অভাবের তাড়নায় বাস্তবের 'অসুরে'র মোকাবিলা! সন্তানদের জন্য সারাবছর চলে 'জ্যান্ত দুর্গা'দের লড়াই

Last Updated:

Sundarban Living Durgas: প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ, কাঁকড়া ধরতে যান বহু মহিলা। সন্তানদের বাঁচাতে, দু'মুঠো অন্নের জোগানের জন্য সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে যান তাঁরা

+
সুন্দরবন

সুন্দরবন

কুলতলি, সুমন সাহাঃ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য, জীব বৈচিত্রে সমৃদ্ধ, এর সৌন্দর্যও প্রশ্নাতীত। কথায় আছে, সুন্দর জিনিসের একটা ভয়ানক দিকও লুকিয়ে থাকে। সুন্দরবনও ব্যতিক্রম নয়। এখানকার জীববৈচিত্রের উপর নির্ভর করে যেসব মানুষ রুজিরুটি অর্জন করেন, তাঁদের অনেকের কাছেই ভয়ংকর হয়ে উঠেছে এই সুন্দরবন।
এক্ষেত্রে প্রথমেই উঠে আসে মৎস্যজীবীদের কথা। পেটের দায়ে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হানার শিকার হচ্ছেন একের পর এক মৎস্যজীবী। ফলে দিন দিন বাড়ছে ‘বাঘ বিধবা’র সংখ্যা। সুন্দরবনের জঙ্গল লাগোয়া বিপদগ্রস্ত ব্লকগুলির মধ্যে রয়েছে কুলতলি, গোসাবা, বাসন্তী, পাথরপ্রতিমা। প্রতিবছর কেউ না কেউ বাঘের আক্রমণে মৃত্যুবরণ করেন। কুমিরের আক্রমণেও বহু মৎস্যজীবী মারা যান।
advertisement
আরও পড়ুনঃ বাঁশ বাগানে ‘ওটা’ কী? কাছে যেতেই শিউড়ে ওঠার মতো দৃশ্য! চন্দননগরে চাঞ্চল্য
এই জঙ্গলমুখী জীবন ছিল দৈনিক রুজিরুটির মাধ্যম। পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বামীর সঙ্গে জঙ্গলে গিয়েছিলেন এক মহিলা। সেখানে বাঘের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। এক মুহূর্তে জঙ্গলে যাওয়া পরিবারের সমস্ত আশা শেষ হয়ে যায়। স্বামীর মৃত্যু পর ভেবেছিলেন আর জঙ্গলের দিকে মুখ ফেরাবেন না। কিন্তু পেটের জ্বালা বড় জ্বালা! পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন জোগাতে সুন্দরবন ঘেষা দুর্গম এই অজ পাড়াগাঁয়ের দুর্গাদের ভরসা সেই নদীতে মাছ, কাঁকড়া ও গভীর জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে মধু সংগ্রহ করা। এরপর তা বাজারজাত করে যেটুকু রোজগার আসে তা দিয়ে পরিবারের মুখে অন্ন জোটে।
advertisement
advertisement
এক্ষেত্রে কুলতলির মৈপিঠ নগেনাবাদের পঞ্চু মুন্ডার ও তাঁর স্ত্রী কমলা মুন্ডার কথা মনে পড়ে যায়। স্বামীর সঙ্গে বৌঠাভাঙা- ঢুলি ভাসানির জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন কমলা। সেখানে বেশ কিছু কাঁকড়া ধরেন তাঁরা। এরপর হঠাৎ জঙ্গলের বাঘ পঞ্চুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে টানতে টানতে ঘন জঙ্গলের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে। দাদা, বৌদি, স্ত্রীর চিৎকারে বাঘ পঞ্চুকে ছেড়ে দিয়ে গভীর জঙ্গলের মধ্যে চলে যেতে থাকলেও আড়চোখে শিকারের উপর সজাগ দৃষ্টি রাখছিল। কয়েক ঘণ্টা বাঘকে সামলাতে হয়েছিল তাঁদের।
advertisement
আরও পড়ুনঃ পুজোর সময় ব্যাপক ডিম্যান্ড! বাড়তি রোজগারের আশায় ‘এই’ পাতা বুনছেন মহিলারা, জঙ্গলেই লুকিয়ে আয়ের রসদ
এরপর পঞ্চুর মৃতদেহ বাড়িতে আনলে নিকটবর্তী মৈপিঠ কোস্টাল থানার পুলিশ তা জয়নগর কুলতলি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাঁরা কুলতলি থানায় পঞ্চুর নিথর দেহ হস্তান্তর করে। ওখান থেকে কলকাতার মর্গে নিয়ে যাওয়ার পয়সাটুকু এই আদিবাসী অধ্যুষিত পরিবারের ছিল না। সাধারণ মানুষের দানে ময়নাতদন্ত ও শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
advertisement
এদিকে স্বামী মারা যাওয়ার পর নাবালক সন্তানদের নিয়ে অথৈ জলে পড়ে কমলা! সুন্দরবনের প্রত্যন্ত বিপদসঙ্কুল এলাকায় বসবাসের কারণে তাঁদের কাছে আর কোনও রোজগারের উপায় নেই। এই নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে করতে বেশ কিছুটা সময় কেটে যায়। একদিকে স্বামীর মৃত্যুর শোক, অন্যদিকে সন্তানদের করুণ কাকুতি বিদ্ধ করতে থাকে কমলার মতো অসহায় মায়েদের। অবশেষে ফের জঙ্গলের অভিমুখে রওনা দেয় কমলা।
advertisement
পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই বয়স হলেও সন্তানদের মুখে অন্ন তুলতে এখনও জঙ্গলের মধ্যে মাছ, কাঁকড়া ধরে রুজি রোজগার চালান তিনি। নিজের সম্মুখে স্বামীর মৃত্যুর দৃশ্য মনে পড়ে। এতে সর্বদা ভয় করলেও কিছু করার নেই। সন্তানদের বাঁচাতে, দু’মুঠো অন্নের জোগানের জন্য সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে যান তিনি।
একইরকমভাবে মৈপিঠের অমল দণ্ডপাতও সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন। চোখের নিমেষে এই পরিবারের সুখ, শান্তি, আনন্দ শেষ হয়ে যায়। জঙ্গলের গভীর থেকে ভয়ংকর এক দৈত্যাকৃতি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার অমলের ঘাড়ে কামড় দিয়ে টানতে টানতে গভীর জঙ্গলে দিকে নিয়ে যেতে থাকে। সহ মৎস্যজীবীরা তড়িঘড়ি নৌকায় থাকা বৈঠা নিয়ে বাঘের উপরে চড়াও হলে বাঘ অমলকে ছেড়ে আড়চোখে তাকাতে থাকে। অমলের দেহ নৌকায় তোলা অবধি বাঘ এক চুলও নড়েনি বলে জানা যায়। তাঁর দৃষ্টি ছিল কেবল আহত শিকারের দিকে।
advertisement
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
আজও পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে তপতীরও একমাত্র ভরসা নদী খাঁড়ি ও জঙ্গল। সেখানেই মাছ কাঁকড়া ধরতে হয় তাঁদের। বন দফতর কিছুটা সহযোগিতা করলেও তাঁরা সরকারি সাহায্যের আশায় রয়েছেন। এই বিষয়ে অমল দণ্ডপাতের মেয়ে শাশ্বতী মন্ডল বলেন, অভাবের তাড়নায় আমার অসহায় মা বিপদ জেনেও এখনও আমার ভাইয়ের সঙ্গে নদী এবং জঙ্গলে যায়। আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। সরকারি সাহায্য যদি আমরা পাই তাহলে আমাদের পরিবার ঘুরে দাঁড়াবে। সরকারি সাহায্যের দিকে চাতক পাখির মতন চেয়ে রয়েছে ‘ব্যাঘ্র বিধবা’ পাড়ার শতাধিক পরিবার।
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
অভাবের তাড়নায় বাস্তবের 'অসুরে'র মোকাবিলা! সন্তানদের জন্য সারাবছর চলে 'জ্যান্ত দুর্গা'দের লড়াই
Next Article
advertisement
ঘি-কে ইংরেজিতে কী বলা হয় জানেন? চট করে অনেকের মাথাতেই আসবে না...
ঘি-কে ইংরেজিতে কী বলা হয় জানেন? চট করে অনেকের মাথাতেই আসবে না...
  • ঘি-কে ইংরেজিতে কী বলা হয় জানেন?

  • চট করে অনেকের মাথাতেই আসবে না.

  • দেখে নিন সঠিক উত্তরটা

VIEW MORE
advertisement
advertisement