কলকাতা: আমরা সাধারণত যে সমস্ত ওষুধ খাই, সেই সব ওষুধ রঙবেরঙের হয়ে থাকে। সাদা, লাল, হলুদ, গোলাপি, নীল, সবুজ – নানা উজ্জ্বল রঙে মেলে ওষুধ কিংবা ক্যাপসুল। কিন্তু কখনও কি আমরা ভেবে দেখেছি যে, এই সব ওষুধ বা ক্যাপসুলের এমন সুন্দর রঙ কেন হয়? অথচ এর পিছনে অবশ্য যথাযোগ্য কারণও রয়েছে। সেটাই আজ জেনে নেওয়া যাক।
রঙের ইতিহাস:
ষাটের দশকে প্রথম রঙিন ওষুধ পাওয়া গিয়েছিল। বর্তমানে ওষুধ কোম্পানিগুলিও ওষুধের রঙের বিশেষ যত্ন নেয়। জেল ক্যাপসুলের জন্য ৭৫ হাজারেরও বেশি রঙের সংমিশ্রণ ব্যবহৃত হয়। ট্যাবলেটের রঙে ও কোটিংয়েও বহু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আরও পড়়ুন- দূর থেকে জল আনতে মায়ের কষ্ট হয়! ছেলের কাণ্ড অবাক করে দিল এলাকার মানুষকে
বড়ি ও ক্যাপসুল তৈরি শুরু:
মিশরীয় সভ্যতার যুগে ওষুধের বড়ির প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। এর পরে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ওষুধ কেবল গোলাকার এবং সাদা রঙের হত। এখন প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ওষুধের আকার এবং রঙেও পরিবর্তন এসেছে। ষাটের দশকে ওষুধের রঙের বদলানো হয়। ১৯৭৫ সালে সফটজেল ক্যাপসুল তৈরির ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত বড় পরিবর্তন ঘটে।
রঙের মাধ্যমে ফারাক:
যাঁরা লিখতে-পড়তে জানেন না, তাঁরা যাতে ওষুধের পার্থক্য করতে পারেন, তার জন্য ক্যাপসুল ও বড়ি বিভিন্ন রঙের করা হয়। আবার বয়স্করাও অনেক সময় দৃষ্টিশক্তি কমে আসার কারণে ওষুধের স্ট্রিপের গায়ে থাকা লেখা বুঝতে পারেন না। তাই তাঁরাও রঙ দেখে কোনটা কখন খাবেন, সেটা বুঝতে পারেন।
মানসিক দিক:
ওষুধের নাম শুনলেই মনটা যেন বিষাদে ভরে যায়। ফলে ওষুধ রঙিন হলে তা দেখতে ভাল লাগে। এমনকী গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, রঙিন ট্যাবলেট কিংবা ক্যাপসুল খেতে পছন্দ করে মানুষ। মনটা কিছুটা হলেও ভাল হয়।
রোগের সঙ্গে রঙিন ওষুধের সম্পর্ক:
আমেরিকায় করা এক গবেষণার রিপোর্টে বলা হয়, ভাল ঘুমের জন্য হালকা নীল রঙের ওষুধ দেওয়া হয়। অন্য দিকে কোনও রোগ থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য রোগীকে লাল রঙের ওষুধ দেওয়া হয়। ওষুধের স্বাদ এবং গন্ধের ভিত্তিতেও রঙ নির্ধারণ করা হয়।
আরও পড়ুন- মাছ-মাংস না খেয়েও এত শক্তি! হাতি সারাদিনে কী খায়, জানলে অবাক হয়ে যাবেন
তাপমাত্রার ভিত্তিতে রঙও নির্ধারণ:
কয়েকটি গবেষণা বলছে, তাপমাত্রার ভিত্তিতেও ওষুধের রঙ নির্ধারণ করা হয়। নীল রঙের ওষুধ নিম্ন তাপমাত্রার প্রতীক এবং কমলা রঙের ওষুধ উচ্চ তাপমাত্রার প্রতীক।
ক্যাপসুলের দু’টি রঙ:
আজকাল ক্যাপসুল তৈরিতে জিলেটিন এবং সেলুলোজ কভার ব্যবহৃত হয়। এই কভারে ওষুধ ভর্তি করা হয়। সাধারণত ক্যাপসুল দুটি রঙের হয়, কারণ এর একটি অংশ ক্যাপ এবং অন্য অংশটি ওষুধের ধারক হিসেবে কাজ করে।
ওষুধে ব্যবহৃত রাসায়নিক ও রঙ:
ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিকের ভিত্তিতেও এর রঙ নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যেসব ওষুধে কার্বন ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর রঙ কালো হয়। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে নকল ওষুধ তৈরি ও বিক্রি প্রতিরোধ করতে রঙের প্যাটার্ন ব্যবহার করা হয়। প্রায় সমস্ত ফার্মা কোম্পানিই এই প্যাটার্ন অনুসরণ করে।
ট্যাবলেট রঙিন করার উপায়:
কোনও ট্যাবলেট তিনটি উপায়ে রঙিন করা হয়। ট্যাবলেটকে রঙিন করার জন্য ট্যাবলেটের বেসে অদ্রবণীয় রঞ্জক যুক্ত করা হয়। এর সঙ্গে চিনির প্রলেপ দিয়েও ট্যাবলেটকে রঙিন করা হয়। তবে এই প্রক্রিয়াটিতে বেশ সময় লাগে। এছাড়া ওষুধগুলিকে রঙিন করার জন্য ফিল্ম কোটিংও করা হয়।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।