'ডাকঘর' শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে বাঙালির একরাশ আবেগ। তা সে রবীন্দ্রনাথ হোক বা প্রথম প্রেমের চিঠি। সবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে এই ডাকঘর। আজ হয়তো এই দুরন্ত সোশ্যাল মিডিয়া ও ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামের যুগে চিঠির কথা সেভাবে আর মনে পড়ে না। কিন্তু এখনও সেই গোলাপি খামে চিঠি, লেটার, পোস্ট কার্ড, মানি অর্ডার, টেলিগ্রাম, স্ট্যাম্প শব্দগুলি কোথাও যেন মগজ এবং মনিকোঠায় থেকে গিয়েছে।
চিঠি মানেই গল্প। আর সেই গল্পই নানা ভাবে নানা মোড়কে, এবার উঠে আসছে ওয়েব সিরিজ 'ডাকঘরে'-এ। ২৪ ফেব্রুয়ারি ওটিটিতে মুক্তি পেতে চলেছে ৭ এপিসোডের ওয়েব সিরিজ ডাকঘর। মুখ্য চরিত্রে দিতিপ্রিয়া রায় ও সুহোত্র মুখোপাধ্যায়। আরও অনেক চরিত্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন কাঞ্চন মল্লিক। পরিচালনায় অভ্রজিৎ সেন।
তাই বেছে নিয়েছেন ডাকঘরের মতো বিষয় যেখানে রয়েছে একরাশ চিঠি এবং প্রত্যেক চিঠির সঙ্গে জড়িয়ে এক একটা গল্প। সেই সব গল্পের আবেগ অনুভূতি দর্শকদের পৌঁছে দেবে এক অন্য জগতে। যা হয়তো খুব চেনা অথচ আজকাল আর তার নাগাল পাওয়া যায় না। আর সেখান থেকেই মোড় নেবে এক নতুন সম্পর্ক যার এক বিন্দুতে দিতিপ্রিয়া এবং অন্য বিন্দুতে সুহোত্র।
দিতিপ্রিয়ার কথায়, "আমি এই প্রজন্মের হলেও অত্যন্ত ওল্ড স্কুল। আমার কাছে এখনও অনেক জমানো চিঠি রয়েছে। আমার কাছে ডাকঘর, চিঠিগুলোর গুরুত্ব অনেকখানি। আমি আজও ফ্যানদের অনেক চিঠি সযত্নে রেখে দিয়েছি। সেই সব চিঠির মধ্যে এমন ভালোলাগা এবং আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে, যা একমাত্র পড়লেই অনুভব করা যায়। তাই 'ডাকঘর'-এ অভিনয় করা আমার কাছে এক বড় প্রাপ্তি। এখানে চিঠির ভাঁজে, গল্পের মোড়কে অনেক আবেগ লুকিয়ে রয়েছে। দর্শকরা দেখলেই বুঝতে পারবে এবং নিজেদের সঙ্গে একাত্ম করতে পারবে।"
প্রেমদিবসে এই সিরিজ নিয়ে কথা বলতে বলতে দিতিপ্রিয়া নিউজ18 বাংলাকে জানালেন, তাঁর বাড়িতে এখনও অনেক এমন চিঠি রয়েছে, যা কেবল লেখা আছে, কিন্তু পাঠানো হয়নি। ভবিষ্যতে আর কখনও পাঠানোও হয়তো হবে না। কাকে সেই চিঠি পাঠাতে চেয়েছিলেন দিতিপ্রিয়া? সে কথা অবশ্য স্পষ্ট করেননি নায়িকা। অন্যদিকে সুহোত্র স্কুলজীবনে একটি প্রেমপত্র পেয়েছিলেন, যার উত্তর দেওয়া হয়নি সেই সময়ে। যিনি পাঠিয়েছিলেন, অনেক আশা করে ছিলেন যে সুহোত্র চিঠির জবাব দেবেন।।কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি।
দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে প্রথমবার অভিনয় করছেন সুহোত্র মুখোপাধ্যায়। তার কাছে ডাকঘর এক বড় নস্টালজিয়া। তাঁর কথায়, "ছোটবেলায় যে চিঠি ডাকঘর দেখে এসেছি তা আজও অন্তরে রয়ে গিয়েছে। তবে এই ছবি শুধুমাত্র ডাকঘর বা পোস্ট অফিসের গল্প নয়। চিঠির ভিতরে অনেক আবেগ ও অনুভূতি লুকিয়ে রয়েছে। যা পড়তে পড়তে উঠে আসবে। অত্যন্ত সহজ সরল এক ওয়েব সিরিজ।"
কাঞ্চন মল্লিক জানালেন, "আজকাল ডাকঘর মানেই কোথাও যেন সঞ্চয়ের ঠিকানা। কিন্তু ডাকঘর যে একটা অন্য আবেগ তা এই প্রজন্ম হয়তো জানে না। খামের ভিতরের চিঠি অনেক কথা বলে। কত কাহিনি রয়েছে তার। টুকরো টুকরো কথা। যেমন, 'মা কেমন আছো?', 'খোকা কবে বাড়ি আসবি।' 'বাবা মানি অর্ডারটা পেয়েছ'। এইসব চিঠির লাইন শুধুমাত্র নিছক একটি চিঠি নয়। এগুলোর মধ্যে জীবনের আবেগ, সম্পর্ক, সূক্ষ্ম অনুভূতি খামে ভরা থাকে। কত ইমোশন ডেলিভার হয় চিঠির মাধ্যমে। কিন্তু যেসব চিঠি বিলি হয় না, সেখানে লুকিয়ে থাকে অন্য গল্প। তার জন্য দেখতে হবে ডাকঘর। আমাদের এই গল্পে সেক্স নেই, ডিটেকটিভ নেই, ভায়োলেন্সও নেই।