South 24 Parganas News : জেতা পঞ্চায়েতও হাতছাড়া গতবারের ভোটে, জবাব দিতে মরিয়া বিরোধী শিবির
- Published by:Teesta Barman
- news18 bangla
- Reported by:SUMAN SAHA
Last Updated:
Panchayat Elections 2023: ১ ব্লকের কিছু এলাকায় কয়েক বছর ধরে দলের কোন্দল নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। ব্লক সভাপতির পদ নিয়ে কিছু দিন আগে দ্বন্দ্ব বাঁধে দুই নেতা খান জিয়ায়ুল হক ও তুহিন বিশ্বাসের মধ্যে।
জয়নগর: একচ্ছত্র বাম শাসনকালে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো নিজের বিপরীত চরিত্র টিঁকিয়ে রেখেছিল জয়নগর। দীর্ঘ দিন এখানে বিধানসভায় ক্ষমতায় ছিল এসইউসি। পঞ্চায়েতেও দাপট ছিল তাদের। পরবর্তীকালে লোকসভা-বিধানসভা ভোটে এই এলাকায় জেতেন তৃণমূল প্রার্থীরা। কিন্তু এলাকায় যে শাসকদলের নিরঙ্কুশ আধিপত্য নেই, তার প্রমাণ মিলেছে বার বার। গত পঞ্চায়েত ভোটের পরেও জয়নগর ১ ও ২ ব্লক মিলিয়ে একাধিক পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়েছিল বিরোধীরাই। কোথাও সিপিআইএম, কোথাও এসইউসি, কোথাও বিজেপি ক্ষমতায় আসে। কয়েকটি পঞ্চায়েতে বিরোধীদের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গড়তে হয়েছিল তৃণমূলকে।
পরবর্তী পাঁচ বছরে অবশ্য বদলে যায় ছবি। সদস্য টেনে বিরোধীদের জেতা পঞ্চায়েতগুলির বেশিরভাগই দখল করে তৃণমূল। বিরোধী সমর্থনে চলা পঞ্চায়েতগুলির বেশ কিছুতে ক্রমশ নিরঙ্কুশ হয়ে ওঠে তারা। এ ভাবে পঞ্চায়েত দখল করা নিয়ে নানা অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। টাকার লোভ দেখিয়ে বা হুমকি দিয়ে সদস্য টানা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তৃণমূল যদিও অভিযোগ মানেনি। তাদের দাবি, উন্নয়নের শরিক হতেই বিরোধী সদস্যেরা শাসকদলের হাত ধরেন।
advertisement
জয়নগর ১ ব্লকে ১২টি পঞ্চায়েত। এর মধ্যে ৬টি বারুইপুর পূর্ব বিধানসভার অন্তর্গত। বাকি ৬টি জয়নগর বিধানসভার মধ্যে পড়ছে। জয়নগর ২ ব্লকে পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১০। এর মধ্যে জয়নগর বিধানসভার অন্তর্গত ৬টি। বাকি ৪টি আবার কুলতলি বিধানসভার মধ্যে। গত পঞ্চায়েত ভোটে ময়দা, মায়াহাউড়ি, বাইশাহাটা, বেলেদুর্গানগর, শাহাজাদাপুর, নলগড়ায় বোর্ড গড়েছিল বিরোধীরা। এর মধ্যে একমাত্র মায়াহাউড়ি পঞ্চায়েতে বিজেপি পরিচালিত বোর্ড শেষ পর্যন্ত টিকেছিল। বাকি সবই তৃণমূলের দখলে চলে আসে। এ বারও সব ক’টি পঞ্চায়েত দখলের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে শাসক শিবির। তবে কিছু এলাকায় দলের গোষ্ঠী কোন্দল ভাবাচ্ছে নেতৃত্বকে।
advertisement
advertisement
১ ব্লকের কিছু এলাকায় কয়েক বছর ধরে দলের কোন্দল নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। ব্লক সভাপতির পদ নিয়ে কিছু দিন আগে দ্বন্দ্ব বাঁধে দুই নেতা খান জিয়ায়ুল হক ও তুহিন বিশ্বাসের মধ্যে। জেলা পরিষদ সদস্য জিয়ায়ুল এই ব্লকের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। পরে তৎকালীন জেলা সভাপতি যোগরঞ্জন হালদার প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে তুহিনকে ব্লক সভাপতি ঘোষণা করেন। কিন্তু দলীয় ভাবে ঘোষণা না হওয়ায় ধন্দ তৈরি হয়। এ বার বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ তুহিনই ১ ব্লকের নির্বাচনের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কিন্তু স্থানীয় সূত্রের খবর, টিকিট না পেয়ে জিয়ায়ুল গোষ্ঠীর অনেকেই নির্দল হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। ১ ব্লকের জয়নগর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পঞ্চায়েতগুলির প্রায় চল্লিশ শতাংশ আসনেই নির্দল প্রার্থী রয়েছে।
advertisement
তুহিনের দাবি, “নির্দল-সহ কোনও বিরোধীকে নিয়ে ভাবছি না। সব ক’টি আসনেই তৃণমূল বিপুল ভোটে জিতবে।” জিয়ায়ুলকে এ বার ১ ব্লক থেকে সরে ২ ব্লকে জেলা পরিষদে দাঁড় করানো হয়েছে। ব্লকের কোন্দল মেটাতেই কি সরানো হল তাঁকে? মানতে চাননি জিয়ায়ুল। তাঁর কথায়, “আগে বারুইপুর পূর্ব বিধানসভা ও জয়নগর মিলিয়ে চারটি পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত জেলা পরিষদের সদস্য ছিলাম আমি। কিন্তু এ বার জয়নগর বিধানসভা এলাকা থেকেই লড়ছি। এটাই আমার রাজনীতির জায়গা। সে দিক থেকে এটাকে ঘরে ফেরা বলা যেতে পারে।” তাঁর গোষ্ঠীর লোকজনের নির্দল দাঁড়ানো নিয়ে জিয়ায়ুল বলেন, “আমার জেলা পরিষদ আসন নিয়েই ভাবছি। এখানেই প্রচার চালাচ্ছি। বিধায়ক-সহ গোটা দল আমার পাশে আছে। কে কোথায় নির্দল দাঁড়িয়েছেন, তার দায়িত্ব আমার নয়।” জয়নগর ২ ব্লকেও কয়েকটি আসনে নির্দল-কাঁটা ভাবাচ্ছে দলকে। ফুটিগোদা পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধানের স্বামী টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে লড়ছেন। ব্লক তৃণমূল সভাপতি গোপাল নস্কর অবশ্য বলেন, “মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে আছেন।”
advertisement
দুই ব্লকেই নিজেদের মতো করে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন বিরোধীরা। বেশিরভাগ পঞ্চায়েতেই বহুমুখী লড়াই হচ্ছে। তৃণমূলের পাশাপাশি সিপিএম, বিজেপি, এসইউসি, কংগ্রেস— প্রার্থী দিয়েছে সব পক্ষই। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের মতে, একাধিক পঞ্চায়েতেই শাসক দলকে কঠিন লড়াই দিতে পারে বিরোধীরা। কিন্তু ত্রিমুখী বা চতুর্মুখী লড়াইয়ে বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে আখেরে লাভ হতে পারে তৃণমূলেরই। বিজেপি নেতা দেবতোষ আচার্য বলেন, “গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে কিন্তু এই দুই ব্লকের বহু বুথেই বিজেপি এগিয়েছিল। নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে লাগামহীন চুরি-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ আমাদেরই ভোট দেবেন।” সিপিএম নেতা অপূর্ব প্রামাণিক বলেন, “শাসক দলের দ্বন্দ্বে জয়নগর ১ ব্লকে দীর্ঘ দিন উপসমিতিই গঠন করা যায়নি। দুই ব্লকেই মানুষ এদের উপরে বিরক্ত। জবাব দিতে মুখিয়ে আছেন।” এসইউসি নেতা তরুণকান্তি নস্করের কথায়, “তৃণমূল চুরি, দুর্নীতি, কাটমানির দল। মানুষ এদের ঘৃণা করছেন। ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে মানুষ জবাব দেবেন।” কংগ্রেস নেতা তপন মণ্ডল বলেন, “দুই ব্লকেই লড়াইয়ে আছি আমরা। চুরি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।”
advertisement
সুমন সাহা
view commentsLocation :
Kolkata,West Bengal
First Published :
July 06, 2023 4:31 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণ ২৪ পরগনা/
South 24 Parganas News : জেতা পঞ্চায়েতও হাতছাড়া গতবারের ভোটে, জবাব দিতে মরিয়া বিরোধী শিবির