Indian Illegal Immigrants: অবৈধ পথে আমেরিকায় ঢোকা, জানেন কেমন সেই পথ? ‘ডাঙ্কি রুট’-এর চক্রটা ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর! শুনে মনে হবে, পৃথিবীতে এ জিনিস ঘটা অসম্ভব!
- Published by:Suman Biswas
- trending-desk
Last Updated:
Indian Illegal Immigrants: লাতিন আমেরিকান কোনও দেশ এবং তারপর মেক্সিকো অথবা কানাডা অতিক্রম করে আমেরিকায় প্রবেশের জন্য রীতিমতো লাইন লাগিয়েছিলেন বিপুল সংখ্যক ভারতীয়।
গত বুধবার দুপুরে অমৃতসরে এসে নেমেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক বিমান। সেই বিমানে ছিলেন আমেরিকা থেকে নির্বাসিত ১০৪ জন ভারতীয়। আসলে ওই ভারতীয়রা আমেরিকার অবৈধ অভিবাসী ছিলেন। আর এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, মেক্সিকো এবং কানাডা সীমান্ত দিয়ে মার্কিন মুলুকে প্রবেশ করার জন্য কীভাবে প্রচুর অর্থ খরচ করছেন ভারতীয়রা। পূর্ববর্তী প্রশাসনের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে শিথিল নীতির কারণে মানব পাচার যেন একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছিল। যার জেরে প্রচুর অর্থের জোগান এসেছিল।
advertisement
লাতিন আমেরিকান কোনও দেশ এবং তারপর মেক্সিকো অথবা কানাডা অতিক্রম করে আমেরিকায় প্রবেশের জন্য রীতিমতো লাইন লাগিয়েছিলেন বিপুল সংখ্যক ভারতীয়। এর মধ্যে বিশেষ করে পঞ্জাব এবং গুজরাতের বাসিন্দাদের সংখ্যাটা একটু বেশিই। আর এটাই পাচারের ব্যবসাকে তুলে ধরছে। যার জেরে প্রতি মাসে আকৃষ্ট হচ্ছেন হাজার হাজার গ্রাহক। যাঁরা প্রচুর টাকা দিতেও পিছপা নন। এদিকে গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তখন থেকেই এই ব্যবসায় যেন ভাটা পড়তে শুরু করেছে।
advertisement
অবৈধ প্রবেশ এবং অবৈধ অভিবাসনের জন্য ব্য়বহার করা হয় ডাঙ্কি অথবা ডানকি শব্দটি। মূলত অভিবাসীদের গাধার মতো হাঁটানোর পন্থাকেই এভাবে তুলে ধরা হয়। শাহরুখ খানের ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ডানকি থেকেই এই শব্দটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিভিন্ন দেশের একাধিক স্টপ দিয়ে ইনডিরেক্ট রুটের মাধ্যমে অবৈধ সীমান্ত পারপারকেই তুলে ধরা হয় ডাঙ্কি রুট কথাটির মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শেঙ্গেন এলাকার জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা নিতে হয়। এর জেরে তাঁরা ২৬টি দেশে অবাধে যাতায়াত করতে পারেন। তবে এরপরেই তাঁরা ‘কনসালট্যান্ট’ এবং ‘এজেন্ট’-দের সাহায্য নিয়ে অবৈধ ভাবে ইউকে-তে ঢুকে পড়েন।
advertisement
এই এজেন্টরা অনেক সময় এই পরিষেবার জন্য প্রচুর টাকা দাবি করে থাকেন। আর এই পরিষেবাগুলির মধ্যে থাকে ভুয়ো নথি তৈরি থেকে শুরু করে শিপিং কন্টেনারের মাধ্যমে স্মাগলিং। রীতিমতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যেক বছর হাজার হাজার ভারতীয় আমেরিকা, কানাডা অথবা ইউরোপীয় দেশগুলিতে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করার চেষ্টা করে থাকেন।
advertisement
অনেক সময় নয়াদিল্লি এবং মুম্বই থেকে অভিবাসীদের ট্যুরিস্ট ভিসায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে নিয়ে যায় মানব পাচারকারীরা। এরপরে লাতিন আমেরিকার একাধিক ট্রানজিট পয়েন্টের মাধ্যমে গিয়ে আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে পৌঁছন। আর সীমান্তে পৌঁছনোর পরে হ্যান্ডলাররা তাঁদের ভুয়ো ব্যাকস্টোরি সরবরাহ করে। যাতে তাঁরা সীমান্ত পার করার সময় কোথাও ফেঁসে গেলেও বেরিয়ে যেতে পারেন। অর্থাৎ এই জাল অজুহাতের মধ্যে পড়ে অর্থনৈতিক কষ্ট থেকে শুরু করে ধর্মীয় বা LGBTQ+ পরিচয়ও। এর জন্য জন্য নিপীড়নের ভিত্তিতে আশ্রয়ের দাবি করতে পারেন অভিবাসীরা।
advertisement
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডাঙ্কি রুট শুরু হয় লাতিন আমেরিকান দেশগুলিতে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে। এই দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হল ইক্যুয়েডর, বলিভিয়া অথবা গুয়ানা। যেখানে পৌঁছনোমাত্রই সহজে ভারতীয় নাগরিকেরা ভিসা অন অ্যারাইভ্যাল বা ট্যুরিস্ট ভিসা পেয়ে যান। দুবাই থেকে মেক্সিকো যাওয়ার জন্য কিছু এজেন্ট আবার সরাসরি ভিসার ব্যবস্থাও করে দেয়। যদিও মেক্সিকোয় সরাসরি নামা কিন্তু বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের চোখে পড়লেই গ্রেফতার হয়ে যান অভিবাসীরা। লাতিন আমেরিকান দেশগুলি থেকে বেশিরভাগ এজেন্টই নিজেদের গ্রাহকদের কলম্বিয়া নিয়ে যায়। কারণ পানামার তুলনায় কলম্বিয়া মার্কিন সীমান্তের কাছে পড়ে। এবার কলম্বিয়া থেকে অভিবাসীরা Darién Gap নামে একটি ভয়ঙ্কর জঙ্গল দিয়ে পানামায় প্রবেশ করেন। এই জঙ্গলই আলাদা করেছে কলম্বিয়া এবং পানামাকে। বলা হয়, এই জঙ্গলের পথে নেই কোনও সেতু কিংবা রাস্তা। এমনকী এখানে জাগুয়ার থেকে শুরু করে অ্যানাকোন্ডা পর্যন্ত ভয়ঙ্কর বন্যপ্রাণীর বাস।
advertisement
এখানেই শেষ নয়, এই এলাকায় ওঁত পেতে থাকে অপরাধী দলও। ফলে ডাকাতি এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে অহরহ। যদি সব কিছু ঠিক থাকে, তাহলে পানামার জঙ্গল এবং পাহাড়ি এলাকা দিয়ে ৮ থেকে ১০ দিন লাগে এই পথ অতিক্রম করতে। এরপর গুয়াতেমালার সঙ্গে মেক্সিকোর দক্ষিণ সীমান্তে পৌঁছনোর আগে অভিবাসীদের কোস্টারিকা এবং নিকারাগুয়া পার করতে হয়। এরপর তাঁরা মেস্কিকো পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকেই প্রবেশ করতে পারেন মার্কিন মুলুকে।
advertisement
আবহাওয়ার অবস্থা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানব পাচার নেটওয়ার্ক ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে গোটা প্রক্রিয়াটিতে সময় লাগতে পারে প্রায় ২ বছর। এদিকে মার্কিন এবং মেক্সিকোর সীমান্তের মধ্যবর্তী অংশে একাধিক টানেল বা সুড়ঙ্গপথ। আর মেক্সিকোয় বসে থাকা অপরাধী দল এবং স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিয়েই এই সুড়ঙ্গপথগুলি ব্যবহার করেন অভিবাসীরা। ইউএসএ টুডে-র প্রতিবেদনে আবার দাবি, এর মধ্যে একটি টানেলকে ভিআইপি টানেলের তকমা দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের টানেল সাধারণত সংকীর্ণ হয়, যার ভিতর নিকষ অন্ধকার থাকে। প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণও বটে। কারণ ভিতরের তাপমাত্রাও থাকে অত্যন্ত বেশি। সেই সঙ্গে র‍্যাটলস্নেক, বিষাক্ত পোকামাকড় এবং ইঁদুরের উপদ্রব হয় সঙ্গী।
advertisement
আর এই টানেলটি মেক্সিকোর সিউদাদ জুয়ারেজ এবং টেক্সাসের এল পাসোর মধ্যে সংযোগ গড়ে তুলেছে। এই এলাকায় পরিচালিত কার্টেলগুলি সীমান্ত পার করে আমেরিকায় ঢোকানোর জন্য প্রায় ৬০০০ ডলার চার্জ করে। কার্টেলকে পেমেন্ট করা হলে অভিবাসীদের একটি কোড দেওয়া হয়। এই কোড থাকলে অন্য কার্টেল কিংবা মেক্সিকোর আইন প্রণয়ন সংস্থা তাঁদের হয়রানি করতে পারে না। আর তাঁরা সহজেই আমেরিকায় প্রবেশ করতে পারেন।
advertisement
মেক্সিকো-মার্কিন সীমান্তে যে অপরাধী গোষ্ঠীগুলি কাজ করে, সাম্প্রতিক সময়ে তারা তাদের ব্যবসা পরিবর্তন করেছে। আগে তাদের প্রাথমিক ব্যবসা ছিল মাদক পাচার। এখন তা মানব পাচারে পরিণত হয়েছে। আসলে গড় এক কিলো কোকেন থেকে তারা পেতে পারে ১৫০০ ডলার। কিন্তু মানুষ পাচারের ক্ষেত্রে জনপ্রতি তারা পায় ১০০০০ থেকে ১২০০০০ ডলার করে।
advertisement
অবৈধ অভিবাসনের বড়সড় উৎস হল ভারত: ইউএস কাস্টম অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে যে, ২০২৩ সালে প্রায় রেকর্ড সংখ্যক অর্থাৎ ৯৬৯১৭ জন ভারতীয়কে ধরে নির্বাসন দেওয়া হয়। এঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিলেন। যদিও আরও কত জন সীমান্ত পার হতে পেরেছেন, সেটা কিন্তু এই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট নয়।
advertisement
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, মার্কিন মুলুকে অবৈধ অভিবাসনের অন্যতম সেরা উৎস হল ভারত। ওই সেন্টারের ২০২২ সালের পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে যে, প্রায় ৭ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় বৈধ স্টেটাস ছাড়াই আমেরিকায় বসবাস করছেন। এর ফলে মেক্সিকান এবং হন্ডুরানদের পরে তৃতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী হিসেবে তকমা পেয়েছে ভারতীয়রাই।
advertisement
বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন যে, ২০০৯ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ১৫৭৫৬ জন অবৈধ অভিবাসী ভারতীয়কে ভারতে নির্বাসিত করা হয়েছে। ভারতীয় আইন প্রণয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রী বলেন যে, ২০০৯ সালে ৭৩৪ জনকে, ২০১০ সালে ৭৯৯ জনকে, ২০১১ সালে ৫৯৭ জনকে, ২০১২ সালে ৫৩০ জনকে এবং ২০১৩ সালে ৫৫০ জনকে নির্বাসিত করা হয়েছে। জয়শঙ্করের বিবৃতি অনুযায়ী, ২০১৪ সালে যখন এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন ৫৯১ জনকে এবং ২০১৫ সালে ৭০৮ জনকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। এরপরে ২০১৬ সালে ১৩০৩ জনকে, ২০১৭ সালে ১০২৪ জনকে, ২০১৮ সালে ১১৮০ জনকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। তবে ২০১৯ সালে সবথেকে বেশি নির্বাসন হয়েছিল। সেই সময় প্রায় ২০৪১ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে দেশে ফেরানো হয়েছিল। ২০২০ সালে ১৮৮৯ জন, ২০২১ সালে ৮০৫ জনকে, ২০২২ সালে ৮৬২ জনকে এবং ২০২৩ সালে ৬৭০ জনকে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। গত বছর ১৩৬৮ জনকে এবং চলতি বছর এখনও পর্যন্ত ১০৪ জনকে নির্বাসিত করা হয়েছে।
advertisement
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়ার মেগা ব্যবসা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ভাবে যাঁরা প্রবেশ করতে চান, তাঁদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করে উড়ান, বাস ধরে এবং জঙ্গল ও পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে ট্রেক করে যেতে হয়। যখন ফরাসি কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালে নিকারাগুয়াগামী যাত্রীতে ঠাসা একটি বিমান থামিয়েছিল, তখন হিউম্যান স্মাগলিং নেটওয়ার্ক প্রকাশ্যে আসে। আর এই বিমানে থাকা যাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন ভারতীয়রা। নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই ব্যবসার অত্যন্ত সংগঠিত প্রকৃতিকে তুলে ধরে। গুজরাত পুলিশের মতে, যাত্রীরা এজেন্টদের প্রত্যেককে ৪০ লক্ষ থেকে ১.২৫ কোটি টাকা দিয়েছিলেন, যাতে তারা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে পৌঁছাতে সহায়তা করতে পারে।
advertisement
এই অবৈধ অভিবাসনের কাজে আলাদা আলাদা এজেন্টরা জড়িত থাকে। গ্রাম অথবা জেলা স্তরে যারা কাজ করে, তারা আসলে ছোট খেলোয়াড়। এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে কোনও চক্রী। যারা আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করে। সম্প্রতি ভারতে নির্বাসিত হওয়া এক অভিবাসী ভারতীয় জানিয়েছেন যে, আমি তো সঠিক ভিসার মাধ্যমেই এজেন্টকে ওই দেশে পাঠাতে বলেছিলাম। কিন্তু সে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। প্রায় ৩০ লক্ষ টাকায় এই চুক্তি হয়েছিল। পিটিআই-এর কাছে সে আরও জানিয়েছে যে, ব্রাজিল থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর যাত্রা। প্রায় ৬ মাস ধরে সেখানে আটকে থাকার পরে অবৈধ ভাবে তাঁকে সীমান্ত পার করানো হয়। গত ২৪ জানুয়ারি মার্কিন বর্ডার পেট্রলের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এরপর নির্বাসনে পাঠানোর আগে তাঁকে ১১ দিনের হেফাজতে রাখা হয়েছিল।