মেলে মাত্র ৪ মাস...! এই 'শাক', স্বাদের 'স্বর্গ', স্বাস্থ্যের অ্যাটম বোমা! গিজগিজ করছে প্রোটিন, ভিটামিন, বাজারের দেখলেই হামলে পড়ুন!

শাক-ভাত বললেই চোখে ভেসে ওঠে ধোয়া ওঠা গরম ভাত আর ঘন সবুজ সেই সবজি যা ভারতীয়দের মনের কাছাকাছি থাকা এক আবেগ! সারাদিনের শেষে এই পদ যেন হাজার ক্লান্তির শেষে মায়ের আঁচল...!

প্রাচীন কাল থেকেই বাঙালি থেকে অবাঙালি ভারতীয়দের পাতে এই একটি পদ প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়। কারণ পুষ্টিবিদরাও বলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রামের ঝোপে ঝাড়ে বেড়ে ওঠা বিনা পয়সার এই শাকেই থাকে স্বাস্থ্যের খনি!

কিছু কিছু সবুজ শাক সবজি এতটাই প্রোটিন, ভিটামিনের ভর্তি থাকে যে পাতে এই শাক থাকলে সুগার, কোলেস্টেরল ছুঁতে পারবে না। ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না ক্যানসারের মতো মারণ রোগ। শুধু জানতে হবে কোন শাকে শুধুই স্বাদ আর কোনটিতে আছে স্বাস্থ্যের খাজনা!

গ্রাম বাংলায় প্রায়ই দেখা যায় এই শাক। আবার শহরের বাজারের শাকের আঁটি নিয়ে বসে থাকেন যাঁরা সেই মাসিদের কাছেও আপনি নিশ্চয়ই এই শাকটি দেখে থাকবেন। কিন্তু নাম শুনেও হেলায় হয়ত কখনও পয়সা দিয়ে কেনার কোথা ভুলেও ভাবেননি। কিন্তু যদি জানেন এই শাকের স্বাস্থ্যগুণ, তাহলে এখনই ছুটবেন বাজারে।

'ঘেনারি শাক' বলতে সাধারণত বাংলার জনপ্রিয় ঘেঁটু শাক বা সর্ষে শাককেই বোঝায়। এটি এক ধরনের তেতো এবং ঝাঁঝালো স্বাদের শাক। এই শাকটি বেতো শাক বা কলমি শাক-এর মতো অন্যান্য শাকের সঙ্গে তুলনা করা হয়। আবার কিছু অঞ্চলে এই শাকটিকে ঘেনারি শাক নামেও ডাকা হয়।

এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটি প্রোটিন এবং আয়রনে সমৃদ্ধ এবং এত সুস্বাদু যে দেশের গ্রামে গ্রামে  আদিবাসীরা প্রাচীনকাল থেকে বাড়িতে মেয়ে জামাইকে স্বাগত জানাতে এই শাকটি তৈরি করে খাওয়ান। এটি তৈরি করতেও মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগে।

বর্ষাকালে এই শাক প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়: 
বর্ষার চারমাস প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ঘেঁটু শাক বা ঘেনারি শাক। এর দামও খুব বেশি নয়। বাজারে এর দাম প্রতি কেজি বড়জোর ₹ ৪০ টাকা পর্যন্ত হয়।

এই শাকটি টক-মিষ্টি স্বাদের হয়। রাঁচির সুপরিচিত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ভি.কে. পাণ্ডে বলেন, এটি স্বাদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যেরও এক দুর্দান্ত খনি। এতে আয়রন, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ, বি, সি, ই এর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

এই কারণে এই শাক খেলে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা দূর হয়। এটি দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, শরীরকে শক্তিশালী রাখে এবং প্রাকৃতিকভাবে শরীরকে পরিষ্কার রাখে।

এই শাক রান্না করতেও মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে। এর জন্য, প্রথমে শাকটি ভাল করে ধুয়ে নিন, কারণ এতে প্রচুর কাদা লেগে থাকে, তাই এটি সঠিকভাবে পরিষ্কার করুন।

শাক ভাল করে ধুয়ে রান্না করে ফেলুন। শুধু রান্নার আগে তিন-চারটি জিনিস কেটে রেখে দিতে হবে আগাম। এর জন্য রসুন, আদা, মরিচ, পেঁয়াজ, সামান্য হলুদ, জিরে গুঁড়ো, স্বাদ অনুযায়ী লবণ লাগবে, এর বেশি কিছু নয়। প্রথমে প্যানে কিছুটা সর্ষের তেল দিয়ে আদা, রসুন এবং পেঁয়াজ দিয়ে বাদামী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।

ভাল ভাবে ভাজা হয়ে গেলে তাতে পরিষ্কার করে ধুয়ে রাখা শাকটি যোগ করুন এবং তারপর তাতে লবণ ছিটিয়ে দিন। এতে হলুদ এবং ধনে গুঁড়োও যোগ করুন এবং ভালভাবে মিশিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য কম আঁচে রেখে দিন। মাঝে একবার বা দুবার নাড়তে থাকুন। মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে আপনি দেখতে পাবেন যে সুস্বাদু শাকটি রেডি।

এই ঘেঁটু শাক আদিবাসীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই সব আয়ুর্বেদিক স্বাস্থ্য গুণের জন্য। এই শাক প্রসঙ্গে রাঁচির হারমুর আদিবাসী দেবী বলেন, যখন আমাদের মেয়ে এবং জামাইরা আমাদের বাড়িতে আসে, তখন আমরা এই ধরণের শাক দিয়ে অনেক খাবার তৈরি করি।

ঘেঁটু বা ঘেনারির শাকের নাম শুনলে নাক সিঁটকোবেন না, এর স্বাদ কিন্তু খুবই সুস্বাদু এবং কম খরচে শরীর সুস্থ রাখার চাবিকাঠি এই শাক। মাত্র চার মাস পাওয়া যায়, তাই এই সময়ে এই শাক কখনওই মিস করবেন না ভুলেও।