Gold: গোল্ড লোনে নতুন নিয়ম আনতে চলেছে RBI, ঋণগ্রহীতা এবং ঋণদাতা উভয়েরই যা জানা উচিত
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
Gold Loan Rules: রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসিগুলি গোল্ড লোনের ক্ষেত্রে একতরফাভাবে কাজ করছে। বুধবার তিনি বলেন যে মুদ্রা নীতি কমিটির বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক শীঘ্রই গোল্ড লোনের জন্য বিস্তৃত নিয়ম ঘোষণা করবে
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, সংক্ষেপে আরবিআই-এর মানিটরি পলিসি মিটিং নিয়ে সব সময়েই যে কৌতূহল তুঙ্গে থাকে, তা রেপো রেটের দিকে ইঙ্গিত করে। সবাই আশা করে থাকেন যে আরবিআই রেপো রেট কমাবে। বলতেই হয়, নাগরিকের প্রত্যাশা পূরণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। আরবিআই-এর মানিটরি পলিসি মিটিংয়ে একটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা এই বিষয়ে ঘোষণা করেছেন। রেপো রেট ০.২৫% (২৫ বেসিস পয়েন্ট) হ্রাসের ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নাগরিকদের জন্য সুখবর এখানেই কেবল শেষ নয়। রেপো রেট কমলে হোম লোন, কার লোন, পার্সোনাল লোনের ইএমআই কমে যায় ঠিকই। তবে, এবার গোল্ড লোনের ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের পক্ষপাতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।
advertisement
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসিগুলি গোল্ড লোনের ক্ষেত্রে একতরফাভাবে কাজ করছে। বুধবার তিনি বলেন যে মুদ্রা নীতি কমিটির বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক শীঘ্রই গোল্ড লোনের জন্য বিস্তৃত নিয়ম ঘোষণা করবে। এই নিয়মগুলো ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসিগুলোর ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে তৈরি হবে, যাতে এই লোনও অন্যান্য ঋণের মতো নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
advertisement
খসড়া পত্রের মূল প্রস্তাবনা: সোনা ঋণ নিয়মগুলি ঋণদাতার ক্রেডিট এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতির অংশ হতে হবে। নীতিগুলিতে সোনা ঋণ পোর্টফোলিওগুলির জন্য একক-ঋণগ্রহীতা এবং খাতগত সীমা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। ঋণদাতাদের স্পষ্ট মূল্যায়ন মান, সোনা বিশুদ্ধতার পরীক্ষা এবং ঋণের শেষ ব্যবহারের পর্যবেক্ষণের জন্য প্রক্রিয়া সংজ্ঞায়িত করতে হবে। সমস্ত ঋণ ঋণগ্রহীতার পরিশোধ ক্ষমতার সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে হবে। যথাযথ ক্রেডিট মূল্যায়ন এবং যথাযথ পরিশ্রম বাধ্যতামূলক। ঋণদাতাদের ঋণের ব্যবহার পর্যায়ক্রমে পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং রেকর্ডে প্রমাণ রাখার জন্য সিস্টেম স্থাপন করতে হবে।
advertisement
ঋণ প্রদানের উপরে বিধিনিষেধও দেখে নেওয়া যাক এই প্রসঙ্গে: - প্রাথমিক ভাবে সোনা, রুপো, অথবা সোনা বা রুপো দ্বারা সমর্থিত আর্থিক সম্পদের বিপরীতে অগ্রিম মঞ্জুর করা যাবে না।- ঋণগ্রহীতারা ভোগ এবং আয় উৎপাদন উভয় উদ্দেশ্যেই একযোগে ঋণ নিতে পারবেন না।- ঋণদাতারা মালিকানা নিয়ে বিতর্ক থাকলে সেই সোনা গ্রহণ করতে পারবেন না বা জামানত হিসাবে পুনরায় বন্ধক রাখা সোনা গ্রহণ করতে পারবেন না।
advertisement
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরেও (30 September 2024) গোল্ড লোনের বর্তমান কর্মপদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। সেই সময়, আরবিআই তার প্রতিবেদনে ঋণের উৎপত্তি, সোনার মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, অর্থ ব্যবহারের পর্যবেক্ষণ, নিলামের স্বচ্ছতা এবং ঋণ-থেকে-মূল্য (এলটিভি) অনুপাতের ত্রুটিগুলো তুলে ধরেছিল। এখানেই শেষ নয়, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বর্তমান অগ্রিম ঋণ ব্যবস্থা, যার মধ্যে আংশিক পরিশোধের নীতিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
advertisement
এই প্রসঙ্গে গোল্ড লোনের বর্তমান কর্মপদ্ধতি কী, তা উল্লেখ করা প্রয়োজন। ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসি-র তরফে গোল্ড লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে একটি বুলেট পরিশোধ মডেল গ্রহণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ, যে গ্রাহক ঋণ নেন তিনি প্রতি মাসে কেবল তার সুদ পরিশোধ করেন। তবে, ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধের পরেই কেবল তাঁদের গয়না ফেরত দেওয়া হবে। অবশ্য, গ্রাহক ইচ্ছা করলে, এর মধ্যে আংশিক অর্থ প্রদানও করতে পারেন, অর্থাৎ বেশ কিছুটা টাকা একসঙ্গে জমা করতে পারেন, এটা তাঁর সামর্থ্যের উপরে নির্ভর করে।
advertisement
এই পদ্ধতিতে বদল এনে ইএমআই-এর মতো ব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে এবার। কেন না, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বিশ্বাস করে যে বর্তমান গোল্ড লোন মডেলটি ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসিগুলোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে সাধারণ গ্রাহকরা আর তাঁদের গয়না ছাড়িয়ে নিতে পারেন না। এটা যদি একদিকে গ্রাহকের ক্ষতি ডেকে আনে, ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসিগুলোও তেমনই তাদের ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে যায়। এই পরিস্থিতি এড়াতে, হোম লোন এবং কার লোনের মতো গোল্ড লোনের ক্ষেত্রেও ইএমআই ব্যবস্থা করা শুরু করা যুক্তিযুক্ত। এর ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে সোনার ঋণ পরিশোধ করা সহজ হবে। এটি ডিফল্টের মতো পরিস্থিতিও প্রতিরোধ করবে সন্দেহ নেই।
advertisement
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার এই সিদ্ধান্ত সোনার দামের ওঠানামার ঝুঁকিও এড়াতে সক্ষম হবে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের। আসলে, সোনার দাম যে কখনই স্থির থাকে না, তা প্রায় সবারই জানা! বর্তমান পরিস্থিতির দিকে যদি চোখ রাখা যায়, তাহলে দেখা যাচ্ছে যে তা খুবই বিক্ষিপ্তভাবে ওঠা-নামা করছে। কখনও তা সর্বকালের সর্বোচ্চ দরের রেকর্ড গড়ছে, তার পরেই আবার নীচে নেমে আসছে। এই দামের ওঠা-নামা নিঃসন্দেহেই গ্রাহকদের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে ওঠে। নিতান্ত বাধ্য না হলে, দুরূহ আর্থিক সঙ্কটে না পড়লে কেউ গোল্ড লোন নেন না, বাড়ির সোনা বাঁধা দিয়ে দরকারের টাকা জোগাড় করা এখনও এই দেশের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর শেষ পদক্ষেপ!
advertisement
অথচ, শুরুর সময় থেকেই এখনও পর্যন্ত বর্তমান গোল্ড লোন মডেলটি সোনার দামের ওঠানামার সঙ্গে জড়িত এবং সে কারণেই গ্রাহকের জন্য ঝুঁকি বহন করে। যদি সোনার দাম দ্রুত কমে যায়, তাহলে এলটিভি খুবই কম হবে। একইভাবে, সোনার দাম বাড়লে গ্রাহক তাঁদের গয়নার জন্য কম মূল্য পাবেন। কারণ তাঁরা যে ঋণ পাবেন তা পুরনো সোনার দামের উপর নির্ভর করে। তাই এবার গোল্ড লোনের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসিগুলো ঋণের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে।