হোম /খবর /খেলা /
দুর্নীতি-নারী হেনস্থা-মাদক-চড়-হাতাহাতি, আইপিএলে বাদ যায়নি কোনও বিতর্ক

IPL 2023: দুর্নীতি-নারী হেনস্থা-মাদক-চড়-হাতাহাতি, আইপিএলে বাদ যায়নি কোনও বিতর্ক, ফিরে দেখা কলঙ্কিত অধ্যায়

আইপিএলের সেরা বিতর্ক

আইপিএলের সেরা বিতর্ক

IPL 2023: শুক্রবার থেকে শুরু আইপিএলের ১৬ তম মরসুম। টানটান ক্রিকেটে সঙ্গে গ্ল্যামারের ককটেলের স্বাদ উপভোগ করতে তৈরি ক্রীড়া প্রেমিরা। তবে ক্রিকেট, গ্ল্যামার, বিনোদন থাকলেও গত ১৫টি মরসুমে বিতর্ক কখনই পিছু ছাড়েনি আইপিএলের।

  • Share this:

কলকাতা: শুক্রবার থেকে শুরু আইপিএলের ১৬ তম মরসুম। টানটান ক্রিকেটে সঙ্গে গ্ল্যামারের ককটেলের স্বাদ উপভোগ করতে তৈরি ক্রীড়া প্রেমিরা। তবে ক্রিকেট, গ্ল্যামার, বিনোদন থাকলেও গত ১৫টি মরসুমে বিতর্ক কখনই পিছু ছাড়েনি আইপিএলের। কী না ঘটেনি। সব ধরনের বিতর্কের অভিযোগই উঠেছে ভারতীয় কোটিপতি লিগকে ঘিরে। দুর্নীতি-নারী হেনস্থা-মাদক-চড়-হাতাহাতি বাদ যায়নি কোনও কিছুই। আরও এক মরসুম শুরুর প্রাক্কালে ফিরে দেখা যায় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সেরা বিতর্কিত ঘটনাগুলি।

শ্রীসন্থকে চড় ভাজ্জির: আইপিএলের প্রথম মরশুমেই ঘটে গিয়েছিল একটি বড়সড় বিতর্কিত ঘটনা, যা কিনা এখনও আইপিএলের ইতিহাসে অন্যতম বিতর্কিত ঘটনা হিসাবে গন্য হয়। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে খেলতে নামা পেসার শ্রীশান্থকে মাঠের মধ্যে সকলের সামনে চড় মেরেছিলেন তৎকালীন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের স্ট্যান্ড-বাই অধিনায়ক হরভজন সিং। যদিও এমনটা কেন করেছিলেন হরভজন তা আজও পুরোপুরি পরিস্কার নয়। হরভজনের এর জন্য শাস্তি হয়েছিল। ক্ষমাও চেয়েছিলেন ভাজ্জি। বর্তমানে তাদের সম্পর্ক ভালো।

পাকিস্তানি ক্রিকেটার নিষিদ্ধ: ২০০৮ সালে মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তান তাদের খেলোয়াড়দের ভারতে এসে আইপিএলে যোগদান করা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করে। ফলে শাহিদ আফ্রিদি, শোয়েব আখতার, ইউনিস খান, শোয়েব মালিকদের মতো খেলোয়াড় যারা আইপিএলের বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজির সাথে যুক্ত ছিলেন তাদের ভারতে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এখনও পর্যন্ত আইপিএলে নিষিদ্ধ পাক ক্রিকেটার।

ললিত মোদী বিতর্ক: ২০১০ সালে আইপিএলের জন্মদাতা এবং চেয়ারম্যান ললিত মোদি-কে দুর্নীতির অভিযোগে সাসপেন্ড করে বিসিসিআই। পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সারা জীবনের জন্য ক্রিকেট সংক্রান্ত কোনরকম পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিসিসিআই। এরপরই দেশ ছাড়েন লোলিত মোদী।

চিয়ারলিডারের অভিযোগ: সাউথ আফ্রিকা থেকে আসা চিয়ারলিডার গ্যাব্রিয়েলা পাসকুয়ালতো চতুর্থ আইপিএল মরশুমে তার প্রতি কিছু ক্রিকেটারের অশালীন আচরণের কথা জানিয়েছিলেন। কোন এক ম্যাচ শেষের পর পার্টিতে তার সঙ্গে ক্রিকেটারদের কিছু আপত্তিজনক ব্যাবহারের কথা জানান। পরে তাকে আইপিএল থেকে বরখাস্ত করা হয়। এ নিয়ে জলঘোলা বড় কম হয়নি।

সৌরভ-বুকানন দ্বন্দ্ব: ২০০৮-২০১১ সাল। কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে ২০০৮ সালে তৎকালীন কোচ জন বুকাননের 'মাল্টিপল ক্যাপ্টেন্স থিওরি'-র জন্য মহারাজের সঙ্গে তাঁর বিরোধীতা প্রকাশ্যে এসেছিল। এরপরের বছর সৌরভ দলের পূর্ণ দায়িত্ব পেলেও পারফরম্যান্সের উন্নতি হয়নি। ফলে ২০১২ সালের নিলামে বেহালার বাঁহাতি অবিক্রিত রয়ে যান। এরপরেই গোটা বাংলা ও ইডেন গার্ডেন্স চত্ত্বর জুড়ে 'নো দাদা নো কেকেআর' স্লোগান উঠেছিল।

ওয়াংখেড়েতে নিষিদ্ধ কিং খান: কলকাতা নাইট রাইডার্স মুম্বাইয়ে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে গেলে ওয়াংখেড়ের সিকিউরিটি গার্ডদের সাথে অভব্য আচরণের অভিযোগ ওঠে মদ্যপ শাহরুখ খানের বিরুদ্ধে। যদিও সেই দাবি মানতে নারাজ ছিলেন কিং খান। পরে পাঁচ বছরের জন্য তাকে ওয়াংখেড়েতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মুম্বাই ক্রিকেট এসোসিয়েশন।

কোহলি-গম্ভীর হাতাহাতি: সালটা ২০১৩। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আইপিএল-এর খুনখারাপি ম্যাচে কেকেআর বনাম আরসিবি। ম্যাচের দশ নম্বর ওভারে আউট হয়ে সাজঘরের ফেরার বদলে সেদিন বিরাট কোহলি এগিয়ে গিয়েছিলেন এক্সট্রা কভারের দিকে। যেখানে দাঁড়িয়ে কেকেআর-এর নেতা গৌতম গম্ভীর। বিরাট কিছু একটা বলতেই গম্ভীর তেড়ে যান তাঁর দিকে। পাল্টা মারমুখী হয়ে ওঠেন বিরাটও। কী হচ্ছে বা হতে পারে, তা বুঝতেই সময় চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভর্তি দর্শক।

লিউক পমারব্যাশ আখ্যান: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একজন মহিলাকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। তার সঙ্গীর ওপর হাত তোলারও অভিযোগ ছিল পমারব্যাশের বিরুদ্ধে। পমারব্যাশকে দল থেকে সাসপেন্ড করে আরসিবি। কিন্তু পরে আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে।

চেন্নাইয়ে নিষিদ্ধ মালিঙ্গারা: ২০১৩ তে এই ঘটনা ঘটে। ওই সময় শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অবস্থা মাথায় রেখে তৎকালীন তামিলনাড়ু সরকার শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের চেন্নাইয়ে আসার অনুমতি দেননি সুরক্ষার কারণে। ফলে ২০১৩ সালে কোনও দলের শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের চেন্নাইয়ের চিপক স্টেডিয়ামে খেলতে দেখা যায়নি।

মাদক কেলেঙ্কারি: ২০১২ সালে মুম্বইয়ের এক বিলাসবহুল হোটেলে হানা দিয়ে একশো গ্রাম কোকেন-সহ বিভিন্ন মাদক উদ্ধার করেছিল পুলিস। ধরা পড়েছিলেন দুই ক্রিকেটার রাহুল শর্মা এবং ওয়েন পার্নেল। দুজনেই তখন সাহারা পুণে ওয়ারিয়র্স দলের হয়ে খেলতেন। সেই ঘটনায় প্রায় শতাধিকের বেশি যুবক-যুবতীকে গ্রেফতার করা হয়। ম্যাচ ফিক্সিং, সংঘর্ষ, শ্লীলতাহানির পর মাদক কাণ্ডেও জুড়ে গিয়েছিল ক্রোড়পতি লিগ। যদিও রাহুল শর্মা দাবি করেছিলেন তিনি নাকি রেভ পার্টিতে ছিলেন না। তবে সেই ঘটনার পর দুই ক্রিকেটারের কেরিয়ার থমকে যায়।

নিষিদ্ধ রাজস্থান ও চেন্নাই: ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারির দুর্নীতির সঙ্গে দুই ফ্রাঞ্চাইজি দলের বেশ কিছু মানুষের যুক্ত থাকার ইঙ্গিত পায় লোধা কমিশন। ফলে দুই দলকে দু বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয় আইপিএল। সঙ্গে বিসিসিআইয়ের কিছু শীর্ষকর্তাদেরও বরখাস্ত করা হয়। আইপিএলের ইতিহাসে সবথেকে বড় বিতর্কিত ঘটনা।

প্রীতি-নেস দ্বন্দ্ব: ব্যক্তিগত সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছিল আগেই, ব্যবসায়িক সম্পর্কের খাতিরে যোগাযোগ ছিল তাদের। কিন্তু ওয়াংখেড়েতে তাদের মধ্যে ঝামেলার পর নেস ওয়াদিয়ার বিরুদ্ধে তাকে হেনস্তার এবং খুন করার চেষ্টার অভিযোগ আনে প্রীতি জিন্টা। ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন সচিন পুত্র অর্জুন টেন্ডুলকারও।

কোহলির নিয়মভঙ্গ: ২০১৫ সালে বিসিসিআইয়ের নিয়ম ভেঙেছিলেন কোহলি। বৃষ্টি বিরতি চলা কালীন খেলোয়াড়দের জন্য করা নির্দিষ্ট সীমানা ভেঙে নিজের বান্ধবী অনুষ্কা শর্মার সাথে দেখা করেন তিনি যা একেবারেই আইনবিরুদ্ধ। যদিও কোনও শাস্তি না দিয়ে হুঁশিয়ার করে ছেড়ে দেওয়া হয় কোহলিকে।

অশ্বিনের মানকাডিং: ২০১৯ সালের আইপিএল-এ সেটাই ছিল অন্যতম বড় বিতর্ক। রবিচন্দ্রন অশ্বিন বল করার আগেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যান জশ বাটলার। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে স্টাম্প ভেঙে দিয়েছিলেন তৎকালীন পঞ্জাব কিংসে খেলা এই অফ স্পিনার। দুই ক্রিকেটার তীব্র কথাকাটাকাটিতেও জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুটা অবাক হলেও নিয়ম মেনে বাটলারকে সাজঘরে ফিরে যেতে হয়। সেই আউট নিয়ে অনেক বির্তক হয়েছিল। অশ্বিনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন একাধিক ক্রিকেট বিশেষঙ্গ। তবে বিতর্কে জড়ালেও বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক প্রাক্তনকে পাশে পেয়েছিলেন অশ্বিন। তবে এ বারের আইপিএল শুরু হওয়ার আগে অশ্বিন ও ক্রিকেট দুনিয়ার অন্য বোলাররা স্বস্তি পেয়েছেন। কারণ এই বহু বিতর্কিত 'মানকেডিং'-এর অবলুপ্তি ঘটিয়েছে এমসিসি।

আরও পড়ুনঃ IPL 2023: কী মারাত্মক 'কিপটে' রে বাবা! চিনে নিন আইপিএলের এই ক্রিকেটারদের

বিতর্কে ইউনিভার্স বস: আইপিএলে নেই ইউনিভার্স বস ক্রিস গেইল। ২০২১ পর্যন্ত পঞ্জাব কিংসে খেলে এবার থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। আইপিএলে ইতিহাসের সেরা বিনোদনকারীদের মধ্যে যে গেইলের নাম উপরের সারিতে থাকবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু আইপিএলে নিজর উৎশৃঙ্খল জীবন, মহিলা সঙ্গ, কোভিড বিধি ভাঙা সহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তবে এই সবকিছুকেই নিজের বিগ হিটের মত মাঠের বাইরে পাঠিয়েছেন গেইল।

আরও পড়ুন: IPL 2023: ফিরে দেখা আইপিএলের ইতিহাসে ২১টি হ্যাটট্রিক, সবথেকে বেশি কার? জানলে অবাক হবেন

ধোনির মাথা গরম: ২০১৯ আইপিএলে রাজস্থান বনাম সিএসকে ম্যাচের শেষ ওভারে সবসময় ঠান্ডা মেজাজের ধোনিকে মাথা গরম করতে দেখা গিয়েছিল। শেষ ওভারে আম্পায়ারের নো বল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে ডাগআউট থেকে মাঠে নেমে পড়েছিলেন ধোনি। মেজাজ হারিয়ে একেবারে হাত-পা নেড়ে দুই আম্পায়ারের সঙ্গে জুড়ে দেন তর্ক। ধোনির এমন রুপ অবাক করেছিল সকলকে। তবে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পছন্দ না হওয়ার ধোনি যেভাবে মাঠে নেমে পড়েছিলেন তার সমালোচনা করেছিলেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুনঃ IPL 2023: কোন দল বেশি শক্তিশালী, কোথায় দুর্বলতা, দেখে নিন আইপিএল ২০২৩-এর ১০টি টিম

পন্থের দল তুলে নেওয়া: ২০২২ সালে রাজস্থান বনাম দিল্লি ম্যাচে কোমড়ের উপরে থাকা ফুলটস বলে আম্পায়ার নো বল না দেওয়ায় চটে যান ডাগআউটে বসে থাকা ঋষভ পন্থ। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দিল্লির দরকার ছিল ৩৬ রান। পরপর ৩টি ছয় মারেন রভম্যান পাওয়াল। তৃতীয় বলটি কোমড়ের উপরে ছিল। দিল্লির দাবি ছিল সেটি নো বল হওয়া উচিৎ। কিন্তু আম্পায়ার না দেওয়ায় একসময় দল তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পন্থ। যদিও পরে মাথা ঠান্ডা করা হয় তার। ম্যাচ হলে দিল্লি ১৫ রানে হেরে যায়।

Published by:Sudip Paul
First published:

Tags: Controversy, History, Indian Premier League, IPL 2023