Dakshin Dinajpur News: অনাথের নাথ রঞ্জিত! প্রথম জীবনের টিভি সারাতেন! এখন সারাই করেন মানুষের জীবন, অনুপ্রেরণা জাগানো গল্প
- Published by:Sanchari Kar
- hyperlocal
- Reported by:SUSMITA GOSWAMI
Last Updated:
Dakshin Dinajpur News: একেবারেই ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং খরচে চাকরি জীবনে তৈরি করেছিলেন এই অনাথ আশ্রম। অবসরের পরেও থেকে গিয়েছেন সেখানে।
দক্ষিণ দিনাজপুর: শিক্ষকতা করবার পাশাপাশি ২৭ বছর ধরে দুঃস্থ অনাথ শিশুদের জন্য বালুরঘাট থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরের মস্তৈল গ্রামে অনাথ আশ্রম তৈরি করেছিলেন শহরের চকভবানি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক রঞ্জিত কুমার দত্ত। গত প্রায় সিকি শতক ধরে তিনি একক প্রচেষ্টায় একটি অনাথ আশ্রম চালাচ্ছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রত্যন্ত এক গ্রাম মস্তৈলে। প্রথম অবস্থায় চায়ের দোকানের অনাথ ছেলে রিঙ্কুকে নিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর আশ্রম। বর্তমানে পেনশনের টাকাতেই চলে তাঁর স্বপ্নের আশ্রম। যেখানে রয়েছে মোট ৩০টি শিশু। তাদের বেশির ভাগই আদিবাসী নাবালক। বলা ভাল, প্রথম জীবনে রেডিয়ো-টিভি সারানোর মিস্ত্রি রঞ্জিত এখন মানুষের জীবন সারাই করেন। মস্তৈল এসেছিলেন শিক্ষকতা করতে। কিন্তু অনুন্নত এই গ্রামকে ভালবেসে আর ফেরা হয়নি তাঁর বালুরঘাটে। একেবারেই ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং খরচে চাকরি জীবনে তৈরি করেছিলেন এই অনাথ আশ্রম। অবসরের পরেও থেকে গিয়েছেন সেখানে। আশ্রম চালানোর পাশাপাশি গ্রামের মানুষের চিকিৎসাও করেন তিনি। সে ক্ষেত্রে কোনও কিছুর জন্যই পয়সা নেন না। চলে কষ্টেসৃষ্টে।
প্রায় ২৭ বছর আগে মস্তৈলের বাগডুমা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের চাকরি পেয়ে এসেছিলেন এই গ্রামে। আশপাশের প্রায় ১০-১২টা পাড়ার জন্য একটাই প্রাইমারি স্কুল। পড়ুয়ার সংখ্যা ১৮০ মতো। কিন্তু বেশির ভাগই স্কুলে আসে না। এরপরেই রঞ্জিত সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন তপশিলি অধ্যুষিত গ্রামে। স্কুলে এলে খাবার আর পোশাক মিলবে এই প্রতিশ্রুতিতেই কাজ হল। বাচ্চারা আবার স্কুলমুখী। এতগুলো বাচ্চার স্কুল ড্রেসের জন্য এক ধাক্কায় রঞ্জিত খরচ করেন প্রায় ৩২ হাজার টাকা! ১৯৯৮ সালে সেটা নেহাত কম ছিল না। নিজের সঞ্চয় ভেঙে সবটা করেছিলেন তিনি।
advertisement
রঞ্জিতের অনেকদিনের একটা সুপ্ত ইচ্ছা আশ্রম খোলার। তবে এর জন্য তাঁকে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে অনেক। এরপরেই ১৯৯৮ সালে পাটকাঠির বেড়া দিয়ে এক কামরার এক ঘর তুললেও বর্তমানে এখন ৩০ জন অনাথ বাচ্চা রয়েছে। ইতিমধ্যে অনাথ আশ্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সরকারি কাগজপত্র তৈরি করে নিয়েছেন। প্রথম আশ্রমিক সেই রিঙ্কু ‘নীলকণ্ঠ অনাথ আশ্রম’ থেকে পড়াশোনা এবং জীবনের পাঠ নিয়ে এখন তামিলনাড়ুতে থাকেন।
advertisement
advertisement
রঞ্জিত বাবুর বয়স এখন ৭৭। স্কুল থেকে অবসরগ্রহণ করেছেন ২০১৬ সালে। স্কুলজীবন থেকে হোমিওপ্যাথি চর্চাতেও মনোনিবেশ করেছিলেন তিনি। মস্তৈল গ্রামে এসে দেখেছিলেন, গোটা গ্রামে একজনও চিকিৎসক নেই। রাত-বেরাতে কেউ অসুস্থ হলে পরিবারের লোকজন অসহায় বোধ করেন। সেক্ষেত্রে বিনা পয়সায় রোগী দেখেন এবং ওষুধও দেন তিনি। তবে কীভাবে চলে এত কিছু? এর উত্তরে তিনি জানান, “২০ হাজার টাকা পেনশন পাই। সেই টাকাতেই সবটা সারতে হয়। আশ্রমের খাবারের চাল-ডাল আসে গ্রামের বাড়ি কুমারগঞ্জের জমি থেকে।”
advertisement
আশ্রমে রঞ্জিত বাবু তাঁর স্ত্রী টুলু দত্ত এবং মেয়ে সায়ন্তিকা ছাড়াও আশ্রমের নাইট গার্ড, দু’জন হোল টাইমার, এমনকি দু’জন প্রাইভেট টিউটর পড়ান আবাসিকদের। ক্লাস সিক্স পর্যন্ত ‘নবাঙ্কুর’ নামের একটি স্কুলে পড়ার পর পাশের সরকারি স্কুলে চলে যায় পড়ুয়ারা। আশ্রমে পড়াশোনার পাশাপাশি শেখানো হয় রেডিয়ো-টিভি-সহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স জিনিস সারানোর কাজ। একই সঙ্গে চলে হোমিওপ্যাথির চর্চা। সঙ্গে যোগ ও জিমন্যাস্টিক। পরিশেষে বলা যেতেই পারে রঞ্জিত দত্তের একক প্রচেষ্টায় মস্তৈল গ্রাম এখন নতুন চেহারা নিয়েছে।
advertisement
সুস্মিতা গোস্বামী
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
March 28, 2025 2:42 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
Dakshin Dinajpur News: অনাথের নাথ রঞ্জিত! প্রথম জীবনের টিভি সারাতেন! এখন সারাই করেন মানুষের জীবন, অনুপ্রেরণা জাগানো গল্প