শুধু স্ক্রিপ্ট লেখা নয়, অভিনয়ও করেছেন বহু ছবিতে, যৌবনে আগুন ঝরাত রূপ ! সলমন খানের বাবা সেলিম খানের কেরিয়ার ছবির চেয়েও রোমাঞ্চকর
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
Superstar Father Who Wrote Golden History Of Bollywood: আফগানিস্তানের পাহাড় থেকে শুরু হয়ে মুম্বইয়ের চলচ্চিত্র জগতে পৌঁছানোর আগে জীবন তাঁকে এমন তীব্র আঘাত দিয়েছিল, যার ক্ষত আজও রয়ে গিয়েছে।
বলিউডে অনেক প্রতিভাবান অভিনেতা এসেছেন এবং গিয়েছেন। কিন্তু এই ব্যর্থ নায়কের মতো অনুপ্রেরণামূলক জীবন খুব কম লোকেরই আছে, যিনি পর্দায় ব্যর্থ হলেও পর্দার আড়ালে একের পর এক সুপারহিট ছবি উপহার দিয়ে গিয়েছেন। আফগান রক্ত, শৈশবের ট্র্যাজেডি এবং একটি চ্যালেঞ্জিং অভিনয় কেরিয়ার সত্ত্বেও এই অভিনেতা বলিউডে নতুন জায়গা তৈরি করেছেন। তিনি নিজে সুপারস্টার হতে পারেননি, তবে তাঁকে সুপারস্টারদের জনক বলা হত। তিনি আর কেউ নন, সেলিম খান, যাঁর ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি এবং ব্যর্থ অভিনয় কেরিয়ারের মধ্য দিয়ে যাত্রা নীরবে হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী চলচ্চিত্র পরিবারের একটির ভিত্তি স্থাপন করেছিল। বলিউডের শাহেনশাহ নামে পরিচিত সলমন খানের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ২৯ বিলিয়ন ডলার বলে জানা যায়। কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে তাঁর বাবা সেলিম খানের সংগ্রাম ও বেদনা, যিনি কেবল একটি পরিবারেরই নয়, হিন্দি সিনেমার ভাগ্যও বদলে দিয়েছিলেন।
advertisement
আফগানিস্তানের পাহাড় থেকে শুরু হয়ে মুম্বইয়ের চলচ্চিত্র জগতে পৌঁছানোর আগে জীবন তাঁকে এমন তীব্র আঘাত দিয়েছিল, যার ক্ষত আজও রয়ে গিয়েছে। আজ সুপারস্টার সলমন যেখানে লাখ লাখ হৃদয়ে রাজত্ব করছেন, সেই জায়গা থেকেই তাঁর বাবার যাত্রার কথা একবার মনে করা যাক, যিনি ৫৫ টাকার ভাড়ার ঘর থেকে কোটি কোটি টাকার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। এটি ব্যর্থতা থেকে জন্ম নেওয়া আত্মবিশ্বাসের গল্প। সংগ্রাম, অধ্যবসায় এবং সাহসের মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে সুবিশাল খ্যাতিকেও ছাড়িয়ে যাওয়া একটি উত্তরাধিকারের গল্প।
advertisement
advertisement
তবে সেলিমের শৈশব ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক। গাঁও কানেকশনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমার মা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি আলাদা ঘরে থাকতেন। একদিন যখন আমি বাগানে খেলছিলাম, তিনি দূর থেকে আমাকে দেখে ডাকলেন, কিন্তু আমাকে তাঁর কাছে আসতে দিলেন না আমারও যক্ষ্মা হওয়ার ভয়ে, পরের বছরই তিনি মারা গেলেন।’’ মায়ের মৃত্যুর ঠিক এক বছর পর তাঁর বাবাও মারা গেলেন। দশ বছর বয়সে বাবা-মা হারানো সেলিম পরে বলেছিলেন, ‘‘এই কষ্টগুলি আমাকে এত শক্তিশালী করে তুলেছিল যে, আমি আমার সন্তানদের কখনও একাকী বোধ করতে দিইনি।’’
advertisement
ইনদওরে পরিবার ছিল মোটামুটি স্বচ্ছল, কিন্তু সেলিম একটি পয়সা ছাড়াই মুম্বই চলে আসেন। অ্যাংরি ইয়ং ম্যান তথ্যচিত্রে বলেছেন, তিনি মেরিন ড্রাইভের একটি গেস্ট হাউসে মাসে ৫৫ টাকায় অর্ধেক ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। সেই সময়ে তাঁর স্বপ্ন ছিল একদিন ১১০ টাকায় একটি পুরো ঘর ভাড়া করা। জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি পোশাক থেকে শুরু করে সিগারেট পর্যন্ত সব কিছুর বিজ্ঞাপনে মডেলিং করেছিলেন।এই সময়েই সলমা খানের (সুশীলা চরক) সঙ্গে তাঁর দেখা হয়, যিনি মাহিমের কাছে একটি বাড়িতে থাকতেন। সন্ধ্যাবেলায় হাঁটতে বেরিয়ে তাঁরা একে অপরের চোখে পড়েন, ধীরে ধীরে সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং অবশেষে ১৯৬৪ সালে পারিবারিক চাপ সত্ত্বেও তাঁরা বিয়ে করেন। তাদের বিয়ের এক বছর পর ১৯৬৫ সালে সলমন খান জন্ম নেন।
advertisement
১৯৬৭ সালে আরবাজ খান এবং তারপর সোহেল খান এবং আলভিরা খানের জন্ম হয়। অনেকেই জানেন না সেলিম খান প্রিন্স সেলিম নামে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি ১৯৬০ সালে বারাত ছবি দিয়ে রুপোলি পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন, এই সময়ে তিনি প্রতি মাসে ৪০০ টাকা পারিশ্রমিক পেতেন। তবে, ছবিটি ব্যর্থ হয়। এর পর তিনি প্রায় দুই ডজন ছবিতে ছোটখাটো ভূমিকায় অভিনয় করেন, যার মধ্যে রয়েছে তিসরি মঞ্জিল, সরহদি লুটেরা এবং দিওয়ানা ইত্যাদি। সেলিম নিজেই পরে অভিনয়ে ব্যর্থতা সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘একজন অভিনেতা হিসেবে অন-স্ক্রিন প্রজেকশনের অভাব ছিল। আমি অন্যদের কাছে চরিত্রটি ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে পারতাম, কিন্তু আমি নিজে তা করতে পারিনি।’’
advertisement
সলমাকে বিয়ের পর, সন্তানদের জন্মের পর সেলিম খান আবার প্রেমে পড়েন। হেলেনের সঙ্গে তাঁর প্রেম শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকে কাবলি খান ছবির সেটে, যেখানে সেলিম আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়া বিবাহবিচ্ছেদপ্রাপ্ত হেলেনকে সাহায্য করেছিলেন। হেলেন ১৯৫৭ সালে প্রেম নারায়ণ অরোরাকে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু ১৯৭৪ সালে এই বিয়ে ভেঙে যায়। গুজব এবং সামাজিক লজ্জা থেকে তাঁকে রক্ষা করার জন্য সেলিম ১৯৮১ সালে হেলেনকে পুনরায় বিয়ে করেন।
advertisement
সলমা এবং তাঁর সন্তানরা এই বিয়েতে অসন্তুষ্ট ছিলেন, কিন্তু সেলিম অবিচল ছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবার সেলিমকে বুঝতে পেরে হেলেনকে গ্রহণ করে। এর পর হেলেন অর্পিতাকে দত্তক নেন। অভিনয় ছেড়ে একসময়ে সেলিম চিত্রনাট্য লেখার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন, যা রাতারাতি সাফল্য এনে দেয়। জাভেদ আখতারের সঙ্গে গড়ে ওঠা সেলিম-জাভেদ জুটি হিন্দি সিনেমার গতিপথ বদলে দেয়। জঞ্জির, দিওয়ার, শোলে, ডন -এর মতো ছবিগুলো অমিতাভ বচ্চনকে কেবল সুপারস্টারই করেনি, বরং লেখকদের অধিকার এবং সম্মানের জন্যও লড়াই করেছিল।
advertisement
