Sperm Donation in India: ভারতে স্পার্ম ডোনেট করা এখনও কেন নিষিদ্ধ? বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জানুন ৫টি প্রধান কারণ...

ভারতে স্পার্ম ডোনেশন নিয়ে কথা বলা এখনও নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হয়। অনেক মানুষ এটি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন। কেউ কেউ এটিকে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে যুক্ত করেন, আবার কেউ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বলেন। তবে সমাজে ধীরে ধীরে এই নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে।

স্পার্ম ডোনেশন একটি মেডিকেল পদ্ধতি যেখানে একজন সুস্থ পুরুষ নিজের শুক্রাণু দান করেন যাতে নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তান লাভ করতে পারেন। যেসব পুরুষ প্রাকৃতিকভাবে সন্তান ধারণে অক্ষম, তাদের ক্ষেত্রে IVF বা IUI এর মাধ্যমে সন্তান ধারণের জন্য স্পার্ম ডোনেশন একটি কার্যকর উপায়।

নয়াদিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান ডঃ অমরেন্দ্র পাঠক বলেন, স্পার্ম ডোনেশন নিঃসন্তান দম্পতির কাছে আশীর্বাদস্বরূপ। এই পদ্ধতির মাধ্যমে অনেক পরিবার সন্তান লাভের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এটি সমাজের ভবিষ্যৎ গঠনের একটি বৈজ্ঞানিক উপায়ও বটে।

লেডি হার্ডিং মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রিস্ট ও অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডঃ প্রেরণা কুকরেতি বলেন, ভারতে পরিবার এবং বংশ পরিচয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। কেউ যদি নিজের স্পার্ম ডোনেট করেন, তাহলে সমাজ সেটিকে নিজের বংশের উত্তরাধিকার হস্তান্তর হিসাবে দেখে নেয়। এই ধারণা সমাজে একটি নৈতিক ও মানসিক অস্বস্তি তৈরি করে।

ডঃ প্রেরণার মতে, ভারতের বেশিরভাগ মানুষ এখনও স্পার্ম ডোনেশন, IVF ও রিপ্রোডাক্টিভ সায়েন্স সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য জানেন না। এই অজ্ঞতা অনেক ভুল ধারণা তৈরি করে এবং স্পার্ম ডোনেশনকে অনৈতিক বলে মনে করা হয়। ফলে, অনেক দম্পতি সমাজের ভয়ে চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে পিছিয়ে থাকেন।

অনেক সময় এমন মনে করা হয় যে স্পার্ম ডোনেট করা মানে নিজের গোপনীয়তা বা সম্মান হারানো। আবার যেসব পুরুষের শরীরে নিজস্ব শুক্রাণু তৈরি হয় না এবং যারা ডোনেটেড স্পার্মের মাধ্যমে সন্তান লাভ করেন, তাদের সমাজে অবমূল্যায়ন করা হয়। এই মনোভাব সমাজে আরও বেশি বাধা তৈরি করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্পার্ম ডোনার ও গ্রহণকারী উভয়ই পরিচয় গোপন রাখা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। পরিবার বা সন্তান যদি ভবিষ্যতে জানতে পারে যে সে ডোনেটেড স্পার্ম থেকে জন্মেছে, তাহলে সমাজের মুখোমুখি হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে — এই ভয় অনেকের মধ্যেই কাজ করে।

যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বড় শহরগুলিতে IVF ক্লিনিকের সংখ্যা বেড়েছে, সিনেমা ও ওয়েব সিরিজে এ নিয়ে আলোচনার ফলে কিছুটা সচেতনতা তৈরি হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই নিয়ে মনোভাব আগের চেয়ে অনেকটা উদার হয়েছে।

তবে এখনও ভারতের গ্রামাঞ্চল বা রক্ষণশীল পরিবারে স্পার্ম ডোনেশন সহজে গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা ও সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়াই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে এই ট্যাবু ভাঙা সম্ভব।

চিকিৎসকরা বলছেন, স্পার্ম ডোনেশন একটি বৈজ্ঞানিক ও মানবিক পদ্ধতি যা নিঃসন্তান দম্পতির জীবনে আশার আলো জ্বালাতে পারে। এটি সম্পর্কে ভুল ধারণা ও সংকোচ দূর করে সমাজে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করাটাই এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয়।

Disclaimer: এই খবরের মধ্যে দেওয়া ওষুধ/স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রাপ্ত। এটি সাধারণ তথ্য এবং ব্যক্তিগত পরামর্শ নয়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও কিছু ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। নিউজ18 বাংলা কোনও ব্যবহারে ক্ষতির জন্য দায়ী থাকবে না।