কলকাতা : একের পর এক মর্মান্তিক মৃত্যু দেখছে শহর ও শহরতলি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর ধাক্কায় মেট্রো সিটি থেকে ছোট শহর, সর্বত্রই মৃত্যু বাড়ছে। টালমাটাল অবস্থা গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বড় হাসপাতাল, সব জায়গাতেই। ফলে বাড়ছে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সংখ্যাও। এমনই সোমবার এমনই মর্মান্তিক DUTI মৃত্যুর স্বাক্ষী হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় ও ক্যানিং এলাকা।
গায়ে ধুম জ্বর। ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল শরীর। সেই অবস্থাতেই রোদ মাথায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Parganas) গোসাবা ব্লকের আমতলি গ্রাম থেকে ক্যানিংয়ে করোনা (Coronavirus) পরীক্ষা করাতে এসেছিলেন ৫৯ বছরের মনোজ মণ্ডল। কিন্তু পরীক্ষার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে করতে মৃত্যু হল ওই ব্যক্তির। অভিযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনা টেস্ট কিটের আকাল। তাই দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে পরীক্ষা করাতে আসা ব্যক্তিদের। আর সোমবার তারই মাঝে ঘটে গেল মর্মান্তিক ঘটনা।
ক্যানিং...
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, বেশ কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিলেন ওই ব্যক্তি। রবিবার সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের আমতলি গ্রাম থেকে চলে আসেন ক্যানিংয়ের পিয়ালিতে। সোমবার সকালে করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে লাইনে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তীব্র গরম, রোদ আর শারীরিক দুর্বলতার কারণে আর যুঝতে পারেননি তিনি। ফলে প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা পরিমল ডাকুয়া বলেন, ”মহকুমা হাসপাতাল থেকে চল্লিশটি টেস্ট করা সম্ভব প্রতিদিন। সেটাই করা হচ্ছে।”
স্বাস্থ্যদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, প্রতিটি মহকুমা হাসপাতাল থেকে চল্লিশটা করে করোনা পরীক্ষা করানো হবে। প্রতিটি ব্লক হাসপাতাল থেকে তিরিশটা করে টেস্ট কিট পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। তবে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বহু মানুষ আবার পরীক্ষা করাতে এসে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যাচ্ছেন। জ্বর নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর বাড়ি ফিরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাঁরা।
ভাঙড়...
অন্যদিকে, সোমবার ভাঙড়-১ ব্লকের নলমুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে অ্যাম্বুল্যান্সে মৃত্যু হয় বছর ৩৫ এর এক গৃহবধূর। জানা গিয়েছে সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট-সহ বেশ কিছু উপসর্গ নিয়ে ভুগছিলেন বছর ৩৫-এর গৃহবধূ পুষ্প মণ্ডল। দিনকয়েক আগে তাঁর কোভিড পরীক্ষা করালে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু সোমবার ভোর থেকে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের লোকেরা তাড়দহ গ্রামের বাসিন্দা ওই মহিলাকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে ভাঙড়-১ ব্লকের নলমুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেন।টানা রোদে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে পার্কিং এরিয়াতেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ওই অ্যাম্বুল্যান্স। অভিযোগ, কোনও চিকিৎসক তাঁকে এসে দেখেননি। অন্যান্য রোগীর আত্মীয়রাও দুর্ব্যবহার করেন করোনা আক্রান্তদের পরিবারের লোক বলে। এই ভাবে আধঘন্টা সময় কাটার পর চিকিৎসা শুরুর আগেই ওই রোগী মারা যান বলে অভিযোগ।
এদিন সকাল ১০টা নাগাদ মৃতার পরিবারের তরফে ছেলে সুজন মণ্ডল একটি অ্যাম্বুল্যান্সে করে মাকে নিয়ে নলমুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসে। সেই সময় কোভিডের টিকা নেওয়ার জন্য ইমার্জেন্সির গেট আটকে লাইন দিয়ে ছিলেন কয়েকশো রোগী। তাঁরাই চিল চিৎকার করে প্রতিবাদ করেন করোনা রোগী নিয়ে এখান দিয়ে ঢোকা যাবে না। হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সিং স্টাফরা জানান, ইমার্জেন্সিতে এখন কোনও চিকিৎসক নেই। এভাবেই আধঘণ্টা কেটে যায় এবং রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়ে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
সুজনের অভিযোগ, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে যতটুকু অক্সিজেন ছিল, তা শেষ হয়ে যাওয়ায় মায়ের মৃত্যু হয়েছে । চিকিৎসকরা যদি একটু মাকে দেখতেন বা অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতেন তাহলে মা বেঁচে যেতেন । চিকিৎসার গাফিলতির জন্যই মায়ে মৃত্যু হয়েছে ।’’ পরিবারের দাবি উড়িয়ে ভাঙড়-১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিমেষ হোড় বলেন, ‘‘নলমুড়ি কোভিড হাসাপাতাল নয়। এখানে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করা হয় না। ওরা যদি ঠিকমতো কাগজ দেখাতেন, তাহলে সেফ হোম বা অন্যত্র পাঠাতাম।’’
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।