ্রমিক। সে সময় ধসে পড়ে সুড়ঙ্গের একাংশ। অন্ধকার সুড়ঙ্গের ভিতরে আটকে পড়েন ৪১ জন কর্মী। আটকে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে ছিলেন এ রাজ্যের তিন বাসিন্দাও।

উদ্ধারকাজ শুরু হলেও প্রথমেই ব্যর্থতা৷ ভাঙা সুড়ঙ্গে পাইপ প্রবেশ করাতে গিয়ে নতুন করে ধস নামে৷ থমকে যায় উদ্ধারপর্ব৷ দিল্লি থেকে নতুন যন্ত্র আনিয়ে ফের কাজ শুরু হয়৷

গুহায় আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় পাইপের মাধ্যমে৷ পাইপের সাহায্যেই পৌঁছে দেওয়া হয় খাবার ও অন্যান্য দরকারি জিনিস৷ অক্সিজেন পাঠানোর ব্যবস্থা হয়৷ কথা বলানো হয় নিকটজনদের সঙ্গে৷

ঘটনাস্থলে আনা হয় আমেরিকার অত্যাধুনিক খননযন্ত্র ‘অগার’কে। কিন্তু সুড়ঙ্গ এলাকায় নতুন করে ধস নামায় এই যন্ত্রটিকে প্রথমে পরিকল্পনা মতো কাজে লাগানো যায়নি৷ দেশবিদেশের সংস্থাকে ডেকে আনা হয়৷

কিন্তু পাইপ ঢোকানোর জন্য শক্ত পাথরের স্তূপে গর্ত করার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় অত্যাধুনিক আগার যন্ত্র। অন্য ভাবে উদ্ধারের কথা ভাবা হয়৷ তবে বাড়তে থাকে উদ্বেগের পারদ৷ পরিজনদের দুশ্চিন্তা৷ সুড়ঙ্গের বাইরেই পুজো অর্চনার ব্যবস্থা করা হয়৷

চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের নির্দেশ মেনে শ্রমিকদের খাবার পাঠানো হয়৷ দেখা হয় তাঁদের শরীর ও মনোবল দুই-ই যেন চাঙ্গা থাকে৷ তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়, খিচুড়ি, লুচি, পোলাও, পনির। শ্রমিকদের জন্য মনোবিদের ব্যবস্থাও করা হয়।

দুর্ঘটনার পর ৯ দিন পেরিয়ে যেতে উদ্ধারকাজে শামিল হয় ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা উন্নয়ন সংস্থা ডিআরডিও। ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজে তারা দক্ষ৷

উদ্ধারকার্য চলার সময় একাধিক বার ঘটনাস্থলে আসেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। উদ্ধারকাজ বিস্তারিত ভাবে খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ দলও। পরিস্থিতি নিয়ে ধামীর সঙ্গে একাধিক বার কথা হয় প্রধানমন্ত্রীর। উদ্ধারকাজে গতি আসে অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্সের উপস্থিতিতে৷ সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড তাঁর দল নিয়ে অদম্য জেদে নতুন লড়াই শুরু করেন৷

অবশেষে শ্রমিকদের উদ্ধার করতে নতুন কৌশল নেওয়া হয় সোমবার৷ শুরু হয় ‘র‌্যাট-হোল মাইনিং’। বিভিন্ন খনি থেকে কাঁচামাল উত্তোলনের জন্য ‘ইঁদুরের গর্ত’ পদ্ধতি ব্যবহার করা হত। বিশেষত কয়লাখনিতে নিষিদ্ধ এই প্রক্রিয়া খুবই পরিচিত।

এই হল সেই পদ্ধতি যার মাধ্যমে অভিজ্ঞ খনিকর্মীরা অল্প জায়গায় সরু গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে নীচে নামেন৷ ঠিক যেমন ভাবে ইঁদুর গর্ত খোঁড়ে৷ তার পর আবার ওই গর্ত দিয়েই খনি থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন তাঁরা৷ সেই পদ্ধতিই এখানে অবলম্বন করা হয়৷

একাধিক দলে ভাগ হয়ে ১২ জন বিশেষজ্ঞ খনিশ্রমিক উদ্ধারপর্বে শামিল হন৷ সুড়ঙ্গের ভিতরে দেওয়াল খোঁড়া শুরু হয়৷ আর এক দল সেই ধ্বংসস্তূপ নিয়ে বাইরে চলে আসেন৷ অন্য শ্রমিকরা চাকা লাগানো গাড়িতে ওই আবর্জনা চাকা লাগানো গাড়িতে তুলে দেন৷ তার পর তা সুড়ঙ্গের বাইরে বেরিয়ে আসে৷

ইঁদুরের গর্তের কৌশলকে কাজে লাগিয়েই অবশেষে ১৭ দিন পর অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরলেন ৪১ জন শ্রমিক৷

অতিমানবীয় যুদ্ধজয়ের পরও সুড়ঙ্গে যে উপযুক্ত এসকেপ রুট ছিল না, গাফিলতির সেই প্রশ্ন রয়েই গেল৷