#উত্তর ২৪ পরগনা: উমা আসছে। তবুও খুশি নয় পুমলিয়া। অশোকনগর বিধানসভার ভূরকুন্ডা ও শ্রীকৃষ্ণ পুর পঞ্চায়েত এলাকায় এই আদিবাসী পাড়া তাকিয়ে থাকে নানা উৎসব অনুষ্ঠানের দিকে। মূলত কৃষি শ্রমিক পরিবার এঁরা। দিন আনা, দিন খাওয়া, আদিবাসী পরিবারের ছেলে মেয়েরা মিলে আদিবাসী নৃত্যের দলে গড়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। নানা অনুষ্ঠানে নিজেদের সংস্কৃতিকে মেলে ধরে একটা বছর ভরের স্বচ্ছল আয় পেতেন তারা।
ধামসা, মাদল,পাট ভাঙ্গা সুতির শাড়ী ব্যাগে পুরে গ্রাম ছাড়ার সময় সকলে উজ্জীবিত হয়ে উঠতেন দুটো পয়সা বাড়তি আয়ের আনন্দে। কেউ কেউ দুটো জঙ্গলি ফুল বা গাঁদা ফুল ছিঁড়ে ব্যাগে ভোরে নিতেন। তা না হলে বছরের বাকি সময়টা এই ক্ষেত সেই ক্ষেতে ঘাস কেটে দুটো পয়সা তাদের আয় হত। কিন্তু ঘাস মারার রাসায়ানিক বাজার ছেয়ে গেছে। তাই চাষি আর ঘাস নেড়াবার কাজ দিচ্ছে না তাদের। মাঠের কাজ রাসায়নিক তেলে খেয়ে নিয়েছে। আর করোনা অতিমারি তাদের শিল্প কলা প্রদর্শনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িছে। দ্বিমুখী আক্রমণে বেঁচে থাকাটাই এক যন্ত্রণাময় জীবন হয়ে উঠেছে পুমলিয়া বাসির কাছে।
আনলক ফেজ ফাইভ চালু হলেও এবার পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে সরকার । এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধির কারণে কলকাতা সহ গোটা রাজ্যে পুজোয় আড়ম্বর থাকছে না। ফলে বছর ভর আশায় থাকলেও পুজোর অনুষ্ঠানে এবার বুকিং নেই আদিবাসী শিল্পীদের। অথচ, পুজোর অনুষ্ঠান করে এইসব আদিবাসী পরিবার যে আয় করেন, তাতে বছরের অনেকটা সময়ই সংসার খরচ চলে যায়। কিন্তু এবার পুজোয় কোনও বুকিং নেই। ফলে চোখে ঘুম নেই উত্তর ২৪ পরগনার ভূরকুন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের পুমলিয়া সর্দার পাড়ায় প্রায় ১০০ পরিবারের । নিজেদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে গান বাজনার চর্চা করেন। পুজোর অনুষ্ঠান সেই চর্চাকে আরও উৎসাহিত করে এসেছে বরাবর। এবার পুজোয় কোনও বুকিং না পেয়ে কার্যত হতাশ ও চরম সঙ্কটে পড়েছে আদিবাসীরা।
আদিবাসী শিল্পী লক্ষী ওরাও, অনিমা সর্দারের অভিযোগ, সারা বছর নাচ গানের অনুষ্ঠান করে আসলেও লোক সংস্কৃতি শিল্পী হিসাবে তাঁদের জায়গা মেলেনি রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের খাতায়। ফলে সেখান থেকেও মেলেনা তাদের কোন ভাতা বা সরকারি অনুষ্ঠানে কাজের বরাত। তাঁদের আরও অভিযোগ, দেশের মূলবাসী অংশের মানুষ হয়েও সব ক্ষেত্রে বঞ্চিত তারা। এমন কী আমফানে ঘর ভাঙ্গলেও জোটেনি কোনও সরকারি সাহায্য। আদিবাসী মুক্ত মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক বীরেন্দ্র নাথ মাহাতোর অভিযোগ, রাজ্যের নানা প্রান্তে আদিবাসী মানুষের অনেকেরই কাস্ট সার্টিফিকেট নেই। ফলে আদিবাসীদের জন্য সরকারের দেওয়া সব প্রকল্প পাচ্ছেন না প্রকৃত আদিবাসীরা। সরকার আগে ক্যাম্প করে আদিবাসীদের জাতিগত শংসাপত্র দিয়ে দিলে এই সব মানুষ গুলিকে একটু উন্নত করা যায়। তাদের জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া যায় আনন্দ।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: South bengal news