Digha: দিঘার পাশেই লুকিয়ে রোমহর্ষক ইতিহাস! ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ মন্দিরে একটি কাষ্ঠখণ্ডে ৩ মূর্তি
- Published by:Shubhagata Dey
- hyperlocal
- Reported by:Madan Maity
Last Updated:
Digha: দিঘা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে এগরার পাঁচরোল গ্রামের ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ মন্দির আজও তার গম্ভীর উপস্থিতিতে মনে করিয়ে দেয় বাংলার বৈষ্ণব ঐতিহ্যের অনন্য অধ্যায়।
এগরা, মদন মাইতি: দিঘার পাশে লুকিয়ে আছে, বহু প্রাচীন ইতিহাস। এখানে এলে আপনি হারিয়ে যাবেন অষ্টাদশ শতাব্দীতে। জরাজীর্ণ মন্দির খসে পড়া পলেস্তরা আর মন্দিরের চারিদিকে টেরাকোটার কাজ, এ যেন সময়ের ভাঁজে চাপা পড়া এক বিস্মৃত স্থাপত্য। দিঘা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে এগরার পাঁচরোল গ্রামের ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ মন্দির আজও তার গম্ভীর উপস্থিতিতে মনে করিয়ে দেয় বাংলার বৈষ্ণব ঐতিহ্যের অনন্য অধ্যায়। প্রাচীন এই মন্দিরের বিগ্রহ একটিমাত্র কাষ্ঠখণ্ডে নির্মিত—কৃষ্ণ, বলরাম ও চৈতন্যদেবের সম্মিলনে ‘ষড়বাহু’ রূপের প্রতিফলন। চৈতন্যদেব ষোড়শ শতকের গোড়ায় প্রেমভক্তির ধর্ম প্রচারের সময় যে ‘ষড়ভূজ রূপ’ প্রকাশ করেছিলেন, সেই কিংবদন্তিকে ধারণ করেই তৈরি হয়েছে এই বিরল মূর্তি।
এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও পুরোনো ইতিহাস। প্রতিষ্ঠাতা পরিবার মূলত রাজপুতানা অঞ্চলের শোলাঙ্কি বংশের—যারা আলাউদ্দিন খিলজির আমলে মারাত্মক সংঘর্ষ ও অস্থিরতার ফলে দেশে দেশান্তরী হন। কয়েকটি পরিবার এসে আশ্রয় নেয় পুরীর আশপাশে, নিরাপত্তাজনিত কারণে রাজপুত পরিচয় লুকিয়ে নিজেদের ‘রাজু’ জাতিতে রূপান্তরিত করে এবং গ্রহণ করে ‘দাস মহাপাত্র’ পদবি। পরবর্তীকালে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই বংশের নারায়ণ দাস মহাপাত্র পুরী থেকে মেদিনীপুরের দক্ষিণাংশে এগরা এলাকার পাঁচরোল গ্রামে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। তখন চম্পা নদী ছিল বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ জলপথ, সেই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে তিনি ধান–চালের ব্যবসা শুরু করেন।
advertisement
আরও পড়ুনঃ শীতের শুরুতেই বদলে গেল ইকো-পার্কের সময়সূচি, সপ্তাহান্তে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান থাকলে জানুন
‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’-এর সময় নারায়ণ দাস বিপুল সম্পদের মালিক হন এবং নবাব দরবার থেকে জমিদারী প্রতিষ্ঠার অনুমতি পান। তাঁর উদ্যোগে গড়ে ওঠে পাঁচরোলগড় । পরবর্তী প্রজন্মে, এই বংশের ষষ্ঠ পুরুষ চৌধুরী কৃষ্ণগোবিন্দ দাস মহাপাত্র বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নিয়ে নতুন করে দু’টি মন্দির নির্মাণ করেন—মদনমোহন মন্দির এবং অনন্য স্থাপত্যশৈলীর এই ষড়ভূজ গৌরাঙ্গ মন্দির। এখানে স্থাপিত এক কাঠামোর বিগ্রহে উপরের দুই হাতে রামের ধনুক-বাণ, মাঝের দুই হাতে কৃষ্ণের বাঁশি, আর নিচের দুই হাতে বলরামের গদা-কমণ্ডলু—এই মিলিত প্রতিমারূপ বাংলার বৈষ্ণব শিল্পকলার এক দুর্লভ নিদর্শন।
advertisement
advertisement
আরও পড়ুনঃ চাঁদনী রাতে মায়াবী আলোয় ঘুরে আসুন জয়ন্তী রিভার সাইড, সঙ্গীর সঙ্গে জমবে প্রেম, আজীবন মনে থেকে যাবে
মন্দিরটির স্থাপত্যও ততটাই অনন্য। প্রায় ৩৭ ফুটের বেশি উচ্চতার দালান-শৈলীর এই মন্দিরে রয়েছে চারদিকে প্রশস্ত অলিন্দ, ১৩ প্রবেশদ্বার, খিলান-বেষ্টিত ছাদ, সামনের বিশাল টেরাকোটার কাজ। বৈষ্ণব কীর্তনদল থেকে শুরু করে মিথুন, অলংকার, শিলালেখে ‘ষড়ভূজ গৌরাঙ্গ’-এর উপস্থাপনা—সবই টেরাকোটার ফলকে সুচারুভাবে ফুটে উঠেছে। কোনো একসময় চূড়ায় ‘রত্ন’-রীতির শিখর ছিল, কিন্তু আজ কেবল লৌহদণ্ডটি পড়ে আছে। সিংহমূর্তি, ময়ূরের ভাস্কর্য, অলংকারের ফলক—সবই সময়ের আঘাতে ভেঙে পড়ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংস্কারের অভাব ও উদাসীনতায় এই ঐতিহাসিক সৌধটি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সংস্কার না হলে জেলার অন্যতম মূল্যবান স্থাপত্য-ঐতিহ্যটি হারিয়ে যাবে ইতিহাসের অন্ধকারে।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Egra,Purba Medinipur,West Bengal
First Published :
November 10, 2025 5:17 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
Digha: দিঘার পাশেই লুকিয়ে রোমহর্ষক ইতিহাস! ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ মন্দিরে একটি কাষ্ঠখণ্ডে ৩ মূর্তি
