Durga Puja 2023: দেবী এখানে দশভূজা নন, দুই হাত তাঁর... ৪০০ বছরের প্রাচীন বর্ধমান নাগ পরিবারের দুর্গোৎসব

Last Updated:

Durga Puja 2023: বর্ধমান শহর থেকে ১৮কিমি দূরে সাটিনন্দী গ্রাম। এই গ্রামের নাগ পরিবারে মা দুর্গা পূজিত হন ‘হরগৌরী’ রূপে।

বর্ধমানের নাগ পরিবারের দুর্গোৎসব
বর্ধমানের নাগ পরিবারের দুর্গোৎসব
বর্ধমান : চারদিকে যখন থিম পুজোর রমরমা তখন বনেদি বাড়ির পুজোগুলো আমাদের নিয়ে যায় শিকড়ের কাছাকাছি, স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ও সাবেকিয়ানার কথা। আজ আমরা জানব বর্ধমান শহরের অনতিদূরে সাটিনন্দী গ্রামের সুপ্রাচীন ‘নাগ পরিবার’-এর চার শতাধিক বছরের পুরনো দুর্গাপুজোর কথা। চন্দ্রগুপ্তের সময়কার প্রাপ্ত এক রৌপ্য মুদ্রা আজও জড়িয়ে আছে এই পরিবারের দুর্গোৎসবের সঙ্গে। লোকায়ত বিশ্বাস অনুযায়ী পুজোর সময় ভক্তিভরে মায়ের কাছে মনস্কামনা জানালে মা কখনও নিরাশ করেন না ভক্তদের। পুজোর কদিন নাগ পরিবারের দ্বার সাধারণ মানুষদের জন্য থাকে সবসময় অবারিত।
বর্ধমান শহর থেকে ১৮কিমি দূরে সাটিনন্দী গ্রাম। এই গ্রামের নাগ পরিবারে মা দুর্গা পূজিত হন ‘হরগৌরী’ রূপে। দেবী এখানে দশভূজা নন। দুই হাত তাঁর। এক হাতে বরাভয় মুদ্রা আর অন্য হাতে পদ্ম। নন তিনি মহিষাসুরমর্দিনী। দেবীর ডান পাশে অধিষ্ঠান করছেন দেবাদিদেব স্বয়ং শিব। দেবী এখানে সিংহবাহিনীও নন। তিনি অধিষ্ঠান করছেন শিবের বাহন নন্দীর (ষাঁড়) পিঠে। চারপাশে তাঁর চার ছেলেমেয়ে— লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ।
advertisement
advertisement
উমা এখানে চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে একা আসছেন না বাপের বাড়ি, বরং দায়িত্ববান স্বামীর মতো স্বয়ং দেবাদিদেব তাঁর বাহনে করে চার ছেলেমেয়ে-সহ উমাকে পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁর বাপের বাড়ি। দেবী এখানে রনং দেহি নন, নেই মহিষাসুরও, বরং একচালার এই দেবীমূর্তির মুখে স্পষ্ট হয়ে আছে আপামর বাংলার আদরের মেয়ে উমার আদুরে মুখচ্ছবি।
advertisement
নাগ পরিবারের প্রবীণতম সদস্য দেবনাথ নাগের মুখ থেকে জানা যায় তাঁদের পরিবারের এই হরগৌরী পুজো প্রায় চার শতাধিক বছরের পুরনো। সুদূর অতীতে তাঁদের ঠিক কোন পূর্বপুরুষের হাত ধরে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল তা আজ কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও এই পুজো নিয়ে কিন্তু নাগ পরিবার এবং সাটিনন্দী গ্রামের মানুষদের উৎসাহে আজও কোনও ভাঁটা নেই। এই নাগ পরিবারের পারিবারিক ব্যবসা ছিল মশলা সরবরাহ এবং পাথরের বাসন তৈরি। শোনা যায় এই ব্যবসার সূত্র ধরেই সেই মুঘল যুগ থেকে তৎকালীন রাজপরিবারগুলির সঙ্গে ছিল তাঁদের নিবিড় যোগাযোগ। রাজপরিবারের সদস্যরাও শামিল হতেন এই হরগৌরী পুজোয়। অতীতে ছিল মাটির তৈরি বিশাল ঠাকুর দালান। কালের নিয়মে একদিন তা কংক্রিটের হয় ও বর্তমানের ঠাকুর দালানের রূপ পায়।
advertisement
দুর্গা পুজোর সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে ষষ্ঠীতে বোধনের পর সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী-দশমী চারদিন ধরে ধুমধামের সঙ্গে চলে মায়ের পুজো। নাগ পরিবারের বর্তমান সদস্যরা কর্মসূত্রে এদিক ওদিক ছড়িয়ে থাকলেও পুজো উপলক্ষ্যে সবাই এই কদিন মিলিত হন এক জায়গায়। আসলে বাঙালির এই উৎসব তো এক মিলনোৎসবও বটে।
advertisement
এই নাগ পরিবারের সংগ্রহে আছে একটি অতি মূল্যবান বস্তু— চন্দ্রগুপ্তের সময়কার একটি রৌপ্য মুদ্রা। এই মুদ্রা পুজো করেই শুরু হয় মায়ের পুজো। দশমীর দিনে এই মুদ্রা দিয়েই মায়ের যাত্রা বাঁধা হয়। যুগ যুগ ধরে নাগ পরিবারের অবিচ্ছেদ্য ভাবে চলে আসছে হরগৌরী পুজোর এই রীতি। এক সময় পুজো উপলক্ষ্যে পশুবলির প্রচলন ছিল। কিন্তু একবার সেই বলিতে বাধা পরায় এখন আখ ও চালকুমড়ো বলির মাধ্যমেই সম্পন্ন হয় মায়ের পুজো। আসলে কোনও মায়ের কাছেই তাঁর সন্তানের মৃত্যু কাম্য নয়। নাগ পরিবারের নবীন সদস্য অরিত্র নাগ তাঁদের এই পুজোর আরেকটি বৈশিষ্টের কথা জানান, তা হল— এখানে মায়ের ভোগে অন্নভোগ নিবেদনের কোনও রীতি নেই। এই রীতিটিও চলে আসছে পুজোর শুরু থেকেই বংশ পরম্পরায়।
advertisement
ঐতিহ্য আর বনেদিয়ানায় মোড়া প্রচীন নাগ পরিবারের এই হরগৌরী পুজো। এই পুজোয় আনন্দে মেতে ওঠে সাটিনন্দী গ্রামের সমস্ত মানুষ। দূর দূরান্ত থেকেও মানুষ আসেন এই পূজোয়। কথিত আছে মায়ের কাছে ভক্তিভরে কোনও মনস্কামনা জানালে মা তা পূরণ করেন।
লোকবিশ্বাস যাই থাক না কেন মানুষ যখন একে অপরের থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে ঢুকে পড়ছে নিজেদের নিরাপদ ঘেরাটোপে, তখন মানুষে মানুষে মিলন ঘটানোয় মা-এর এই মহিমা কিন্তু অপার। চারদিকে এখন থিম পুজোর ছড়াছড়ি, বাহুল্যের আতিশয্য— তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে এইসব বনেদি বাড়ির পুজোগুলি কিন্তু আমাদের আজও নিয়ে যায় শিকড়ের কাছাকাছি, স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের বাংলার ঐতিহ্যময় অতীতের কথা।
advertisement
বনেদি বাড়ির পুজোর সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ভেঙে গিয়েছে যৌথ পরিবার পরিকল্পনা। তবু মা আমাদের কদিনের জন্যে হলেও নিয়ে যান অতীতে। একত্রিত করেন পরিবারের সবাইকে এক ছাদের তলায়। আমরা ছোট ছোট পাওয়া না-পাওয়া ভুলে ভাবতে শিখি বৃহত্তর পরিমণ্ডলে। পরিবারের বাইরের লোকদেরও বাঁধেন মা প্রীতি বন্ধনে। উস্কে দেন যৌথ পরিবার পরিকল্পনা। পুরনো সব কিছুই তো কালের ঢেউয়ে ফিরে আসে আবার একটু নতুন ভাবে। সে ভাবেই যেন চিরকাল থেকে যায় এমন ইতিহাসের গন্ধ মেখে থাকা বনেদি বাড়ির পুজোগুলি।
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
Durga Puja 2023: দেবী এখানে দশভূজা নন, দুই হাত তাঁর... ৪০০ বছরের প্রাচীন বর্ধমান নাগ পরিবারের দুর্গোৎসব
Next Article
advertisement
Durga Puja Weather Update: নবমীর রাত থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন ! তার আগে সপ্তমী-অষ্টমীতে কী পূর্বাভাস? বৃষ্টি কি বাধ সাধবে ঠাকুর দেখায়
নবমীর রাত থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন ! সপ্তমী-অষ্টমীতে কী পূর্বাভাস? বৃষ্টি কতটা হতে পারে
  • নবমীর রাত থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন !

  • তার আগে সপ্তমী-অষ্টমীতে কী পূর্বাভাস?

  • বৃষ্টি কি বাধ সাধবে ঠাকুর দেখায়

VIEW MORE
advertisement
advertisement