ভেঙে ফেলে উঠেছে বহুতল, রাজেশ খান্নার সমুদ্রমুখী ‘অভিশপ্ত’ বাংলো আশীর্বাদ-এর ইতিহাস জানেন কি?
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
Rajesh Khanna’s ‘cursed’ sea-facing bungalow Aashirwad: ষাটের দশকে স্বপ্ননগরী মুম্বইয়ের বান্দ্রার কার্টার রোড কিন্তু এখনকার মতো অত জমজমাট ছিল না। এই এলাকায় বেশিরভাগ পার্সি এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদেরই বসবাস ছিল। এখানে সমুদ্রের তীরবর্তী সারি সারি বাড়ির মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত একটি বাংলো। কথিত ছিল, এই বাংলোটি ভূতুড়ে।
ষাটের দশকে স্বপ্ননগরী মুম্বইয়ের বান্দ্রার কার্টার রোড কিন্তু এখনকার মতো অত জমজমাট ছিল না। এই এলাকায় বেশিরভাগ পার্সি এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদেরই বসবাস ছিল। এখানে সমুদ্রের তীরবর্তী সারি সারি বাড়ির মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত একটি বাংলো। কথিত ছিল, এই বাংলোটি ভূতুড়ে। সাংবাদিক আলি পিটার জনের মতে, বাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। আর সস্তা দামেও কেউ সেই বাংলোটি কিনতে রাজি ছিলেন না। এই বাড়িটির কথা অভিনেতা রাজেন্দ্র কুমারের নজরে আনা হয়েছিল। এদিকে সেই সময় সবে হিন্দি ছবির দুনিয়ায় কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। সমুদ্রের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যাবে, এমন একটি বাংলোয় থাকার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন রাজেন্দ্র কুমার। সেই কারণে পর্যাপ্ত টাকা না থাকা সত্ত্বেও এই বাংলোটি কেনার জন্য একপ্রকার নাছোড়বান্দা হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
advertisement
সীমা সোনিক আলিমচাঁদের লেখা বই ‘Jubilee Kumar: The Life and Times of a Superstar’-এ বলা হয়েছে যে, ৬৫০০০ টাকা দাম রাখা হয়েছিল এই বাড়িটির। কিন্তু রাজেন্দ্র কুমারের হাতে কেবল ছিল ১০০০০ টাকা। তিনি বলেছিলেন, “আমি সঙ্গে সঙ্গে ১০০০০ টাকার একটি চেকে স্বাক্ষর করে দিয়েছিলাম। আর তা দালালের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এবার তো আমায় আরও ৫৫,০০০ টাকা দিতে হত। যা আমার অ্যাকাউন্টে ছিল না। তাই আমি বিআর চোপড়ার দ্বারস্থ হলাম। কারণ দিন কয়েক আগেই তিনি আমায় ‘ধুল কা ফুল’ এবং ‘কানুন’ নামে দুটি ছবির অফার দিয়েছিলেন। আমি দু’টি ছবির অফারই গ্রহণ করেছিলাম, তবে পারিশ্রমিকের বিষয়ে তখনও আমাদের একটি চুক্তি হওয়া বাকি ছিল।”
advertisement
বিআর চোপড়ার কাছে রাজেন্দ্র কুমার বলেছিলেন যে, তিনি দু’টি ছবিই করবেন। কিন্তু টাকাটা অগ্রিম দিতে হবে। এই নিয়ে তাঁদের চুক্তিও হয়। বইয়ে উল্লিখিত করা হয়েছে অভিনেতার বক্তব্য। তাঁর কথায়, “দু’টি ছবির জন্য তাঁরা একসঙ্গে যে পারিশ্রমিক দিচ্ছিলেন, সেটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাই চোপড়ার প্রোডাকশন কন্ট্রোলার সিভিকে শাস্ত্রী এবং আমার এটা নিয়ে বাদানুবাদ হয়েছিল। কারণ ততক্ষণে সুন্দর বাংলোটি কেনার ইচ্ছা জেগে উঠেছিল। চোপড়া সাহেবের কাছে আমি বলেছিলাম যে, শাস্ত্রীজি এবং আমি আমার পারিশ্রমিক নিয়ে একটা অচলাবস্থায় পৌঁছে গিয়েছি। তাহলে আমরা কি দয়া করে পারিশ্রমিকের পরিমাণ চূড়ান্ত করতে পারি? উনি প্রশ্ন করেন যে, শাস্ত্রী আপনাকে কত টাকা অফার করেছে? আমি বলেছিলাম যে, ২টি ছবির জন্য দেড় লক্ষ টাকা। কারণ আমি অন্যান্য প্রযোজকদের কাছ থেকে এক-একটি ছবির জন্য ১ লক্ষ টাকা করে পারিশ্রমিক নিচ্ছি। উনি বলেছিলেন, ঠিক আছে। আমি আপনাকে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার দেব দুটি ছবির জন্য। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা তখনই দিয়ে দেওয়ার শর্ত রেখেছিলাম। আর উনি সঙ্গে সঙ্গে আমায় টাকাটা দিয়েছিলেন। কার্টার রোডের বাংলোটির জন্য মালিকের কাছে তখনই আমি ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছিলাম।”
advertisement
কিন্তু বাংলোর বিষয়ে প্রচলিত ভূতুড়ে গল্পটা কিন্তু রয়েই গিয়েছিল। আলিমচাঁদের বইয়ে রয়েছে, রাজেন্দ্র কুমার যে দালালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, উনি বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছিলেন। উনি বলেছিলেন যে, সম্ভবত ভাড়াটে মাসের পর মাস ভাড়া দেননি। ফলে বাড়ির মালিক হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সেই কারণেই অন্য ভাড়াটে কিংবা ক্রেতাদের মধ্যে তিনি ভূতের গল্প ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। আলি পিটার জনের মতে, রাজেন্দ্র কুমার এই বিষয়ে অভিনেতা মনোজ কুমারের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। মনোজ কুমারও কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর প্রয়োজন হলে পুজো দিতে বলেছিলেন। এদিকে রাজেন্দ্র কুমারও বাড়িটি সংস্কার করেন। আর নিজের সদ্যোজাত কন্যার নামে বাড়িটির নাম রাখেন ‘ডিম্পল’। এরপর তাঁর কেরিয়ারের ব্যাপক উন্নতি হয়। জুবিলি কুমার তকমা পান। আরও একটি বাংলো কেনেন তিনি। সেটিরও নাম রাখেন ‘ডিম্পল’।
advertisement
advertisement
পিটার জনের মতে, সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে এই বাংলো কিনে নিয়েছিলেন রাজেশ। তবে ডিম্পল নামটি রাখতে পারতেন না বলেই নিজের বাংলোর নাম রাখেন ‘আশীর্বাদ’। আসলে রাজেন্দ্র কুমার বলেছিলেন যে, “আপনাকে নাম বদল করতেই হবে। ডিম্পল আমার কন্যার নাম। আর ওর নামেই আমরা কার্টার রোড বাংলোর নামকরণ করেছিলাম। এখন আমাদের নতুন বাড়িটির নামও ডিম্পল। কিন্তু আপনার নতুন বাড়ির জন্য রইল আমার আশীর্বাদ। প্রার্থনা করি, এই বাংলোটি আপনার জন্য চরম সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধি বয়ে আনুক।” (Photo: Firstpost)
advertisement
আর সত্যি সত্যিই রাজেশ খান্নার ভাগ্য পরিবর্তন হয়। এক সময়ে হিন্দি সিনেমার প্রথম সুপারস্টারের খেতাব ওঠে তাঁর মাথায়। শুধু কি তা-ই, আশীর্বাদের বাইরের রাস্তায় প্রতিদিন রাজেশ খান্নার একঝলক পাওয়ার জন্য ভিড় জমত ভক্তদের। গৌতম চিন্তামণির লেখা বই ‘ডার্ক স্টার: দ্য লোনলিনেস অফ বিং রাজেশ খান্না’-য় রাজেশ যখন আশীর্বাদে চলে আসেন, তখন যেন তাঁর রাজা হওয়ার রূপকথা সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
advertisement
রাজেশ খান্না বহু প্রযোজককে নিজের কিংবদন্তি দরবারের বাইরে অবিরাম অপেক্ষা করাতেন। দর্শকদের কেবল দেখা দেওয়ার সুযোগ দিতেন। নিজের চিরাচরিত ভঙ্গিতে সিল্ক লুঙ্গি-কুর্তা পরে বেরিয়ে আসতেন এবং একটি চেয়ারে বসতেন। তাঁর চেয়ারটি থাকত একটু উঁচুতে। যেন রাজা এবং প্রজাদের মধ্যে পার্থক্য করার জন্যই এই উপায়। কিছু কম সংখ্যক মানুষই ভিতরে প্রবেশের অনুমতি পেতেন। তাঁদের থেকেই তথ্য পেতেন বাইরে অপেক্ষারতরা।
advertisement
যদিও অমিতাভ বচ্চনের আগমনে রাজেশের কেরিয়ার ডুবতে শুরু করে। পিটার জনের মতে, “অবশেষে এক সময়ের এই ভূতুড়ে বাড়িটিই যেন গিলে খেতে শুরু করল তাঁকে। ফলে দিনের বেশিরভাগ সময়টাই তিনি নিজের লিঙ্কিং রোডের অফিসে কাটিয়ে দিতেন। শুধুমাত্র ঘুমানোর জন্য আশীর্বাদে ফিরতেন। এমনকী বাড়ির কোণার দিকের একটি ছোট্ট ঘরেই ঘুমোতেন তিনি। ২০১২ সালে প্রয়াত হন রাজেশ খান্না। আর তাঁর মৃত্যুর পর AllCargo Logistics-এর চেয়ারম্যানের কাছে ৯০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয় আশীর্বাদ। বর্তমানে আশীর্বাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি বহুতল।”