#কান্দি: আমরা যারা গত শতকে জন্মেছি তাদের একটা শৈশব ছিল। লোডশেডিং এর সন্ধে কিংবা বৃষ্টির বিকেল বাড়ির বড় কোনো সদস্যকে ঘিরে ধরে গল্পের আসর বসত। যেখানে শৈশব তার কল্পলোকের জাল বুনতে বুনতে পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চেপে পাড়ি দিত সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে। জন্ম দিনে বা কোনো শুভ মূহুর্তে বড়োদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া যেত বই। সে যেন এক আশ্চর্য দুনিয়া। যেন খুল যা সিম সিম বলার অপেক্ষা। বইয়ের পাতা ওলটানোর সঙ্গে সঙ্গে খুলে যাবে জ্ঞান ভাণ্ডারের দরজা। কুড়িয়ে নেব মণিমুক্তো।
কিন্তু সেই কল্পলোক আজ যেন দুয়োরানি। গত শতকের শেষে ইন্টারনেট আর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে যখন পৃথিবী বন্দি হল হাতের মুঠোয়, তখন যেন বড়রাও উপহার দিতে ভুলে গেলেন বই! সেই সব মামা কাকা জেঠু কিংবা দাদুর দল মরণ কাঠির ছোঁয়ায় ঘুমিয়ে পড়লেন নেট রাক্ষসের প্রাসাদে। বাচ্চার বায়না আর ঝক্কি থামাতে মা বাবা হাতে তুলে দিলেন মোবাইল। জ্ঞানের সমুদ্রে সাঁতার দিতে বই নয় ইন্টারনেটই হল একমাত্র ভরসা। একটা প্রজন্ম যেন ভুলল বই পড়তে।
আরও পড়ুন: সি টি স্ক্যান মেশিনে ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন, কবে হাসপাতাল থেকে ছুটি পাচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল?
টনক নড়ল ইউনেস্কোর। এই প্রজন্মকে বইমুখী করতে ২৩শে এপ্রিল দিনটিকে বিশ্ব বই দিবস বা world book and copy right day হিসেবে ধার্য করা হল। ১৯৯৫ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। মূলত পাঠক ও লেখককে উৎসাহ দিতেই এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত ইউনেস্কোর। তাঁদের সম্মানে প্রতিবছরই ইউনেস্কো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করে ২৩শে এপ্রিল। অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে প্রতি বছর পৃথিবীর কোনো একটি দেশের রাজধানীকে ঘোষণা করা হয় বিশ্ব বই রাজধানী। আমাদের রাজ্যেও মর্যাদার সাথে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বই দিবস।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমান প্রজন্মকে সামনে রেখে মুর্শিদাবাদ জেলাতে প্রথম তৈরি করা হয়েছে ই-লাইব্রেরি। অর্থাৎ মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে বাড়িতে বসেই লাইব্রেরির সমস্ত বই এর পড়া সম্ভব হবে। ২০২০ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার ঐতিহ্যবাহী কান্দি রাজ কলেজে ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে চালু করা হয় ডিজিটাল ই-লাইব্রেরি। কান্দি রাজ কলেজের গ্রন্থাগার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিমান চৌধুরী জানান, বর্তমানে অনলাইনে ছয় লক্ষ বই আছে। শুধু তাই নয়, জার্নাল ও ম্যাগাজিন আছে ১লক্ষ ৯৯হাজার। কলেজের সকল পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই লাইব্রেরি তৈরি করা হয়। যা কলেজের ছাত্রছাত্রী ও যুবসমাজকে বই পড়ার জন্য অনেকটাই উৎসাহিত করেছে। ১৯৫০ সালে স্থাপিত এই কলেজে বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা ২৬০০। এত সংখ্যক পড়ুয়াকে বইমুখী করতেই এই ই- লাইব্রেরি তৈরি করার চিন্তা ভাবনা করা হয়েছিল। বর্তমানে যেখানে রাজ্যের বিভিন্ন গ্রন্থাগারে পাঠক সংখ্যা কমছে, সেখানে এই কলেজের ই লাইব্রেরি পথ দেখাচ্ছে গোটা জেলা সহ রাজ্যকে। অফলাইনে মাসে ১২০০র বেশি বই নেয় ছাত্র ছাত্রীরা। সেখানে ই- লাইব্রেরি ভিসিট হয় মাসে প্রায় দু' হাজার বার। এখানেই সাফল্য ই- লাইব্রেরির।
কলেজে পাঠরত পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, কলেজের এই উদ্যোগে তাঁরা খুশি। কোভিড মহামারি পরিস্থিতিতে বাড়িতে বসেই আমরা লাইব্রেরি থেকে অনকে বই পড়তে পেরেছি।
কৌশিক অধিকারী
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।