গাড়ি নয়, এই গ্রামে সবার শখ ব্যক্তিগত নৌকা! প্রধান শিক্ষকের অবস্থা শোচনীয়, কারণ জানলে রাগ হবে
- Published by:Nayan Ghosh
- hyperlocal
- Reported by:Bonoarilal Chowdhury
Last Updated:
গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের ব্যক্তিগত নৌকা রয়েছে। যাদের নেই, তাঁদের অন্যের অপেক্ষায় থাকতে হয়।
কেতুগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান, বনোয়ারীলাল চৌধুরী : এক বুক জল পেরিয়ে তারপর বিদ্যালয়ে আসছেন প্রধান শিক্ষক। এমনকি তাঁর পায়ে জুতো পর্যন্ত নেই। জল কাদার রাস্তায় জুতো ব্যবহার বড় দায়। জামা, প্যান্ট ভিজিয়ে একেবারে যেন যাচ্ছেতাই পরিস্থিতি! এই বিদ্যালয় এমন একটা গ্রামে রয়েছে, যেখানে পৌঁছনোর কোনও রাস্তাই নেই। গ্রামবাসীরা যাতায়াত করেন ডিঙি নৌকার মাধ্যমে। প্রত্যেকের যেমন সাইকেল, মোটরসাইকেল কেনার শখ থাকে, তেমনই এই গ্রামের বাসিন্দারা কেনেন নৌকা!
পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের বিধানপল্লী গ্রামের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রধান সড়ক থেকে বিধানপল্লী গ্রামে পৌঁছাতে প্রায় ২ কিলোমিটার জল কাদার মাঠের রাস্তা পার করতে হয়। তারপরই রয়েছে ঈশানি নদী বা কাঁদর। যেখানে একটা বাঁশের সেতু আছে। সেই সেতু পার করলে তবেই গ্রামে পৌঁছনো যায়। কিন্তু বর্তমানে সেই বাঁশের সেতুও অনেকটা জলের তলায়। বাধ্য হয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে একবুক জল পেরিয়ে তারপর কোনও রকমে পোঁছতে হচ্ছে বিদ্যালয়ে।
advertisement
আরও পড়ুন : একসময় ছিল নেতাজির ঠিকানা, এখন ঢেকেছে আগাছায়! সংস্কারের সামর্থ্য নেই
বিদ্যালয়ে আলমারিতে তাঁর আলাদা পোষাকও রাখা রয়েছে। জল পেরিয়ে আসতে গিয়ে তিনি ভিজে যান এবং তারপর আবার পোশাক বদলে নেন বিদ্যালয়েই। উদ্ধারণপুর বিধানপল্লী অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার দাস বলেন, “জল বাড়লে এভাবেই যাতায়াত করতে হয়, তাছাড়া উপায় নেই। মাঝে মধ্যে নৌকা করেও আসি। না পেলে তখন এক বুক জল পেরিয়ে। আশা করছি প্রশাসন এই যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির কথা ভাববে।”
advertisement
advertisement
আরও পড়ুন : কোর্টরুমে বিচারক ‘গার্লিক’কে গুলি, পরমুহূর্তে মুখে নেন সায়নাইড! কানাইলালের নাম আজও উজ্জ্বল
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই গ্রামে প্রসাশনের কোনও আধিকারিক কখনও পা রাখেননি। ভোটের সময় নেতারা ভোট চাইতে আসেন। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি আজও হয়নি। গ্রামে প্রবেশের মুখে যে বাঁশের সেতু আছে, সেটাও নাকি প্রত্যেক বছরই ভেঙে যায়। গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের ব্যক্তিগত নৌকা রয়েছে। তাঁরা নৌকা নিয়েই যাতায়াত করেন। যাদের নৌকা নেই, তাঁদের অন্যের নৌকার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। গ্রামের অবস্থা এতটাই খারাপ যে পড়ুয়াদের পড়তেও যেতে হয় নৌকা নিয়ে।
advertisement
যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বলে কোনও আত্মীয় আসেনা গ্রামে। আগে তিনশোর বেশি পরিবার গ্রামে বাস করত। তবে এখন প্রায় পঞ্চাশটি পরিবারের বসবাস। অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন অন্যত্র। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বহুবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। মিলেছে শুধু প্রতিশ্রুতি। গ্রামবাসী সুকুমার সরকার বলেন, আমাদের গ্রামটা যেন ভারতবর্ষের বাইরে। কোনও এসডিও, বিডিও, আইপিএস, ডিএম আজ অবধি কেউ আসেননি। গ্রামের মেয়েদের বিয়ে দেওয়া মুসকিল। যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি।
advertisement
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
গ্রামে কারও শারিরীক সমস্যা হলে হাসপাতাল নিয়ে যেতেও সময় লাগে দীর্ঘক্ষণ। গ্রামের ছাত্ররাও অনেক সময় শিক্ষককে নৌকায় বসিয়ে গ্রামে নিয়ে আসে। আবার স্কুল শেষে দিয়েও আসে। সবমিলিয়ে শিক্ষক, পড়ুয়া থেকে শুরু করে সকলেই গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের অপেক্ষায় রয়েছেন। সকলেই চাইছেন একটা পাকা সেতু এবং সেতু থেকে প্রধান সড়ক পর্যন্ত একটা পাকা রাস্তা। এই কাজ হলেই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন গ্রামবাসীরা। কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনাওয়াজ মৌখিক জানিয়েছেন, গ্রামটি তাঁদের নজরে রয়েছে, দ্রুত সমাধান করা হবে। কিন্তু কবে যে সমাধান হবে, সেই আশায় দিন গুনছেন গ্রামের বাসিন্দারা।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata [Calcutta],Kolkata,West Bengal
First Published :
August 14, 2025 7:30 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
গাড়ি নয়, এই গ্রামে সবার শখ ব্যক্তিগত নৌকা! প্রধান শিক্ষকের অবস্থা শোচনীয়, কারণ জানলে রাগ হবে