মালদহ: এক সময় বছরভর নদীখাত দিয়ে বয়ে যেত জল। বর্তমানে ড্রেন বা নালার আকার ধারণ করেছে, দেখে মনে হবে না এখান দিয়ে এক সময় নিয়মিত জল বয়ে যেত। শুধু নদী বললে হয়তো ভুল হবে, জেলার ঐতিহ্যবাহী নদীগুলির মধ্যে অন্যতম একটি। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস থেকে একাধিক কবি সাহিত্যিকের লেখায় উল্লেখ রয়েছে মালদহের বেহুলা নদীর। বর্তমান পুরাতন মালদা শহর ঘেঁষে বেহুলা নদীর খাত বয়ে গিয়েছে।
বর্ষার মরশুম ছাড়া বছরের বাকি সময়ে এই নদীখাত দিয়ে বয়ে যায় আশে পাশের কলকারখানার দূষিত জল। দুর্গন্ধে নদীর ধারে মেতে পারেন না স্থানীয়রা। তবে একটা সময় এই নদী খাত দিয়ে সারা বছর জল বয়ে যেত। আশে পাশের গ্রামের বাসিন্দারা নিয়মিত ব্যবহার করতেন এই নদীর জল। এই নদীর জলের ওপর ভরসা করেই অনেকের জীবিকা নির্বাহ হয়েছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা নিয়মিত মাছ ধরতেন। নদীর দুই ধারের কৃষিজমিতে জলের প্রয়োজন হলে বেহুলার জল তোলা হত।
তবে বর্তমানে এ সব অতীত । এখন আর নদীতে জল থাকে না । গ্রীষ্মের মরসুমে নদীখাত অজস্র আগাছায় ভরে গিয়েছে । নিয়মিত জল প্রবাহিত না হওয়ায় নদীখাত ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে পড়েছে । অভিযোগ, তার ওপর শুরু হয়েছে বেআইনি নদী দখল । নদীর দুই তীরে অবৈধ ভাবে তৈরি করা হয়েছে একাধিক ইটভাটা নদীর পাড়ে গার্ডওয়াল দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে জমি । সমস্ত কিছুই হচ্ছে প্রকাশ্যে দিবালোকে । তার পরেও প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। হারিয়ে যাচ্ছে মালদহের ঐতিহ্যবাহী এই নদী বেহুলা। মহানন্দার শাখা নদী বেহুলা। মহানন্দা থেকে বেরিয়ে পুরাতন মালদা শহরের এক প্রান্ত দিয়ে বয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন : রাজস্থানের ফালুদা মন কেড়েছে গরমে, হচ্ছে দেদার বিক্রি
বেহুলা গিয়ে মিশেছে হবিবপুর পুরাতন মালদহ ব্লকের সংযোগস্থলে অবস্থিত বিলে । একসময় মহানন্দা ও বিলের জলে সারা বছর বেহুলা নদীতে জল বয়ে যেত । তবে বর্তমানে বেআইনিভাবে জলা জমি ভরাট ও নদীটির সংস্কারের অভাবে নাব্যতা হারিয়েছে । এখন আর সারা বছর জল থাকে না ।
আরও পড়ুন : Viral video : নিজের হাতে জিরাফকে খাইয়ে প্রাতরাশের সুযোগ! যাবেন নাকি এই হোটেলে! দেখুন ভাইরাল ভিডিও
এই অবস্থার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ থেকে জেলার নদীপ্রেমী মানুষ প্রশাসনকে দায়ী করছেন। একসময় বেহুলা নদী বাঁচানোর জন্য লাগাতার আন্দোলন হয়েছে জেলায়। অভিযোগ, তবে তার পরও কোনও উদ্যোগই হয়নি প্রশাসনের তরফে। বর্তমানে নদীর অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে। বেআইনি দখল হয়েছে নদীর একাংশ। এমনটা হতে চললে হয়তো হারিয়ে যাবে বেহুলার নদীখাত। ইতিহাসের পাতাতেই উল্লেখ থাকবে এই ঐতিহ্যবাহী নদীর নাম।
আরও পড়ুন : নরম বিছানা নাকি শক্ত মেঝে? রাতে কোথায় ঘুমনো শরীরের জন্য উপকারী?
জেলার বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ অভিজ্ঞান সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বর্তমানে বেহুলা নদী বাঁচানো খুব জরুরি। তবে তা ব্যয় বহুল অবশ্যই। অভিযোগ, স্থানীয় কিছু মানুষ নিজেদের সুবিধার জন্য নদীর বুকে অবৈধভাবে ইটভাটা জবরদখল করে রেখেছেন। এখন আর নদীতে নিয়মিত জল থাকে না। এখন থেকে এই নদী বাঁচানোর কোনও উদ্যোগ না নিলে আগামীতে হয়তো নদী থাকবে না। আমরা বেহুলা নদী বাঁচানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ’’
(প্রতিবেদক- হরষিত সিংহ)
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Behula River, Malda, Water Pollution