Kolkata Yellow Taxi: কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি, চালকদের প্রিয় শব্দ 'না'! তবু গাড়ির এই অজানা গল্পগুলি চমকে দেবে আপনাকে
- Published by:Raima Chakraborty
Last Updated:
Kolkata Yellow Taxi: গন্তব্য শুনে 'নো রিফিউজাল' লেখা কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে রেকর্ড করে ফেলেছে প্রায়। তবু ভালবাসুন বা ঘৃণা করুন, কলকাতার হলুদ ট্যাক্সিকে ভুলে যাওয়া কঠিন।
যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব? কোনওটা খুব কাছের, তো কোনওটা খুব দূর। গন্তব্য শুনে 'নো রিফিউজাল' লেখা কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে রেকর্ড করে ফেলেছে প্রায়। কিন্তু এসবের পরেও মহানগরীর এই নস্ট্যালজিয়া ভরা ঐতিহ্যকে, আপনি প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না। ভালবাসুন বা ঘৃণা করুন, কলকাতার হলুদ ট্যাক্সিকে ভুলে যাওয়া কঠিন।
advertisement
advertisement
কলকাতা মানেই রসগোল্লা, ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা, হাওড়া ব্রিজ, হাতে টানা রিক্সা আর হলুদ ট্যাক্সি। ১৯৬২ সালে শহরে শুরু হয় হলুদ ট্যাক্সির যাত্রা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ট্যাক্সিই হয়ে ওঠে শহরের অন্যতম 'আইকন'। হুগলি নদীর ধারে গড়ে ওঠা এক জনজীবন নাম কলকাতা। এই কলকাতার সঙ্গে হলুদ ট্যাক্সির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিলোত্তমার সঙ্গে হলুদ ট্যাক্সির রয়েছে অন্য এক সখ্য। দেখতে আহামরি কিছু না হলেও ভারতের এক সময়ের সরল সাদাসিধে এই গাড়ি ছিল আভিজাত্যের চিহ্ন। ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যায় ভারতের প্রথম তৈরি গাড়ির উৎপাদন।
advertisement
১৯০৯ সালে এই শহরে প্রথম ট্যাক্সি আসে। বর্তমানে যেখানে এখন ফ্র্যাঙ্ক রস কোম্পানির ওষুধের দোকান রয়েছে চৌরঙ্গী রোডের, সেখানেই ছিল ফরাসি শেভিজাঁ কোম্পানির অফিস। তারাই কলকাতার পথে প্রথম ট্যাক্সি চালু করে। তখন চৌরঙ্গী থেকে মিটারওয়ালা দেওয়া গাড়ি পৌঁছে যেত দমদম, ব্যারাকপুর, বজবজ। দুই সিলিন্ডারের ছোট্ট 'ক্যারন', গাড়িতে মাত্র দু'জন যাত্রী বসার সুযোগ থাকত।
advertisement
advertisement
১৯৬২ সালে কলকাতার ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের এই অ্যাম্বাসেডর গাড়িকে ট্যাক্সিতে পরিণত করার প্রস্তাব পেশ করে। প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে সেই বছরেই কলকাতায় নামে এই আইকনিক গাড়ি। ট্যাক্সির হলুদ রং নিয়ে কারও যদি কৌতূহল হয় তবে বলে রাখা ভাল, হলুদ রং খুব সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রথম মেড-ইন-ইন্ডিয়া গাড়ি ও সেই সঙ্গে ভারতের প্রথম ডিজেল গাড়ি। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দমোটরে এই গাড়ি অ্যাসেম্বর করা হত। সেই সূত্র ধরে হিন্দমোটর পারিপার্শ্বিক এলাকা জমজমাট এক শহরে পরিণত হয়।
advertisement
অ্যাম্বাসেডর শুধুমাত্র যে ধনী পরিবারের আভিজাত্যের লক্ষণ ছিল একসময় তা নয়, মন্ত্রী- আমলাদের পরিচিতিও ছিল এই অ্যাম্বাসেডরে। এমনকী সরকারি কাজের বড় পদের অধিকারী হওয়ার একটা চিহ্ন ছিল, এই অ্যাম্বাসেডর নামক তাদের বাহন। কলকাতার হলুদ ট্যাক্সির প্রাথমিক রঙ শুধু হলুদ ছিল না। ছিল হলুদে-কালোয়। পরে যা শুধু হলুদে এসে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে স্বনিয়ন্ত্রিত মিটার বদলে তার জায়গায় মেশিন বসে, গাড়ির ভেতর। নইলে ট্যাক্সির মিটার নামানোর শব্দ, সে আরেক নস্টালজিয়া।
advertisement
জানা যায়, ২০১৩ সালে বিবিসির 'টপ গিয়ার' নামক একটা গাড়ি সংক্রান্ত প্রতিযোগিতায়, ব্রিটেন, আমেরিকা, সাউথ আফ্রিকা, জার্মানি, মেক্সিকো আর রাশিয়ার ট্যাক্সির সঙ্গে ভারতীয় ট্যাক্সিও অংশগ্রহণ করে। আর শেষ পর্যন্ত প্রায় অক্ষত দেহে যে গাড়িটি ফিনিশিং লাইন ছোঁয়ে, সে ছিল অবশ্যই এই হলুদ ট্যাক্সি। পরে আমেরিকার একটি মোটর মিউজিয়াম 'বিউলি'-তে এই অ্যাম্বাসেডর গাড়িটিকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। সেই সঙ্গে ফলকে লেখা হয়, 'দ্য উইনার ওয়াজ ইন্ডিয়াস ভার্চুয়ালি ইন্ডেস্ট্রাক্টেবল হিন্দুস্তান মোটরস অ্যাম্বাসেডর'।
advertisement
কলকাতার 'পথের পাঁচালী' জানতে হলে বা দেখতে হলে একবার চড়ে বসতেই হয় হলুদ ট্যাক্সিতে। ভিক্টোরিয়া, ময়দান, নিউ মার্কেট অথবা প্রেমিক-প্রেমিকার হাতে হাত রাখার লুকনো কাহিনিগুলো তার নস্ট্যালজিয়ায় হলুদ ট্যাক্সিকে অবিচ্ছেদ্য অংশ করে রেখেছে। এই শহরের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে ভেতর থেকে আস্বাদন করতে চাইলে হলুদ ট্যাক্সিকে সেখানেও অবহেলা করা যাবে না। সে কারণেই তো আজও কেউ কলকাতায় এলে, বাঙালির কাছে-মাঝে এলে হলুদ ট্যাক্সিতে চড়ে একটা সেলফি তুলতে ভোলে না।
advertisement
তবে শহরের ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে। কেন হল এমন পরিস্থিতি? ট্যাক্সি চালকদের সংগঠনের দাবি, 'প্রতিদিন হলুদ ট্যাক্সি কমে যাওয়ার কারণ, অর্থনৈতিক বিষয়। ২০১৮ সালে শেষ বার হলুদ ট্যাক্সির ভাড়া বেড়েছিল, তার পর পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। করোনা সংক্রমণের ধাক্কার পর সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু সরকার অনুমতি না দেওয়ায় হলুদ ট্যাক্সির ভাড়া বাড়েনি। পাশাপাশি, ১৫ বছর বয়সের যে সব ট্যাক্সি বাতিল হয়েছে, তাদের বিকল্প হিসেবে নতুন গাড়ির পারমিট দেওয়ার কথা পরিবহণ দফতরের। কিন্তু সেই পারমিটও দেওয়া হচ্ছে না।'
advertisement
ক্রমশ বাজার দখল করে নিচ্ছে এক ফোনে কাছে এসে দাঁড়ানো ওলা, উবর। ট্যাক্সি মালিকেরাই মানছেন, বাজারে ওলা, উবর আসার পরে যাত্রীদের কাছে ট্যাক্সির চাহিদা অনেক কমেছে। যার জেরে কমেছে রোজগার। পাল্লা দিয়ে তাই নতুন ট্যাক্সি বার করার আগ্রহও কমছে। এই শহরের তরুণ প্রজন্ম এখন ট্যাক্সির দিকে ফিরেও তাকাতে পছন্দ করে না। তাঁদের দাবি মুখের উপর বারে বারে না শুনতে কার ভাল লাগে বলুন তো? তা ছাড়া ওলা, উবরের মতো দুয়ারে পরিষেবাটাও তো ট্যাক্সির ক্ষেত্রে মেলে না, আর তার সঙ্গে ভাড়া দর করে প্রত্যাখ্যানের আখ্যান। হলুদ ট্যাক্সির ভবিষ্যৎ কী, তা জানতে অবশ্য সময়ের অপেক্ষা।