উপকূলের সমান্তরালভাবে সমুদ্রেই এগোবে অশনি। সমুদ্রেই কি বিলীন হবে অশনি! আপাতত ল্যান্ডফলের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা। পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে গতিপথ পরিবর্তন করছে অশনি। সমুদ্রে থেকে গতিপথ পরিবর্তন করার পরও শক্তি বাড়ছে না অশনির। উল্টে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই কারণেই উপকূলে আছড়ে পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন আবহাওয়াবিজ্ঞানীরা। বরং শক্তি হারিয়ে সমুদ্রেই বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে। (তথ্য: বিশ্বজিৎ সাহা)
ক্রমশই রহস্যময়ী হয়ে উঠছে ঘূর্ণিঝড় অশনি। চৌঠা মে দক্ষিণ আন্দামান সাগরে যে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছিল আজ সন্ধ্যায় সেই সিস্টেম ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে চলেছে। আপাতত অতি গভীর-নিম্নচাপ হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ক্রমশ পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ছুঁয়ে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে এগোবে। আজ সন্ধ্যায় পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা। তখন এর গতিবেগ প্রতি ঘন্টায় ৮৫ কিলোমিটার হতে পারে। (তথ্য: বিশ্বজিৎ সাহা)
রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত এই ঘূর্ণিঝড় উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোবে। সোমবার বিকেলে এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ১০০ কিলোমিটার হতে পারে। মঙ্গলবার সকালে এটি অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছাবে। উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ এবং দক্ষিণ ওড়িশা উপকূল বরাবর এর প্রভাব থাকবে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায়। এই সময়ে সর্বোচ্চ গতিবেগ ১০০ কিলোমিটার হতে পারে। সমুদ্রের ভেতর এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ১০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি থাকলেও অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িশা উপকূলের স্থলভাগে সেই সময় ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ বড়জোর ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার হতে পারে। (তথ্য: বিশ্বজিৎ সাহা)
মঙ্গলবার পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে এটি গতিপথ পরিবর্তন করবে। উত্তর-পশ্চিম গতিপথের বদলে এটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে এগোতে থাকবে। অর্থাৎ উত্তরঅন্ধ্র-দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূল ছেড়ে ক্রমশ উত্তর ওড়িশা উপকূলের দিকে এগোতে থাকবে। পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ছেড়ে ঘূর্ণিঝড় এগোবে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে দিকে। উপকূলের সমান্তরালভাবে সমুদ্রেই এগোবে অশনি। গতিপথ পরিবর্তন করে যতই এগোবে এই ঘূর্ণিঝড় , ততই এর শক্তি ক্ষয় হবে। এমনটাই অনুমান আবহাওয়াবিদদের। বুধবার এর গতিবেগ নব্বই কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় হয়ে যেতে পারে। এরপর ঘূর্ণিঝড় অশনি কোন পথে এগোয়? সেদিকেই তাকিয়ে আবহাওয়াবিজ্ঞানীরা। (তথ্য: বিশ্বজিৎ সাহা)
আবহাওয়াবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বুধবারের পর অশনি ক্রমশ সমুদ্রের গভীরে শক্তি ক্ষয় করতে পারে। অথবা শক্তি হারাতে হারাতে এটি বাংলা ও বাংলাদেশ উপকূলের দিকে আসতে পারে। আবার সমুদ্রে ই শক্তি সঞ্চয় করে নতুনভাবে গতিপথ তৈরি করে কিনা সেদিকেও নজর রাখছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে বুধবার পর্যন্ত এই ঘূর্ণিঝড়ের স্থলভাগের আছড়ে পড়ার কোন সম্ভাবনা দেখছেন না আবহাওয়াবিজ্ঞানীরা। অশনি-র প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হবে। দশ-ই মে মঙ্গলবার থেকে মৎস্যজীবীদের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। (তথ্য: বিশ্বজিৎ সাহা)
সরাসরি বা প্রত্যক্ষ প্রভাব না হলেও এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলায় হালকা ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা। মূলত বুধ ও বৃহস্পতিবার বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। উপকূলের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হালকা ঝোড়ো হওয়ার সম্ভাবনা। মঙ্গলবার থেকে উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। সোমবার আংশিক মেঘলা আকাশ, মঙ্গলবার থেকে মেঘলা আকাশের পরিমাণ বাড়বে। কলকাতাতেও মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার এর মধ্যে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। উপকূল ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টি হলেও বাকি জেলাগুলিতে হালকা মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। আজ দক্ষিণবঙ্গে এবং আগামীকাল উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকায় অস্বস্তিও বাড়বে দক্ষিণবঙ্গে। (তথ্য: বিশ্বজিৎ সাহা)
সোমবার থেকে বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। মঙ্গলবার মেঘলা আকাশ এবং বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি থাকবে। উপকূলের জেলাগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হবে। বুধবার থেকে শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গের উপকূলের জেলাগুলিতে দু-এক পশলা ভারী বৃষ্টি বিক্ষিপ্ত ঝোড়ো হাওয়া। অন্য জেলাতে হালকা মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে আজ বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি। উপরের দিকের জেলাগুলিতে বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি। মঙ্গলবার থেকে উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। কলকাতায় আজ আংশিক মেঘলা আকাশ। বৃষ্টির সম্ভাবনা সামান্য। তাপমাত্রা বাড়বে,আর্দ্রতা জনিত অস্বস্তিও বেশি থাকবে। আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের ১° বেশি। গতকাল বিকেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ,স্বাভাবিক। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ৪৫ থেকে ৮৯ শতাংশ। বৃষ্টি হয়েছে ১.৩ মিলিমিটার। (তথ্য: বিশ্বজিৎ সাহা)