কলা চাষে কম খরচে বাম্পার ফলন পেতে চান? সঠিক সমাধান রয়েছে হাতের কাছেই, দেখে নিন শুধু কী করতে হবে
- Published by:Rachana Majumder
- Reported by:Trending Desk
Last Updated:
জমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণত ভেষজনাশক ব্যবহার করা হয়, তবে যদি সেগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হয় তবে কলাগাছের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। পাতার দাগ, গাছ বড় না হওয়া এবং কখনও বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এর লক্ষণ। অতএব, কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞের সুপারিশ করা ভেষজনাশক সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে ব্যবহার করা উচিত।
কলাগাছের সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতি একেবারে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। সুজলা সুফলা এই বঙ্গভূমির সর্বত্রই কলাগাছ চোখে পড়ে, তার শ্যামলিমাই বাংলার ছবি মনের পটে এঁকে দেয়। গাছের একাধিক অংশ গণ্য হয় রীতিমতো সুখাদ্য রূপে, পাতাও আসে নানা কাজে। বাঙালির ধার্মিক এবং সাংস্কৃতিক পার্বণেও কলাগাছের বহুল ব্যবহার। এ হেন কলা তাই ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়, কিন্তু কিছু প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ফসলের প্রভূত পরিমাণে ক্ষতিও হয়। কৃষি বিশেষজ্ঞরা কিছু নির্দিষ্ট সমাধান দেখিয়েছেন, যার ফলে বাম্পার ফলন হবে।
advertisement
কলা কেবল একটি ফল নয়, বরং কৃষকদের কর্মসংস্থান এবং গ্রামীণ এলাকার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কলা চাষের সময় গাছপালা প্রায়শই রোগজীবাণু দ্বারা নয়, বরং পরিবেশগত এবং পুষ্টিগত কারণে প্রভাবিত হয়, যাকে অ্যাবায়োটিক ব্যাধি বলা হয়। যদি সময়মতো শনাক্তকরণ এবং বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা না করা হয়, তাহলে ফলন এবং গুণমান উভয়ই হ্রাস পেতে পারে।
advertisement
advertisement
কলা গাছের পাতা বড় হওয়ায় এর দ্রুত বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত আর্দ্রতা প্রয়োজন। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত বা জলের অভাবের ফলে পাতা শুকিয়ে যায়, গুচ্ছ ছোট হয়ে যায় এবং ফলন হ্রাস পায়। অন্য দিকে, অনুপযুক্ত জল নিষ্কাশনের ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়, যার ফলে শিকড় পচে যায়, গাছ দুর্বল হয়ে যায় এবং কখনও কখনও মারা যায়। এই পরিস্থিতিতে ড্রিপ সেচ, মালচিং এবং সঠিক জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন।
advertisement
২৪ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কলা চাষ আদর্শ। উচ্চ তাপমাত্রায় পাতা এবং ফলের উপর রোদে পোড়া দাগ দেখা দেয়। তীব্র ঠান্ডায় আবার কাণ্ড কালো হয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। শীতকালে ঠিক এই কারণেই কলার গুচ্ছ ধরতে সময় লেগে যায়। ছায়া জাল, স্প্রিংকলার সেচ এবং বায়ুরোধক ব্যবহার এই সমস্যাগুলি এড়াতে কার্যকর। গাছের যে অংশগুলি শুকিয়ে যায় সেগুলি গাছ থেকে আলাদা রাখা উচিত, যাতে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ না হয়।
advertisement
গাছের স্বাস্থ্য সুষম পুষ্টির উপর নির্ভর করে। নাইট্রোজেনের অভাব পাতা হলুদ করে এবং বৃদ্ধি ব্যাহত করে। পটাশিয়ামের অভাবে ফলের আকার ছোট হয়ে যায় এবং দুর্বল গুচ্ছ তৈরি করে। ম্যাগনেসিয়ামের অভাব সবুজ পাতার টিস্যু নষ্ট করে। ক্যালসিয়ামের অভাব পাতা কুঁচকে যায় এবং শিকড় দুর্বল করে। অতএব, কৃষকদের পর্যায়ক্রমে মাটি এবং পাতা পরীক্ষা করা উচিত, সেই মতো সুষম সার এবং জৈব সার প্রয়োগ করা উচিত।
advertisement
কলার একটি লম্বা মূল এবং একটি লম্বা কাণ্ড থাকে, যা প্রবল বাতাসে সহজেই উল্টে যায়। একবার গাছ উল্টে গেলে কাণ্ড ভেঙে যায় এবং ফলন হ্রাস পায়। জমির চার পাশে বাতাসের প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করে এবং গাছগুলিকে সাপোর্ট দিয়ে এই ক্ষতি কমানো যেতে পারে। তীব্র বাতাসে পাতা এবং ফল ঝলসে যাওয়া রোধ করার জন্য গাছের মধ্যে সঠিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং প্রয়োজনে জাল বা আচ্ছাদন স্থাপন করা প্রয়োজন। কিছু এলাকায় মাটির লবণাক্ততাও উৎপাদন হ্রাস করে। এই ক্ষেত্রে জমিতে জিপসাম প্রয়োগ, লবণ সহনশীল গাছ রোপণ এবং পর্যাপ্ত সেচই সর্বোত্তম সমাধান।
advertisement
জমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণত ভেষজনাশক ব্যবহার করা হয়, তবে যদি সেগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হয় তবে কলাগাছের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। পাতার দাগ, গাছ বড় না হওয়া এবং কখনও বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এর লক্ষণ। অতএব, কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞের সুপারিশ করা ভেষজনাশক সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে ব্যবহার করা উচিত।
advertisement
কলা চাষে অ্যাবায়োটিক ব্যাধিগুলি বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। খরার চাপ এড়াতে ড্রিপ বা মাইক্রো-স্প্রিঙ্কলার সেচ এবং মালচিং পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। তীব্র বাতাস থেকে রক্ষা করার জন্য এবং গাছগুলিকে সহায়তা প্রদানের জন্য মাঠের চারদিকে বাতাসের প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করা যেতে পারে। রোদে পোড়া এড়াতে গাছের মধ্যে সঠিক দূরত্ব এবং ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং সময়মতো হস্তক্ষেপ নিরাপদ ফলন নিশ্চিত করবে।
