Gaza Children: খাবার নেই, খিদেয় জ্বলছে পেট! দুর্ভিক্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে গাজা..মাটি-ময়লা খাচ্ছে বাচ্চারা

মাথার উপরে মুড়ি মুড়কির মতো উড়ে এসে পড়ছে আগুনের গোলা৷ পর পর এয়ারস্ট্রাইক৷ আর পেটে জ্বলছে খিদে৷ না আছে মাথাগোঁজার ঠাঁই, না থালায় দু’মুঠো খাবার৷ গাজাকে বর্তমানে পৃথিবীর ‘সবচেয়ে ক্ষুধার্ত’ দেশ বলল রাষ্ট্রপুঞ্জ৷ জানিয়ে দিল, গাজায় বসবাসকারী প্রতিটা মানুষই বর্তমানে দুর্ভিক্ষের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷

রাষ্ট্রপুঞ্জের অন্যতম মুখপাত্র জেনস লেরকে শুক্রবার বলেন, ‘‘গাজা বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্থ জায়গা৷ এই দেশ বা দেশের মতো জায়গাটার প্রতিটা মানুষ না খেতে পেয়ে মরার মতো পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ গাজার ১০০ শতাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে দাঁড়িয়ে৷’’

বিবিসি’র রিপোর্ট জানাচ্ছে, মার্চ মাসের ২ তারিখ থেকেই সমগ্র গাজায় সম্পূর্ণ ব্লকেড চালু করে ইজরায়েল৷ দু’সপ্তাহ পর ১৯ মে থেকে গাজার বিস্তারিত জায়গায় শুরু হয় ইজরায়েলের সামরিক অভিযান৷ হামাস পরিচালিত গাজার প্রশাসনের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ইজরায়েলের সামরিক অভিযানের জেরে মার্চ মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ৫৪ হাজার মানুষ মারা গিয়েছে৷

এই যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই ইজরায়েলের নিষেধাজ্ঞার জেরে গাজার দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য,পানীয়, পোশাক ইত্যাদি জরুরি পণ্যের অনুদানের কাজ৷ যার জেরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে চূড়ান্ত সমালোচিত হতে হয় ইজরায়েলের নেতানিয়াহুর সরকারকে৷ অবশেষে, অনুদান পৌঁছনোয় অনুমতি দেয় ইজরায়েল৷ কিন্তু, সেই অনুদানও প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই৷

খাবার না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায়, গুদামে, বাজারে, খাদ্য সংরক্ষণ কেন্দ্রে হামলা চালাচ্ছেন ক্ষুধার্ত গাজা বাসী৷ যে অনুদান কেন্দ্র থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে, সেখানে পড়ছে লম্বা লাইন৷ শেষ হয়ে যাচ্ছে খাবার৷ খাবার না পেয়ে ঘরে থাকা বাচ্চাদের জন্য মাটি নিয়ে ঘরে ফিরছেন মা৷ এমন অভিজ্ঞতাও জানিয়েছেন অনেকে৷ খাবার আনতে গিয়ে গুলি খেয়ে পরে যাচ্ছে মানুষ৷

হামাস চালিত গাজা প্রশাসনের গৃহমন্ত্রকের তরফে শুক্রবারই জানানো হয়, গাজা সিটির একটি জায়গায় মার্কেট প্লেসে লুটপাটের চেষ্টা করছিল ক্ষুধার্ত মানুষ৷ সেখানে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছিলেন গাজা পুলিশকর্মীরা৷ সেই সময় ইজরায়েলি এয়ারস্ট্রাইকে ৭ পুলিশকর্মীর মৃত্যুর হয়৷ এই বিমানহানায় ৪৪ জন সাধারণ মানুষ মারা গিয়েছেন৷ তার মধ্যে ২৩ জন সেন্ট্রাল বুরেজি ত্রাণশিবিরে ছিলেন৷ ইজরায়েলের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, শুক্রবার তারা গাজার কমপক্ষে ১২টি জঙ্গি ঠিকানা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে৷

অন্যদিকে, গত বুধবার রাষ্ট্রপুঞ্জের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের খাবার রাখার গুদামে হামলা চালিয়েছে একদল ক্ষুধার্ত মানুষ৷ ঘটনায় গুলি খেয়ে মারা গিয়েছেন দু’জন৷ রাফার একটি অনুদান কেন্দ্রের সামনেও খাবার বিতরণের সময় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ সেই ঘটনায় কমপক্ষে ৫০ জন মানুষ ইজরায়েলি সেনার গুলিতে মারা যান বলে অভিযোগ৷

রাষ্ট্রপুঞ্জে নিযুক্ত প্যালেস্তিনীয় দূত রিয়াদ মনসুর বুধবার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে গাজার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ বলেন, ‘‘শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে৷ মায়েরা তাদের নিথর শরীরটাকে আঁকড়ে জড়িয়ে থাকছে, চুলে বিলি কাটছে, ওদের সঙ্গে কথা বলছে৷ ওদের কাছে কী ভাবে ক্ষমা চাইব৷ এই দুঃখ কেউ কী ভাবে সহ্য করতে পারে?’’

বৃহস্পতিবারের আরও একটি ফুটেজে দেখা যায় খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের সামনে বিশাল লাইন৷ রয়াটার্সের ওই ফুটেজে এক গাজাবাসীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘যাঁরা কমবয়সী, তাড়াতাড়ি গিয়ে খাবার নিতে পারছেন৷ পিছিয়ে পড়ছেন বয়স্করা, মহিলারা৷ তারা পিছনে পড়ে যাচ্ছেন, খাবার পাচ্ছেন না৷’’ তেমনই এক মহিলা হানি আবেদ৷ বাড়িতে বাচ্চাগুলো খাবারের অপেক্ষায় বসে রয়েছে৷ অথচ তিনি খাবার জোগাড় করতে পারেননি৷ সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘মাটি-সুড়কি-ময়লা নিয়ে যাব বাচ্চাগুলোকে খাওয়াব।’’