আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে কোভিড (CoronaVirus Pandemic)। গত ২৪ ঘন্টাতেও আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় তিনলক্ষ মানুষ। সংক্রমণের পারদ কিছুটা নামলেও তা যে এখনও যথেষ্ট বেশি তা বলাই বাহুল্য। কোভিড থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল আগে থেকে টিকাকরণ (Vaccination)। সেই পথেই আশার নতুন আলো দেখাচ্ছে স্পুটনিক ভি। অবশেষে পুরোদমে রাশিয়ার স্পুটনিক ভি (Sputnik V) টিকাকরণ শুরু হয়ে গিয়েছে দেশে।
এই টিকাকরণের জন্য অ্যাপোলো হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হল ডঃ রেড্ডি'স ল্যাবোরেটরিজ। এরপরেই হায়দরাবাদে শুরু হয়ে গেল স্পুটনিক ভি-এর টিকাকরণ। মঙ্গলবার বিশাখাপট্টনমে শুরু হল এই তৃতীয় ভ্যাকসিনের মাধ্যমে টিকাকরণ। এই টিকাকরণের জন্য নাম নথিভুক্ত করা যাবে কোউইনের মাধ্যমেই। প্রাথমিকভাবে দেওয়া হবে প্রায় দেড় লক্ষ ডোজ। গত ১৪ মে এই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয় ডক্টর রেড্ডিস ল্যাবের আধিকারিক দীপক শাপরাকে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই দ্বিতীয় দফায় রাশিয়ার কোভিড-১৯ টিকা স্পুটনিক-ভি এসে পৌঁছয় হায়দরাবাদের বিমান বন্দরে। এর আগে প্রথম দফার স্পুটনিক-ভি দেশে এসেছিল ১ মে। ১৪ মে, ডঃ রেড্ডি'স ল্যাবরেটরিজ ভারতের বাজারে স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিনের বাণিজ্যিকীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে। ওই দিনই প্রথম ডোজ দেওয়া হয় হায়দরাবাদে। আগামী দিনে দেশজুড়ে রেড্ডিস ল্যাবের প্রায় ছটি ইউনিট শুরু করবে টিকা তৈরির কাজ। প্রথম দু’টি ইউনিটের টিকা সর্বসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে জুলাই মাসের মধ্যেই। অন্তত এমনটাই মনে করছেন অধিকর্তারা।
রেড্ডি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আমদানিকৃত এই ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজের দাম হবে ৯৪৮ টাকা। তবে সঙ্গে যোগ হবে ৫ শতাংশ জিএসটি। যদিও এখন টিকার দাম অনেকটাই বেশি। ৫% জিএসটি থাকার কারণে টিকার প্রথম ডোজ নিতে গেলে খরচ হবে প্রায় ৯৯৫ টাকা ৪০ পয়সা। যদিও কো উইন আপ অনুযায়ী স্পুটনিক ভি এর প্রতি ডোজের দাম ধার্য হয়েছে ১২৫০ টাকা। অ্যাপোলো হাসপাতালের প্রশাসনিক চার্জ যুক্ত করেই এই দাম রাখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, আগামী দিনে ভারতে উৎপাদন হলে টিকার দাম কমতে পারে অনেকটাই।
অ্যাপোলো হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট কে হরিপ্রসাদ বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “আপাতত বেসরকারি ক্ষেত্রেই স্পুটনিক’ ভি টিকাটি দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ডক্টর রেড্ডিসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে অ্যাপেলো হাসপাতাল।” তিনি জানিয়েছেন দেশের প্রায় ৬০টি জায়গায় টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। হায়দ্রাবাদ ও বিশাখাপত্তনমের পর টিকা দেওয়া হবে কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, পুনে আমেদাবাদ ও চেন্নাইতে। তিনি বলেন, “আমরা আশা রাখছি এই উদ্যোগে টিকার ঘাটতি মেটানো যাবে এবং দেশের বড় অংশের মানুষকে খুব দ্রুত টিকার ডোজ দেওয়া সম্ভব হবে।”
কোভ্যাকসিন এবং কোভিশিল্ডের মত দেশীয় টিকার পাশাপাশি এবার থেকে সাধারণ মানুষের জন্য দেওয়া শুরু হল স্পুটনিক’ ভিও। এই টিকার প্রয়োগ শুরুর ফলে বর্তমানে দেশে মিলবে তিন ধরনের কোভিড টিকা। কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন ও স্পুটনিক ভি। অ্যাডিনোভাইরাস সম্বলিত টিকা স্পুটনিক ভি দিয়েই রাশিয়ায় গণ টিকাকরণ হয়েছে। এই টিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বের ৫৯টিরও বেশি দেশ। এই টিকা গ্যাম-কোভিড-ভ্যাক নামেও পরিচিত। মূলত দুটি অ্যাডিনোভাইরাস দিয়ে তৈরি স্পুটনিক ভি।
এই মুহূর্তে দেশে টিকার উৎপাদন করছে ভারত বায়োটেক এবং সেরাম ইনস্টিটিউট। প্রবল চেষ্টার পরেও চাহিদামত টিকা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না কিছুতেই। কারণ এক মাসে মাত্র ছয় থেকে সাত কোটি টিকা উৎপাদন করতেই সক্ষম এই দুই সংস্থা। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছিলেন এভাবে চললে সারা ভারতকে টিকা দিতে সময় লেগে যাবে প্রায় দু’বছর। এখন স্পুটনিক’ ভি বাজারে আশায় চাহিদার ঘাটতি কিছুটা কমবে। ফের একবার কড়া লকডাউনের জেরে এই মুহূর্তে আবারো ধাক্কা খেলো অর্থনীতি। মানুষের জীবনকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে দ্রুত টিকাকরণ তাই একান্ত জরুরী।