Colon Cancer: ভারতে হুরহুর করে বাড়ছে কোলন ক্যানসার! চিনুুন প্রাথমিক উপসর্গ, সতর্ক না হলেই ভয়ঙ্কর বিপদ সামনে...

টেলিভিশন অভিনেতা বিভু রাঘবের অকালমৃত্যু কোলন ক্যানসারের কারণে ভারতজুড়ে এই রোগ নিয়ে নতুন করে চিন্তা তৈরি করেছে। জনপ্রিয় টিভি ধারাবাহিকে অভিনয়ের পাশাপাশি বিভু নিজের রোগের অভিজ্ঞতা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতেন। তাঁর মৃত্যু আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ চেনা এবং সময়ে স্ক্রিনিং করানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

কোলন ক্যানসার বা কোলোরেক্টাল ক্যানসার হল一এক ধরণের ক্যানসার যা বৃহদান্ত্রে (colon) শুরু হয়। এটি কোলন এবং রেক্টাল (মলদ্বার) ক্যানসার—দুই ক্ষেত্রকেই বোঝায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) অনুযায়ী, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চতুর্থ সর্বাধিক সাধারণ ক্যানসার।

আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি (ACS) অনুযায়ী, প্রায় প্রতি ২৪ জন পুরুষের একজন এবং প্রতি ২৬ জন নারীর একজনের জীবদ্দশায় কোলোরেক্টাল ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর মধ্যে প্রায় ৭০% কেস কোলনেই শুরু হয়। দিল্লি স্টেট ক্যানসার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা মনে করেন, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, বসে থাকা জীবনধারা, স্থূলতা, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া, ধূমপান, মদ্যপান এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ কোলন ক্যানসারের মূল কারণ।

অনেক সময় জেনেটিক কারণেও কোলন বা রেক্টাল ক্যানসার হতে পারে। যদি পরিবারের কারও আগে এই রোগ হয়ে থাকে, তবে পরবর্তী প্রজন্মের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ অনেক সময় অতটা স্পষ্ট হয় না, কিন্তু নজর দেওয়া প্রয়োজন। একটি সাধারণ ভুল ধারণা হল—মলের সঙ্গে রক্ত মানেই পাইলস। তবে পাইলসের ক্ষেত্রে রক্ত উজ্জ্বল লাল হয়, কোলন ক্যানসারের ক্ষেত্রে রক্ত অনেকটা গাঢ় লাল বা কালচে হয়ে থাকে।

যদি দীর্ঘসময় ধরে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, তলপেটে ব্যথা থাকে বা রক্তশূন্যতার কারণে দুর্বলতা অনুভূত হয়, তাহলে তা কোলন ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এছাড়াও, যদি হঠাৎ করে ওজন কমে যায়, বমি বমি ভাব থাকে বা মলের রং ও অভ্যাসে পরিবর্তন হয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন-এর মতে, ভারতে কোলন ক্যানসারের প্রভাব বাড়ছে, বিশেষত শহরাঞ্চলে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই রোগের হার প্রতি লাখে ৭.২ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৫.১। বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন—কম ফাইবারযুক্ত খাদ্য, লাল মাংস এবং প্রক্রিয়াজাত মাংসের বেশি ব্যবহার, কম শারীরিক পরিশ্রম ও মানসিক চাপ।

ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের (MoHFW) সুপারিশ, ৪৫ বছর বয়সের পর থেকে নিয়মিত স্ক্রিনিং করানো উচিত। পাশাপাশি, শারীরিক পরিশ্রম বৃদ্ধি এবং মলত্যাগে রক্ত দেখা বা বদহজমের মতো সমস্যায় দেরি না করে চিকিৎসা করানো জরুরি।

দুঃখজনকভাবে, ভারতে এই রোগ নিয়ে সচেতনতা এবং স্ক্রিনিংয়ের হার এখনও কম। বিশেষত ৫০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এই ঝুঁকি আরও বেশি, কারণ তারা বেশিরভাগ সময় প্রাথমিক উপসর্গকে উপেক্ষা করে। সময়মতো সতর্কতা অবলম্বনই কোলন ক্যানসার থেকে বাঁচার মূল উপায়।

দিল্লি ক্যানসার ইনস্টিটিউট-এর মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট ডঃ মীনাক্ষী শর্মা বলেছেন, “বর্তমানে কোলন ক্যানসার তরুণদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। নিয়মিত স্ক্রিনিং, উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাদ্য ও সক্রিয় জীবনযাপন এই রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।”

Disclaimer: এই খবরের মধ্যে দেওয়া ওষুধ/স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রাপ্ত। এটি সাধারণ তথ্য এবং ব্যক্তিগত পরামর্শ নয়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও কিছু ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। নিউজ18 বাংলা কোনও ব্যবহারে ক্ষতির জন্য দায়ী থাকবে না।