মুম্বই: বলিউডের সুন্দরী অভিনেত্রী ভিমি, যিনি ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে চলচ্চিত্রের পর্দায় তিনি দারুণ পপুলার ছিলেন৷ তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই তারকা হয়ে যেতে আর সময় নেননি৷ তার দুধ সাদা ত্বকের জেল্লা, এমন ছিল যে সবাই তাঁকে দেখেই থমকে যেত। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মধ্যেও অনেক বড় তারকাই তার সৌন্দর্য ও স্টাইল নিয়ে পাগল ছিলেন।
তবে অল্প বয়সেই মারা গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৩ সালে পঞ্জাবের জলন্ধরে জন্ম এবং ১৯৭৭ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর ৩৩ বছরের জীবন এবং ১০ বছরের চলচ্চিত্র কেরিয়ারে অনেক কষ্ট পেয়েছেন। তাঁর মৃত্যুও ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ভিমির মৃত্যুর প্রায় ৪০ বছর হয়ে গেছে, কিন্তু এখনও ৬০ এবং ৭০- এর দশকের সুন্দরী অভিনেত্রীদের কথা বলি, তখন ভিমির নাম উঠে আসে। তাঁর জীবন ছিল 'চার দিন চাঁদের আলো আবার অন্ধকার রাত' ৷ তখনকার দিনে ভিমি প্রতি ফিল্মের জন্য ৩ লক্ষ টাকা নিতেন পাশাপাশি ব্যবসা থেকেও কোটি টাকা আয় করতেন।
'হমরাজ' থেকে নজরে আসেন
ভিমি বি আর. চোপড়া-র ১৯৬৭ সালের ব্লকবাস্টার 'হমরাজ' দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে তার অভিষেক ঘটে। ক্রাইম সাসপেন্সে ভরপুর এই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন সুনীল দত্ত, রাজ কুমার, মুমতাজ এবং বলরাজ সাহনি। ছবিটি দীর্ঘদিন ধরে বক্স অফিসে ধামাকা পারফরম্যান্স করেছিল। এরই সঙ্গে সঙ্গে এই ছবিটি দিয়ে ভিমির বলিউডের জায়গাও পাকা হয়ে যায়৷ হমরাজের পর একাধিক হিট ছবিতে তাঁকে দেখা যায়৷ এরমধ্যে 'পতঙ্গ', 'বচন' এবং 'আব্রু' রয়েছে। তিনি মোট ১০টি ছবিতে কাজ করেছিলেন কিন্তু তাঁর বেশিরভাগ ছবিই ফ্লপ ছিল।
ভিমির আগেই বিয়ে হয়েছিল
বলিউডের এই হিট অভিনেত্রী সিনেমায় আসার আগেই ভিমি-র বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। কোটিপতি পরিবারে তাঁর বিয়ে হয়েছিল৷ শিল্পপতির ছেলে শিব আগরওয়ালের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। তবে শিব আগরওয়ালকে বিয়ে করতে গিয়ে তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধেও গিয়েছিলেন ভিমি। বিয়ের পর তার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে তাঁর বাবা। বিয়ের পর যখন ভিমি অভিনেত্রী হওয়ার দিকে এগিয়ে যান তখন তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার বিরুদ্ধে চলে যায়। যদিও তার স্বামী তখন তাকে সমর্থন করেছিলেন। এই বিয়ে থেকে ভিমির দুটি সন্তান ছিল।
মদ্যপ হয়ে উঠেছিল
চলচ্চিত্রে জগতে পা রাখার কিছুদিন পরেই ভিমি-র স্বামীর সঙ্গেও বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। কলকাতার বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বলিউড গসিপে জানা যায় চলচ্চিত্র প্রযোজক জলির সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে যায়। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রযোজক জলির কারণে তাঁরব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবন একেবারে ঘেঁটে যায়। পুরনো সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী চলচ্চিত্র এবং টেক্সটাইল ব্যবসা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা অভিনেত্রী ভিমি একেবারে ডুবে যান৷ যাঁর এক সময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় ছিল তিনি দেনার দায়ে ডুবে যান৷
পতিতাবৃত্তিতেও পা রাখেন
স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকেই তিনি ডিপ্রশনে পড়ে যান৷ এই সময়ে জলির সঙ্গে মদ্যপানের অভ্যাসে করে ফেলেছিলেন৷ এরপরে তাঁকে পতিতাবৃত্তিতে নামতে হয়। গসিপ অনুসারে, ভিমির ঘনিষ্ঠ কৃষ্ণা তাঁকে পতিতাবৃত্তিতে নামিয়েছিলেন৷ অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে ৩৩ বছর বয়সী ভিমির স্বাস্থ্যের অবনতি হয়৷ সেখানে লিভারের অবনতি হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য তাঁর কাছে টাকা ছিল না। জীবনের শেষ লড়াই তিনি মুম্বইয়ের নানাবতী হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ১৯৭৭ সালের ২২ আগস্ট ভিমি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর স্বামী বা সন্তান, কোন বন্ধু বা হাসপাতালে ছিল না। তাঁকে কাঁধ দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। জানা যায় জলি একজন চা বিক্রেতার ঠেলা গাড়িতে করে লাশ শ্মশানে নিয়ে যান।