#দুর্গাপুর: দুর্গাপুর শহরে নগরায়নের জেরে সবুজের সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। তবে শহরে সবুজের পরিমাণ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের বন দফতর। কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে দুর্গাপুরে গড়ে উঠতে চলেছে বিশাল সবুজক্ষেত্র। কেন্দ্র সরকারের প্রকল্পের অধীনে রাজ্য বন দফতর বিশাল এলাকার ওপর গড়ে তুলবে নগরবন। খুব শীঘ্রই শুরু হবে কাজ। প্রায় ২৫ হেক্টর জমির ওপর গড়ে উঠবে নগরবন। দুর্গাপুর নগর নিগমের অন্তর্গত পারুলিয়া এলাকায় এই বিশাল ইকো পার্ক গড়ে তোলা হবে। যেখানে সবুজের সমারোহের সঙ্গে মানুষের মিলনক্ষেত্র গড়ে উঠবে।
কেন্দ্রীয় সরকার শহরে বনাঞ্চলের পরিমাণ বাড়াতে একটি বিশেষ প্রকল্প ঘোষণা করেছে। আরবান ফরেস্ট তৈরি করতে সেখানে অর্থ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্র সরকারের এই প্রকল্পে বেছে নেওয়া হয়েছে মোট ৭৫ টি শহর। যার মধ্যে স্থান পেয়েছে রাজ্যের পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর। উল্লেখ্য, নগরবন তৈরির জন্য সমস্ত কাজকর্ম করতে হচ্ছে রাজ্যের বন দফতরকে। বন দফতরের জমিতে গড়ে উঠছে এই নগরবন। মূলত, পুরসভা বা পুরনিগম এলাকাগুলিতে এই নগর গড়ে তোলা যাবে। দুর্গাপুর পুরসভার অধীনে থাকা পারুলিয়া মৌজায় এই নগরবন গড়ে তোলা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- অপরাধীদের যম যিনি, তিনি অর্ণবের ভগবান! মানবিকতার এ এক অনন্য নজির দুর্গাপুরে!
জানা গিয়েছে, নগরবন প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন নগরবন গড়ে তুলতে হলে, তা তৈরি করতে হবে পুরসভা বা পুরনিগম এলাকার মধ্যেই। তাছাড়া নগরবন গড়ে তোলার জন্য সর্বনিম্ন ১০ হেক্টর জমি থাকতে হবে। সর্বোচ্চ জমির পরিমাণ ৫০ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে কেন্দ্র সরকার চার লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করেছে। অর্থাৎ দুর্গাপুরে গড়ে উঠতে চলা এই নগরবন প্রকল্পের জন্য মোট এক কোটি টাকা দেবে কেন্দ্র সরকার।
আরও পড়ুন- ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনোলজিতে ভবিষ্যৎ গড়তে চান? রয়েছে দারুণ সুযোগ!
বন দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই দুর্গাপুরে এই নগরবন গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্র সরকারের অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে জমিও। তার জন্য ইতিমধ্যেই কিছু অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই, এই নগরবন গড়ে তোলার কাজ শুরু হবে। জানা যায়, চলতি বছরে দুর্গাপুজোর আগেই এই নগরবন প্রক্রিয়ার কাজ অনেকখানি সম্পন্ন হয়ে যাবে। তবে এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ গড়ে তোলার জন্য যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা শেষ করতে প্রায় তিন থেকে চার বছর সময় লাগতে পারে।
• কিন্তু আসলে কি এই নগরবন প্রকল্প?
বন দফতর সূত্রে খবর, শহর এলাকায় বনাঞ্চলের পরিমাণ বাড়াতে এই প্রকল্প নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যার বাস্তবায়ন করছে রাজ্যের বন দফতর। মূলত শহরের মধ্যে নির্দিষ্ট একটি এলাকাজুড়ে এখানে সবুজায়ন করা হবে। যেখানে বড় বড় বিভিন্ন গাছ থাকবে। পাশাপাশি থাকবে প্রচুর ছোট ছোট গাছ। একই জায়গায় থাকবে কিছু মরশুমি ফুলের গাছ। থাকবে মরশুমি ফলের গাছও। তাছাড়াও প্রকৃতির সঙ্গে যাতে মানুষ নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে, তার জন্য তৈরি করা হবে একটি ইকোপার্ক। এর উদ্দেশ্য শহরে সবুজায়ন বাড়ানোর পাশাপাশি শহরবাসীর কাছে নতুন গন্তব্য তৈরি করা। যেখানে গিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে আত্মস্থ হওয়া যাবে। তা ছাড়াও প্রাতঃভ্রমণের ব্যবস্থার পরিকল্পনাও থাকছে।
অন্যদিকে এখানে বিরল কিছু গাছ লাগানো হবে। যেখান থেকে চারপাশে দেখতে না পাওয়া বিভিন্ন উদ্ভিদ সম্পর্কে অনেকেই ধারণা পাবেন। নগরবন প্রকল্পের এলাকায় কিছু জলাশয়ও থাকবে। যেখানে জলের ওপর বেঁচে থাকা উদ্ভিদ যেমন পদ্ম, শালুক ইত্যাদি গাছের চাষ করা হবে।
• দুর্গাপুর নগরবন কেমন ভাবে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে?
জানা গিয়েছে, কেন্দ্র সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী এই নগরবন গড়ে তোলা হবে দুর্গাপুর শহরের পারুলিয়া মৌজা এলাকায়। সেখানে বিভিন্ন রকম বড় বড় গাছ লাগানো হবে প্রাথমিকভাবে। তারপর লাগানো হবে ছোট ছোট গাছ। ফুলের গাছ, ফলের গাছও লাগানো হবে। তা ছাড়াও থাকবে ভেষজ নানারকম গাছ। অন্যদিকে নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করে বেশ কিছু বিরল গাছ থাকবে। এই নগরবন এলাকায় জলাশয় থাকবে। যেখানে জল নির্ভর উদ্ভিদগুলি রোপণ করা হবে।
অন্যদিকে বিভিন্ন রকম বাঁশ গাছ লাগানো হবে। এখানে একটি ইকো পার্ক গড়ে তোলা হবে। যেখানে থাকবে নানারকম ব্যবস্থা। নগরবন এলাকায় ঘোরাঘুরি করার জন্য কিছু সাজানো-গোছানো রাস্তা থাকবে। পাশাপাশি ছোটদের জন্য পার্কের ব্যবস্থা করা হবে সেখানে। থাকবে কিছু বসার জায়গা। পুরো পার্কটিকে কেন্দ্র করে একটি রাস্তা বানানো হবে প্রাতঃভ্রমণ এবং সাইকেলিং করার জন্য। প্রাথমিকভাবে এই সমস্ত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে পরবর্তী ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে আরও সাজিয়ে তোলা হবে এই নগরবন।
এই বিষয়ে ডিএফও নীলরতন পান্ডা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই নগরবন গড়ে তোলার কাজ শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে ফেন্সিং এবং বড় বড় গাছগুলি লাগানোর কাজ করা হবে। পুরো এলাকাটিকে সবুজে মুড়ে ফেলা হবে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিশাল পরিমাণ ফাঁকা জায়গা না থাকার কারণে, শহরের এক প্রান্তে নগরবন গড়ে তোলার জায়গাটি বেছে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র সরকারের বরাদ্দ করা অর্থে ও রাজ্য বন দফতরের সহযোগিতায় এই নগরবন গড়ে উঠবে।
সবুজায়ন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির মিলনস্থল হিসেবে গড়ে উঠবে এই জায়গা। পুজোর আগেই এই নগরবন গড়ে তোলার কাজ অনেকটা সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন। পরবর্তীতে এলাকাটি সাজিয়ে তুলতে আরও অর্থ প্রয়োজন বলেও তার ধারণা। সেই জন্য বিষয়টি নিয়ে তিনি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন। যদিও প্রাথমিক কিছু কাজ শেষ হওয়ার পরেই এই আলোচনা করা হবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
এছাড়াও এই বিষয়ে ডিএফও জানিয়েছেন, এই নগরবন সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন সংস্থা চাইলে বিনিয়োগ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকেও সহযোগিতা নেওয়া হবে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাও এই নগরবন গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগ করতে পারবে। তার জন্য বন দফতরের সঙ্গে মৌ স্বাক্ষরিত হবে বলে জানিয়েছেন নীলরতন বাবু। স্বাভাবিকভাবেই নগরবন গড়ে উঠলে দুর্গাপুরবাসীর কাছে তা যে এক নতুন গন্তব্য হবে, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি এই নগরবন, দুর্গাপুরের সবুজায়ন বাড়িয়ে দূষণের মাত্রা অনেক কম করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Nayan Ghosh
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Durgapur, Eco Park, Forest Department, West Bardhaman